শেষের পাতা

ঘোষণা ছাড়াই দূরপাল্লার বাস বন্ধ, ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার

৩ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

হঠাৎ করে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। রাস্তা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলবে না বলে জানিয়েছেন বাস মালিকরা। ছাত্ররা তো গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে বলেনি, রাস্তায় গাড়ি নেই, মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের নিরাপত্তার জন্য গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৩শ’ গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ৫টিতে আগুন দিয়েছে। এরমধ্যে তার নিজের গাড়িও আছে বলে তিনি  উল্লেখ করেন। মহাসচিব বলেন, ভয়ের কারণে গাড়ি চালাচ্ছেন না তারা।

সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, আতঙ্ক ও অস্থিরতার মধ্যে আছি। গুজব ছড়াচ্ছে যে, চালকদের ধরছে। মালিকরা গাড়ি বন্ধ রাখেনি। তবে চালকরা ভয়ে গাড়ি চালাতে চাচ্ছেন না। যাদের লাইসেন্স নেই তারা তো আসছেন না। আর যাদের বৈধ লাইসেন্স আছে তারাও ভয় পাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা ব্রেক দিয়ে গাড়ি আটকাচ্ছেন এমন খবরে টার্মিনালে কোনো গাড়ি আসেনি বৃহস্পতিবার। অথচ এই টার্মিনালে দৈনিক গড়ে ১৫ থেকে ১৭শ’ গাড়ি চলাচল করে। তিনি আরো বলেন, আমরা রাস্তা স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি। স্বাভাবিক  হলেই গাড়ি পুরোদমে চলবে। এ প্রসঙ্গে মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক মানবজমিনকে বলেন, সড়কে আমরা গাড়ি চালাতে চাই। সড়কের যে পরিস্থিতি তাতে গাড়ি চালানো সম্ভব না। রাস্তা নিরাপদ ও স্বাভাবিক হলে আমরা গাড়ি রাস্তায় নামাবো। তিনি বলেন, আমরাও জনদুর্ভোগ চাই না। শৃঙ্খলা চাই। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়ছেন না কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তা স্বাভাবিক হলে গাড়ি চলবে। এই টার্মিনাল থেকে দৈনিক দেশের বিভিন্ন জেলায় ৭ থেকে ৮শ’ গাড়ি চলাচল করলেও বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে বলে তিনি উল্লেখ করেন। যে সব গাড়ি টার্মিনালে ঢুকেছে সেগুলোও ছেড়ে যায়নি।

এদিকে গতকাল রাস্তায় বাসের সংখ্যা ছিল খুবই সামান্য। ফলে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে রাজপথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীতে দেখা গেছে গণপরিবহনের তীব্র সংকট। ছিল না দূরপাল্লার গাড়িও। হাতেগোনা কিছু বাস দেখা গেছে রাস্তায়। সেগুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। বেশির ভাগ মানুষ হেঁটেই কর্মস্থলের দিকে গেছেন এবং বাসায় ফিরেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যানবাহন না পেয়ে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মোটরবাইক ব্যবহার করে অফিসে গেছে তারা। অল্পকিছু লোকাল বাস চলাচল করেছে। আর সেগুলোতেও রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। মিরপুর, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, তালতলায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শ’ শ’ অফিসগামী মানুষকে। দূর থেকে কোনো বাস আসতে দেখলেই তারা অপেক্ষা করেছেন।

কাছে আসতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেগুলো বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের স্টাফ বাস। ফলে বারবার আশাহত হয়েছেন এসব এলাকার অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। পরে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশায় কর্মস্থলে পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন তারা। আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, র‌্যাংগস ভবন, কাকরাইল, শাহবাগ, সাতরাস্তার মতো ব্যস্ত এলাকাগুলোও ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। ফুটপাথে ছিল হেঁটে রওনা হওয়া মানুষের ভিড়। তবে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই দেখা যায়নি তেমন বিরক্তি। অবশ্য অনেকে এসব বিষয়ে কথাই বলতে চাননি। মাহমুদ নামের এক যাত্রী জানান, গত চারদিন ধরেই কষ্ট হচ্ছে। তবু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কোনো বিরূপ মনোভাব নেই তার। গত ২৯শে জুলাই রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডে দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এরপর থেকে ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রতিদিন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তার অজুহাতে বৃহস্পতিবার ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকার মধ্যে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status