শেষের পাতা

দুই ইস্যুতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছে বিএনপি

কাফি কামাল

১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে দুই ইস্যুতে দীর্ঘ বৈঠক করেছে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম। ইস্যুগুলো হচ্ছে- বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি ও সম্ভাব্য আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন। সম্প্রতি দুই দিনব্যাপী মতবিনিময় সভায় তৃণমূল নেতাদের দেয়া মতামত ও পরামর্শগুলো পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ দুই ইস্যুতে বৈঠকটি করেছে দলের স্থায়ী কমিটি। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক চলে। বিকাল ৫টায় মুলতবি হওয়া বৈঠকটি ফের অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল সোমবার। বৈঠকের বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় আরও রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকটি শেষ হয়নি, মুলতবি করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা নেয়া হয়। বৈঠকে নেতারা এসব প্রস্তাবনার ওপরে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। দলকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে ঈদের পর থেকে ধীর প্রক্রিয়ায় রাজপথের কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন তারা। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে অবশ্যই জোটের শরিক দলগুলোর মতামত নেবে বিএনপি। এছাড়া সরকারের তরফে সংলাপের উদ্যোগ নিলে বিএনপি ইতিবাচকভাবে সাড়া দেবে তবে সেখানে নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অটল থাকবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সংবিধান পরিবর্তনের ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের অধীনে চলমান সংসদ বহাল রেখে। আর এই জায়গাতেই আপত্তি বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে বর্তমানে সংসদীয় রাজনীতির বাইরে রয়েছে বিএনপি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তিনবার সরকার গঠন করা এই দলটি। কিন্তু নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও। খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এখন দলটির সামনে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওদিকে ২০১৫ সালের ফলাফলবিহীন টানা আন্দোলন বিএনপির ইমেজকে করেছে ক্ষতিগ্রস্ত। তা উদ্ধারে পরের তিনটি বছর প্রতিটি পা ফেলেছে হিসাব করে। ধীরে চলো নীতিতে চলা বিএনপি এ সময় এড়িয়ে গেছে আন্দোলনের নানা উস্কানি। কিন্তু আগামী নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। নির্বাচনের প্রাকমূহুর্তে এসে কি করবে তারা?

এমন পরিস্থিতিতে সমপ্রতি দলের ১০ বিভাগের সকল জেলা ও মহানগর শাখার শীর্ষ ৫জন করে নেতার সঙ্গে দুদিন ব্যাপী মতবিনিময় করেছে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম। সেখানে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক শক্তি মজবুতের পাশাপাশি উঠে এসেছে দুটি মতামত ও পরামর্শ। তৃণমূল নেতারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে তারা মোটেই আগ্রহী নয়। তেমনটা হলে তৃণমূলে বড় ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডু অর ডাই আন্দোলনে যাবার। আর এজন্য তারা নির্বাচন ইস্যুতে মহাজোট সরকারের বাইরে থাকা সব দলের মধ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন। তৃণমূল নেতারা বলেছেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে সমাগত দলগুলোকে ছাড় দিতে হলেও তাদের আপত্তি নেই।

এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক আন্দোলনে পূর্ণসমর্থন দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সে সমর্থন ছিল নৈতিক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসেনি বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু সরকারের তরফে সে সমর্থনকে সম্পূর্ণ নেতিবাচক হিসেবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফের শুরু হয়েছে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের মহোৎসব।

এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া জোরদার ও আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে দীর্ঘ এ বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকের নেতারা যেসব বিষয়ে একমত হবেন সেগুলোর কর্মসূচি ও উদ্যোগ হিসেবে নেয়ার আগে তা দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করে চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী দুই মাস জাতীয় ঐক্য ও খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কাজ করবে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বৃহত্তর প্লাটফর্ম থেকে চলবে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলন।
সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবি নিয়ে নেতারা নিজেদের মত প্রকাশ করেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারেও সর্বশেষ পরিস্থিতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করে তার নির্দেশনায় ওইসব দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। ঐক্য প্রক্রিয়ার পরে আন্দোলনের কৌশল নিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির একজন নেতা জানান। তিনি জানান, বাইরে যতই গুজব কিংবা গুঞ্জন থাকুক না কেন- খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এটা বৈঠকে আবারো চূড়ান্ত করেছেন নেতারা। এছাড়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়াসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হলে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়েও নিজেদের কথা বলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম। এ ধরনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার দাবির বিষয়ে অনড় থাকবে তারা। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status