বাংলারজমিন

আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধাবঞ্চিত পঞ্চগড়ের ১০ লাখ বাসিন্দা

সাবিবুর রহমান সাবিব, পঞ্চগড় থেকে

১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা চালু হলেও এখনো পঞ্চগড় জেলাবাসীর কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এতে জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে পূর্ণাঙ্গ আন্তঃনগর ট্রেন চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছরের ১৭ই জুন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক স্থানীয় স্টেশনে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস আন্তঃনগরের কানেকটিং শাটল ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনজন এমপিসহ অন্যান্য বক্তা পঞ্চগড় থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানান। এ ব্যাপারে মন্ত্রী আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত দাবির বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কোনো বছর এ রুটে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা কেউ বলতে পারছে না। লোকজন শাটল ট্রেনে করে দিনাজপুর গিয়ে একতা ট্রেনে উঠছে। যা অনেকের পক্ষে কষ্টকর ও বিরক্তিকর। দ্রুতযান আন্তঃনগর ট্রেন ধরার জন্য এখান থেকে কোনো ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়নি। একতা ট্রেনে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হয়েছে। দৈনিক পঞ্চগড়ের জন্য সিট দেয়া হয়েছে মাত্র ৩৫টি। অথচ প্রতিদিন শতাধিক বা তার অধিক সিটের প্রয়োজন। আবার বরাদ্দকৃত সিটগুলোও ঢাকার বিপরীতমুখী। এ ৩৫টি সিট আবার ঈদের আগে ও পরে সুবিধাভোগী স্থানীয় সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। তারা ৫৫০ টাকা মূল্যের টিকিট ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তারা রেল লাইন ও স্টেশন নির্মাণের সময় নানাভাবে লাখ লাখ টাকার সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। সড়ক পথে সময় বেশি লাগাসহ বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার কারণে লোকজন ট্রেনে ভ্রমণ করতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু ট্রেনে যাতায়াতের জন্য সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে না। অভিযোগ মতে, বেশিরভাগ দিন স্টেশনে টিকিট পেতে সমস্যা হয়। মাত্র ৩৫টি সিটের মধ্যে এমপি, প্রভাবশালী নেতা, ডিসি ও এসপি কার্যালয়ের জন্য নির্ধারিত কোটার কারণে সাধারণ যাত্রীরা অনেক সময় ২০টি সিটও পায়না। অবশ্য বেশি টাকা দিলে টিকেট মেলে। রেলস্টেশন ঘিরে গড়ে উঠা চক্রটি আগে থেকে টিকিট কেটে রেখে পরে তা দ্বিগুন দামে বিক্রয় করে। এলাকার আব্দুস সাত্তার নামের এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, মরার আগে হইতো সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়াত করতে পারব না। টিকিটের বরাদ্দ কম ও বিভিন্ন কোটার কারণে অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দিবা ও নৈশকোচে কষ্ট করে ঢাকা যাতায়াত করছে। আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করার জন্য সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকলেও সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হচ্ছে না।
পঞ্চগড় রেলস্টেশন মাস্টার বজলুর রহমান বলেন, পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে কতদিনের মধ্যে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে তা আমার জানা নেই। সরকার নির্ধারিত কোন কোটার চিঠি আমার কাছে নেই। তবে এমপি, ডিসি-এসপি স্যারেরা আগে বলে রাখলে তাদের লোকজনদের জন্য সিট রাখা হয়। সিট সংকটের কারণে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। টিকিট না পেয়ে অনেকে অনেক কথা বলতেই পারে। পঞ্চগড়-ঢাকা সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে আর কোনো অভিযোগই থাকবে না। পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ আন্তঃনগর ট্রেন চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, এ দাবিটি পঞ্চগড়ের সর্বস্তরের মানুষের। শাটল ট্রেনে করে দিনাজপুর গিয়ে পরিবার পরিজন, মহিলা ও বৃদ্ধ লোকজন ব্যাগ ও মালামাল নিয়ে একতা ট্রেনে উঠতে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শাটল ট্রেনের বগিগুলোও ভালো না। প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দকৃত টিকিটেও খুবই কম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status