রকমারি

কারাগারে ১০৭ দিন

পিয়াস সরকার

৩ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

ফয়সাল আহমেদ, বয়স ২৫। এই শিক্ষার্থী একজন রাজনৈতিক দলের কর্মী। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে বংশাল থানায়। সেখান থেকেই শুরু তার ভয়াবহ দিন। বংশাল থানা থেকে স্থানান্তর করা হয় চকবাজার থানায়। চকবাজারে রিমান্ডসহ কাটাতে হয় তিন দিন। হাজতের প্রকোষ্ঠে কাটানো প্রথম রাতে ক্ষুধা এবং মশার কামড় সেই সঙ্গে উৎকণ্ঠায় কেটে যায় সারারাত। তিনি বলেন, ‘আমার কাটানো দীর্ঘতম রাত। ধারণাও ছিল না কি হতে যাচ্ছে?’ তারা সেরাতে ১৩ জন কাটান হাজতে। এরপর নেয়া হয় কোর্টে। তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফয়সাল বলেন, ‘রিমান্ড না বলে একে বলা যেতে পারে ডিমান্ড।’ তার পরিবারের সঙ্গে কয়েক হাজার টাকায় রিমান্ডের ডিমান্ড পূরণ হয়। এরপর শুরু কারাগারের জীবন।
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারে পা রাখার পর দেখেন স্থানের তুলনায় রাখা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি। প্রথম কয়েকদিন তাকে কাটাতে হয় ফ্লোরে, গণরুমে। যাকে সেখানের ভাষায় বলা হয় ‘আমদানি’। রাতে শোয়ার স্থান ছিল অত্যন্ত সংকীর্ণ। প্রচণ্ড গরম সেই সঙ্গে একজনের পা আরেকজনের মাথায় লেগে যেত। কারাগারে রয়েছে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন প্যাকেজ। সেসব প্যাকেজে মেলে শোয়ার স্থান, ভালো খাবারসহ নানান সুবিধা।

কারাগারে টাকার লেনদেন নিষিদ্ধ। আবার টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না সেখানে। টাকার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় সিগারেটের প্যাকেট (হলিউড সিগারেট)। সিগারেটের প্যাকেট কিনতে হয় ৭৫ টাকা দিয়ে কিন্তু দেয়ার সময় তার মূল্য ধরা হয় ৫০ টাকা। তিনি বলেন, ‘কেউ সাক্ষাৎ করতে আসলে প্যাকেট, গোসল করতে চাইলে প্যাকেট, বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলে প্যাকেট।’

পরিবার থেকে টাকার প্রয়োজন হলে দায়িত্বরত ব্যক্তির মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে আসে টাকা। ১ হাজার টাকা পাঠালে অ্যাকাউন্টে (পিসি) জমা হয় ৯শ’ টাকা কখনো বা ৮শ’ টাকা।

খাবারের কথা উঠতেই বলেন, ‘যে খাবার কারাগারে সেরা, ওই খাবার বাইরে বিনামূল্যে দিলেও কেউ খাবে না।’ সকালের খাবারে মেলে ১ টুকরা রুটি এবং সামান্য একটু গুড়। দুপুরে ভাতের সঙ্গে থাকে কিঞ্চিত সবজি। রাতে পাঁচ দিন থাকে আঙ্গুলের সমান ছোট এক টুকরা মাছ। আর বাকি দুই দিন সবজি। এসব খাবারে না থাকে ঝাল-না লবণ কিংবা কোনো স্বাদ। অত্যন্ত ময়লা এবং দুর্গন্ধময় স্থানে রান্না করা হয় যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। খাবার গ্রহণের সময় প্রায়শই মেলে চুল, ময়লা। ভাতে ছোট পাথর থাকা যেন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, টাকা গুনলে সেখানেও ব্যবস্থা আছে ভালো খাবারের। ক্যান্টিনে সব ধরনের খাবারের মূল্য ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি। কারাগারে মেলে সব ধরনের মাদক। ইয়াবা থেকে শুরু করে প্রায় সব।

কারাগারে টাকার ব্যবহার আইনানুগভাবে নিষিদ্ধ কিন্তু কারা ক্যান্টিনে নগদ অর্থ ছাড়া দেয়া হয় না কোনো পণ্য। নিয়ম অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট (পিসি) থেকে নেয়ার কথা ছিল টাকা। এসব অনিয়ম কর্তৃপক্ষের সামনে হলেও তারা নির্বাক।
গণরুম থেকে ওয়ার্ডে, ফয়সালের গুনতে হয়েছে ৫শ’ টাকা। ওয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ২৫ জনের। কিন্তু সেখানে রাখা হতো ৪০-৪৫ জন। কারাগারে ফজরের পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বন্দিরা বাইরে থাকতে পারেন। এই সময়টাতে ক্যান্টিনে খাওয়া, ব্যায়াম করা, খেলাধুলা ইত্যাদির সুযোগ মিলতো তাদের। এখানেও রয়েছে সমস্যা, সিনিয়র কারাবন্দির কথা মান্য করে চলতে হয়। ব্যতিক্রম হলেই মাঠে চক্কর দেয়া, খাবার খেতে না দেয়া, দাঁড় করিয়ে রাখা ইত্যাদির মতো শাস্তি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status