দেশ বিদেশ

বিতর্কিত ইহুদি জাতি-রাষ্ট্র আইন

তেলআবিবে মুসলিম ও ইহুদিদের সমন্বিত বিক্ষোভ

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

সম্প্রতি ইসরাইলের পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিতর্কিত ‘ইহুদি জাতি-রাষ্ট্র’ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। শনিবার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক ইসরায়েলি নাগরিক তেলআবিবের রাস্তায় বিতর্কিত ওই আইনের প্রত্যাহার দাবি করেন। অনেক ইহুদিও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
খবরে বলা হয়, গত মাসে ইসরাইলের পার্লামেন্ট বিতর্কিত ইহুদি জাতি-রাষ্ট্র আইন পাস করে। এই আইনে ইসরাইলকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনের মাধ্যমে ইহুদি ছাড়া বাকি নাগরিকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। দেশটিতে প্রায় ১৮ লাখ ফিলিস্তিনিসহ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। ইহুদি জাতি-রাষ্ট্র আইন অনুযায়ী, তাদের সবাই ইসরাইলের বৈধ নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর অধিবাসী।
বিতর্কিত এ আইনের বাতিল চেয়ে শনিবার রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ইহুদি ও ফিলিস্তিনিরা একসঙ্গে আন্দোলন করছে। এটা অবাক করার মতো বিষয়। যারা গণতন্ত্র ও আইনের সমতায় বিশ্বাস করে, তাদের জন্য এটা আসলেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।’ এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারী আরেক ইহুদি। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, আইনের চোখে ইসরাইলের সব নাগরিক সমান হওয়া উচিত। বিপুলসংখ্যক ইহুদি মনে করে, সংখ্যালঘুদেরও সমান অধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। এটা ইহুদি রাষ্ট্র। কিন্তু শিক্ষা, সেনাবাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়, পার্লামেন্টসহ সব জায়গায় ইসরাইলের সব নাগরিকের সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
গতমাসে পাস হওয়া ওই আইনে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ওই আইনের মাধ্যমে হিব্রু ইসরাইলের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে ইসরাইলে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনির ভাষা আরবী দ্বিতীয় ভাষায় পরিণত হয়েছে। জাতি-রাষ্ট্র আইন পাস হওয়ার আগে হিব্রু ও আরবি উভয়ই ইসরাইলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূ-খণ্ডে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিষয়টিকে নতুন আইনে ইসরাইলের জাতীয় স্বার্থ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে জোরপূর্বক বসতি স্থাপনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসরাইলের পার্লামেন্ট সদস্য ওমর সুলতান বলেন, এই আইন আমাদের বিরুদ্ধে, আরবি ভাষা ও শান্তির বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে ইসরাইলে আমাদের ভবিষ্যৎ সংকটের মুখে পড়েছে। অথচ আমরাই এই ভূ-খণ্ডের প্রকৃত অধিবাসী।
বিতর্কিত জাতি-রাষ্ট্র আইনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ সংগঠিত হলেও এর পেছনে আরো কিছু বিষয় আছে। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, দেশে অ-গণতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সমকামিত, নারী অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা বা ফিলিস্তিনিদের প্রতি আচরণ, সব বিষয়েই সরকার একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ইসরাইল ফ্যাসিস্ট দেশে রূপ নিচ্ছে। এর আগে, গত সপ্তাহেও জাতি-রাষ্ট্র আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ইসরাইলের সংখ্যালঘু দ্রুজ গোষ্ঠী। তারা ইসরাইলের সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বরাবরই ইহুদি জাতি-রাষ্ট্র আইনের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলে সবার নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীরও নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে। জাতি-রাষ্ট্র আইনে তাদের সে অধিকারের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status