বাংলারজমিন

প্রসূতিকে ব্লেড দিয়ে সিজার নবজাতকের মৃত্যু

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ব্লেড দিয়ে সিজার করায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। আর প্রসূতি মা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এ ঘটনা ঘটেছে সোমবার সকালে বালিজুরি ইউনিয়নের বড়খলা গ্রামে। প্রসূতি মায়ের নাম শৌমরী বর্মন (২২)। তিনি বড়খলা গ্রামের খলা হাটির সুজিত বর্মনের স্ত্রী।
পল্লীচিকিৎসকরা হলেন, বড়খলা গ্রামের লালমোহন বর্মন ও বালিজুরি গ্রামের নুরুল আমিন। তারা দু’জনেই বালিজুরি বাজারের পল্লীচিকিৎসক। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ভোর রাতে বড়খলা গ্রামের সুজিত বর্মনের স্ত্রী শৌমরী বর্মনের প্রসব ব্যথা উঠলে সোমবার সকালে গ্রামের পল্লীচিকিৎসক লালমোহন বর্মনকে ডাকা হয়। লালমোহন বর্মন প্রথমে প্রসূতিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও কিছুক্ষণ পর জানান, তিনি নিজেই শৌমরী বর্মনের গর্ভের সন্তান প্রসব করাবেন। এই বলে তিনি পরিচিত আরেক পল্লীচিকিৎসক নুরুল আমিনকে ফোন করে আনেন। তারপর দু’জনেই প্রসূতিকে পরীক্ষা করে বলেন, শৌমরী বর্মনের পেটের সন্তান মৃত। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে লাভ নেই, তারাই সন্তান বের করবেন। কিন্তু এ সময় গ্রামের ধাত্রী রাজু বেগম ও প্রসূতি নিজেই জানান, সন্তান মৃত নয় জীবিত। প্রসূতি নিজেও জানায়, তার গর্ভের সন্তান নড়াচড়া করছে বলে তিনি অনুভব করতে পারছেন। তবুও দুই পল্লীচিকিৎসক জোর গলায় দাবি করেন গর্ভের সন্তান মৃত, তাই মৃত সন্তান দ্রুত বের করতে হবে। এই বলে দুই পল্লীচিকিৎসক প্রসূতিকে কোনো প্রকার অচেতন না করেই জরায়ুর মুখ কেটে সন্তান বের করেন। সন্তান বের করার সময় সন্তানের মাথার বেশ কিছু অংশ কেটে যায়। তড়িঘড়ি করে দুই পল্লীচিকিৎসক নবজাতকের মাথায় পাঁচটি সেলাই করেন এবং দাবি করেন সন্তান মৃত। কিন্তু পরিবারের লোকজন দেখতে পায় জন্ম নেয়া ছেলে নবজাতকটি জীবিত ও নড়াচড়া করছে। তাৎক্ষণিক নবজাতক ছেলেটিকে পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এদিকে, সন্তান জন্ম দেয়া শৌমরী বর্মনের অধিক রক্তক্ষরণ দেখা দিলে তার জরায়ুর মুখে ১৭টি সেলাই করে দুই পল্লীচিকিৎসক। পরে রোগীর অবস্থা বেগতিক হলে দ্রুত তাকে বিশম্ভপুর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন।
পল্লীচিকিৎসক লালমোহন বর্মন বলেন, আমি প্রথম রোগী দেখার পর বলেছি তোমরা সুনামগঞ্জে চলে যাও। পরিবারের লোকজনই বলেছে, নুরুল আমিনকে অনুরোধ করে আনার জন্য। নুরুল আমিন এসে বলেছে, বাচ্চার নড়াচড়া কম, মহিলার একলামসিয়া হয়েছে। পরে নুরুল আমিন মার জরায়ু কেটে বাচ্চার মাথা বের করেছেন। বাচ্চার মাথায় সেলাইও দিয়েছেন তিনি। আমি কিছুই করিনি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিবার ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, গ্রামের পল্লীচিকিৎসক দাবি করেছেন সন্তান মৃত। কিন্তু গ্রামের ধাত্রী ও সন্তানের মা জানিয়েছিলেন সন্তান জীবিত। দুই পল্লীচিকিৎসক সন্তান মৃত দাবি করে ছুরি-কাঁচি দিয়ে কেটে সন্তান বের করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, এই দুই পল্লীচিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বা প্রশিক্ষণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। তারা দুঃসাহস দেখিয়েছে। এই ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status