অনলাইন

ধর্ষণের পর হত্যা

বছরান্তেও পরিচয়হীনা

মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা থেকে

১১ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

বরগুনার পাথরঘাটায় চাঞ্চল্যকর তরুণী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার এক বছর পরও বিচার শুরু হয়নি। নিহত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করাই এখন প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে। এদের মধ্যে দুইজনকে অপর দুইটি হত্যা মামলায় আবার গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত বছরের ১০ই আগস্ট পুকুর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হলে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা হয় যার তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা শাখা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, পাথরঘাটা কলেজ এলাকায় পশ্চিম প্রান্তের একটি পুকুর থেকে অর্ধগলিত এক তরুণীর লাশ গত বছর ১০ই আগস্ট উদ্ধার করে পাথরঘাটা থানা পুলিশ এবং একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা রেকর্ড করে। পুলিশের ধারণা ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ  উদ্ধারের প্রায় তিন মাস পর ৯ই নভেম্বর পাথরঘাটা কলেজের নৈশপ্রহরী মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। উচ্চ আদালত থেকে সে জামিনে বেরিয়ে আসেন। তার জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে ছাত্রলীগের নেতা ও পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহমুদ ও পাথরঘাটা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহিদুল ইসলাম রায়হানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে কারা তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করে তা বেরিয়ে আসে। এরপর ঘটনার সূত্র ধরে পাথরঘাটা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রুহি অনান ডেনিয়েল ও  সাাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ নেতাকে জেলা কমিটির সুপারিশে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি দল থেকে বহিষ্কার করে।
 
এরপর মামলা পাথরঘাটা থানা পুলিশের হাত থেকে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়। এখনও মামলার তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো. বশির আলম বলেন, মামলা তদন্তাধীন। অভিযুক্তদের জবানবন্দিতে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। মামলায় যে উপাদান রয়েছে তাতে হত্যাকা- প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা নিহত তরুণীর পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। সারা দেশের থানা সমূহে এ সংক্রান্ত বার্তা পাঠানো হয়েছে।
 
ঘটনার সময় একটি মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছিল কিন্তু জব্দ হয়নি কেন এবং তার কোনও হদিস আছে কিনা? এমন  প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা শিগগির মামলার চার্জশিট দিতে পারব। ঘটনার প্রায় ৮০ ভাগ গুটিয়ে আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, পাথরঘাটা থানা পুলিশ পৃথক দুইটি হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা রুহি আনান ডেনিয়েল ও সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে গ্রেপ্তার দেখায়। এর একটি ২০১৫ সালে পাথরঘাটা কেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে ডোবায় পাওয়া অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ এবং পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের ঘাটলার নীচে ২০১৭ সালে অজ্ঞাতপরিচয় অপর একটি লাশ পাওয়া গিয়েছিল। যথাক্রমে এ বছর ২১ ও ২৮শে মে আদালতে পাথরঘাটা পুলিশ আবেদন করলে আদালত তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখান।

এ ব্যপারে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রলীগ কলেজ শাখার বহিষ্কৃত সভাপতি রুহি আনান ডেনিয়েলের বড় ভাই পাথরঘাটা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোফাচ্ছের হোসেন বাবুল বলেন, তরুণী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আমার ভাইয়ের কোনও অপরাধ নেই। নিহত তরুণীর আজ পর্যন্ত কোনও সন্ধান বের করতে পারেনি পুলিশ। আমার ভাই জামিনে যাতে বের হতে না পারে সে জন্য পুলিশ অন্য দুইটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
 
পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাবির হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের অপরাধের বিচার দ্রুত শুরু করা দরকার নতুবা জনমনে ন্যায় বিচার নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে।

বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, মামলার অনেক কিছুই আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নিহত তরুণীর পরিচয় উদ্ধার করা গেলেই আদালতে চার্জশিট প্রদান করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status