এক্সক্লুসিভ

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কি শুধু চালকরাই দায়ী?

মানবজমিন ডেস্ক

১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধাক্কা কিছুটা প্রশমন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সড়ক আইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার মন্ত্রিসভা এ আইন অনুমোদন দিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী বেপরোয়া বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ আহত বা নিহত হলে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় মামলা দায়ের করা হবে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন চালক। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বাসচালকরা দাবি করছেন, দুর্ঘটনার জন্য শুধু তারাই দায়ী নন। বাসচালক খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, তিনি ১৭ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ দিন বাস চালান। তার মতো কম বেতনে অধিক কাজ করা চালকদেরকেই বাংলাদেশের অত্যধিক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। অতিরিক্ত কাজের চাপে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। প্রতি ঘণ্টায় শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় এদেশে গড়ে ৫ জন হতাহত হচ্ছেন। কিন্তু চালকদের ওপরে ক্ষোভ বাঁধ ভেঙে যায় ২৯শে জুলাই। সেদিন রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। পরের দিন থেকে রাজধানীর সড়কে অবস্থান করে বেপরোয়া বাস চালকের ফাঁসি, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালনা বন্ধসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য কি শুধু বাস চালকরাই দায়ী? বেশিরভাগ বাসচালকেরই যথেষ্ট আয় নেই। তারা মাসিক কোনো বেতনও পান না। কমিশনের ভিত্তিতে তারা প্রতি ট্রিপ শেষে টাকা পান। এর পাশাপাশি তাদের থাকে দ্রুত ট্রিপ শেষ করার তাড়া। যতগুলো ট্রিপ দিতে পারবেন তত বেশি আয়- এ চিন্তা মাথায় থেকেই যায় তাদের। ৪৫ বছর বয়স্ক খুরশিদ আলম বলেন, আমি সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বাস চালাই। তার বাসের উইন্ডশিল্ডটিও ভাঙা। তিনি তার বাসের মালিককে এটা পরিবর্তন করে দিতে বললেও এখনো এটি এরকমই রয়েছে। বাংলাদেশের একজন বাসচালক প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০০ টাকা আয় করেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লির একজন চালকের আয় এর থেকে ৩ গুণেরও অধিক। তাছাড়া চালকরা মাসিক কোনো বেতন পান না। তাই তাদেরকে সবসময় আয় নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। বাসচালকদের দাবি, যদি আমরা মাসিক কোনো বেতন পেতাম তাহলে আমরা এ ধরনের চিন্তা ছাড়াই বাস চালাতে পারতাম। সরকারের উচিত শুধু আমাদের দোষ না দিয়ে আরো ট্রাফিক লাইট বসানো ও পথচারীদের জন্য প্রশস্ত ফুটপাথ নিশ্চিত করা। চালকরা বলেন, সবাইকে দেখার জন্য কেউ না কেউ আছেন, কিন্তু আমাদের দেখার জন্য কেউ নেই।
বাংলাদেশ পরিবহন মালিকদের সংগঠনের সভাপতি এনায়েত উল্লাহ সড়কের অনিয়ম নিয়ে জানিয়েছেন, তারা রাস্তায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দক্ষ চালকের ঘাটতি থাকার কারণে প্রায়ই আমাদের অদক্ষ চালকদের দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু এখন থেকে আমরা বাস মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি যাতে কেউ আর যথাযথ লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ না করেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন থেকে সরকারের কাছে কঠোরভাবে সড়কে নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল, বাসচালকদের সর্বোচ্চ কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস মালিকদের অনেকেই বলেছেন এটি খুব সহজ হবে না। তুষার পরিবহনের মালিক আবুল কাশেম বলেন, ৮ ঘণ্টায় মাত্র দুটি ট্রিপ দেয়া সম্ভব। ট্রিপের সংখ্যা কমে গেলে আমাদেরকে যাত্রীদের ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু এদেশের বেশির ভাগ যাত্রীই সেটা মানবে না। তাহলে কি সরকার আমাদেরকে ভর্তুকি দেবে? উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম সাত মাসেই প্রায় আড়াই হাজার মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ২৯শে জুলাই জাবালে নূর বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকার রাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। আন্দোলন চলাকালীন ঢাকার বিভিন্নস্থান বিশেষ করে ঝিগাতলা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি, গ্রিনরোডে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা ও কিরিচ হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ও মারধর করে। পুলিশকে এ সময় নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়। এ হামলায় এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একজন ফটো সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৫ জন ফটোসাংবাদিকের ওপর হামলা, মারধর ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া আন্দোলনরত অনেক শিক্ষার্থীও আহত হয় সে সময়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status