বাংলারজমিন
অপচিকিৎসার শিকার গৃহবধূসহ তিন কিশোরী
নীলফামারী ও জলঢাকা প্রতিনিধি
১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন
জলঢাকা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে হাতুড়ে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় এক গৃহবধূসহ ৩ কিশোরী অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। জানা গেছে, জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের খেরকাটি বাঁশদহ ময়দানের পাড় এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের তিন কিশোরী ও এক গৃহবধূ চুলকানিজনিত রোগে আক্রান্ত হলে খেরকাটি বাজারের প্যারামেডিকেল ডাক্তার গোপাল চন্দ্র রায় জয়ন্ত তাদের চিকিৎসা প্রদান করেন। তাদের মুখে খাওয়ার ওষুধের সঙ্গে তিনি ইঞ্জেকশনও পুশ করেন। এদিকে এক মাসের মাথায় ওই তিন কিশোরী ও গৃহবধূর হাতে ইঞ্জেকশন দেয়ার জায়গা অবশ হতে শুরু করে এবং ইঞ্জেকশন দেয়ার জায়গার মাংসপেশি দেবে যেতে শুরু করেছে। মোবাইল ফোনে পাওয়া এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়ে ওই তিন কিশোরী ও গৃহবধূর হাতের পিশি দেবে যাওয়া প্রত্যক্ষ করা গেছে। হাতের দেবে যাওয়া অংশে কোনো অনুভূতি নেই। চিমটি কাটলেও তারা বুঝতে পারছে না। অজানা এ রোগে আক্রান্তরা হচ্ছেন- ওই গ্রামের নুরামিনের বিবাহিত কন্যা ফাতেমা বেগম (২২), রশিদুল ইসলামের কন্যা সবুজা আক্তার (১৬) ও জেমি আক্তার (১৪) এবং ইব্রাহিমের কন্যা জান্নাতুন খাতুন (১৬)। রশিদুল ইসলাম জানান, আমার মেয়েদের প্রথমে এলার্জি (চুলকানি) হয়েছিল। তাই আমি খেরকাটি বাজারের ওই প্যারামেডিকেল ডাক্তার গোপাল চন্দ্র রায় জয়ন্ত এর কাছে নিয়ে যাই। তিনি খাওয়া ঔষুধসহ ৭টি ইঞ্জেকশন দেয়ার পরামর্শ দেন এবং আমার ২ মেয়েকে তার চেম্বারে দুটি ইঞ্জেকশন দেন। মাস খানিক পর ইঞ্জেকশন দেয়া জায়গাটি অবস হতে শুরু করে মাংসপেশি দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে যায়। আমার মেয়েদের মতো একই অবস্থা আরো দুইজনের। তিনি বলেন, আমরা ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। এদিকে ওই ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইঞ্জেকশন দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন, আমি এলার্জির চিকিৎসা দিয়েছি মাত্র। ওনারা হয়ত এখন নতুন কোনো অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার দেবাশীষ জানান, (মাসকুলার অ্যাট্টফি) এটি হলো মাংস স্নায়ু একত্রে কাজ করে যে স্থানটি রোগ প্রবেশ করেছে সেখানকার মাংস সরে যায়। তার পরেও তিনি নিশ্চিত নন রোগটি নিয়ে। তিনি আক্রান্তরোগীদের দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসদের পরামর্শ নিতে বলেন। ওদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় চিকিৎসক সমিতির সেক্রেটারি এলাহী ভুক্তভোগী রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে চান বলে জানান, জেমি আক্তার সবুজা আক্তারের পিতা রশিদুল ইসলাম। স্থানীয় গ্রামবাসী ওই চিকিৎসকের চিকিৎসা প্রদান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।