বিশ্বজমিন

তেল রপ্তানি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ইরানের

মানবজমিন ডেস্ক

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল রপ্তানি অব্যাহাত রাখবে ইরান। বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ অঙ্গিকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইরানের তেল রপ্তানির ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ ও হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তার দেশ। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরিনকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি তার এ প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, যদি তারা তাদের এ অসম্ভব চিন্তাটি মাথা থেকে না সরায় তাহলে তাদের এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। তারা জানে, যদি ইরান তেল রপ্তানি করতে না পারে তাহলে অন্যরাও পারবে না। এসময় রুহানি স্পষ্ট করে বলেননি যুক্তরাষ্ট্রকে কী ধরনের পরিণতি ভোগ করতে হবে। তবে এর আগে ইরানি কর্মকর্তারা অনেকবার হুমকি দিয়েছে যে তারা প্রয়োজনে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। এই প্রণালি দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র এ হুমকিকে ধাপ্পাবাজি বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
বুধবার প্রেসিডেন্ট রুহানি তেহরানে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং-হো’র সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। এ সময় তিনি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে সাবধান করে দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাসের অযোগ্য দাবি করে বলেন, তারা কখনো কথা রাখে না। রি ইয়ং-হো সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের ওপরে দেয়া নিষেধাজ্ঞা অসঙ্গত ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উত্তর কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে।
তবে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ। দেশগুলো জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কথা মেনে নেবে না এবং ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে। বুধবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানের ওপর দেয়া এ অবরোধের বিরোধীতে করছে চীন। ইরানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সবসময়ই মুক্ত ও বহুমুখী ছিল। এ সময় তিনি এ অবরোধকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ইরানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যের রাস্তা খোলা রয়েছে। এতে কোনো আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হবে না ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক নয়। তাদের চীনের বৈধ অধিকার রক্ষা করতে হবে।
ইরানি তেলের সব থেকে বড় ক্রেতা হচ্ছে চীন। দেশটি তেহরান থেকে বছরে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল অশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। এটি চীনের অশোধিত তেল আমদানির ৭ শতাংশ এবং ইরানের রপ্তানির ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে এর বাজারমূল্য প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি ইরানি তেলক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ করছে চীন।
এদিকে তুরস্কের জ্বালানিমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার দেশ ইরান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখবে। তুরস্ক ইরান থেকে প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে প্রতিবছর। ইউরোপীয় দেশগুলোও ইরানের সঙ্গে থাকা পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি অনুযায়ী ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে। বিনিময়ে বিশ্বের সঙ্গে ইরানকে বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অভিযোগ করে আসছিল যে ইরান চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করছে না। এরপর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর গবেষকরা নিশ্চিত করেন যে ইরান চুক্তির শর্ত অনুযায়ীই চলছে।
তারপরেও, এ বছরের মে মাসে এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞা কয়েক ধাপে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে হুমকি দিয়েছে যে, কোনো দেশ যদি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করে তাহলে সে দেশের সঙ্গেও সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে তারা। ইরানের অর্থনীতিতে ধস নামাতে সব ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে দেশটি। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অযৌক্তিক অবরোধ মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করবে এবং এ অঞ্চলে কট্টোরপন্থি কার্যক্রম বৃদ্ধি করবে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চুক্তিকে সম্মান জানানো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্রমাগত ইরানের নেতাদের সমালোচনা করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আবার তিনি ইরানকে শর্তহীন আলোচনায় বসার আহ্বানও জানিয়েছেন। কিন্তু বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এরকম আচরণের পরেও আলোচনায় বসা অসম্ভব। তারা বারবার আস্থাভঙ্গ করেছে। তাদেরকে কেউ আর বিশ্বাস করে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status