প্রথম পাতা
কুষ্টিয়ায় মাহমুদুর রহমানের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে ছাত্রলীগের হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। গতকাল বিকালে আদালত থেকে একটি মামলায় জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় পুলিশের সামনেই এ হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যখন রড, লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করে তখন কুষ্টিয়া সদর থানার ওসিসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ কোর্ট এলাকায় নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে যশোর হয়ে ঢাকায় আনা হয়।
রাতে মাহমুদুর রহমানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে কটূক্তি করার অভিযোগে দায়ের করা মানহানির মামলায় জামিন নিতে আদালতে যান মাহমুদুর রহমান। জামিন শুনানিকে ঘিরে সকাল থেকে ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আদালত এলাকায় অবস্থান নেয়।
ছাত্রলীগের মহড়ায় জামিন পাওয়ার পরও নিরাপত্তা শঙ্কায় মাহমুদুর রহমান আদালত এজলাসেই প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ নিরাপত্তা দিতে এলে মাহমুদুর রহমান এজলাস থেকে বের হলেই হামলার শিকার হন। এ সময় পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। হামলার বর্ণনা দিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের বললো আপনারা আমার এজলাসে আশ্রয় নেন।
সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আমরা এজলাসে বসা ছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, আমি র্যাব স্কোয়াডের ব্যবস্থা করছি। সাড়ে চারটার দিকে কোর্ট ওসি বললো এই গাড়িতে করেই আপনি চলে যান। তাদের একটা গাড়িতে করে আমাদের উঠিয়ে দেয়া হলো। গাড়িতে ওঠার দুই মিনিটের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন বড় বড় পাথর, লাঠি, দা নিয়ে হামলা করে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে আমার মাথায় তিন চারটা পাথর দিয়ে আঘাত করে তারপর লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়। আমি যতদূর পারি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। আমি গাড়ি থেকে নেমে এক আইনজীবীর চেম্বারে আশ্রয় নিই। এর প্রায় আধাঘণ্টা পর পুলিশ আসে।
প্রত্যক্ষর্দশীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাজির হওয়ার পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এমএম মোর্শেদের আদালত মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন। পৌনে ১২টার দিকে আদালত থেকে বের হতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে যান তিনি। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। তারা মাহমুদুর রহমানকে বহনকারী গাড়ি আদালত চত্বরে ঢুকতে বাধা দেয়।
মাহমুদুর রহমান তখন সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমার লড়াই বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। এরপর কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আশ্রয় নেন তিনি। প্রায় ২০ মিনিট পর সেখান থেকে বের হয়ে আবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিরাপত্তার আবেদন করেন। এ সময় মামলার বাদী জেলা ছাত্রলী?গের সভাপ?তি ইয়া?সির আরাফাত তুষা?র ও সম্পাদক সাদ আহমেদ’র নেতাকর্মীরা এজলাসের বারান্দায় অবস্থান নেয়। নিরাপত্তার আবেদনের আদেশের জন্য এজলাসে অপেক্ষা করতে থাকেন মাহমুদুর রহমান।
বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে কোর্ট ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান এজলাসে এসে মাহমুদুর রহমানকে বলেন, আপনার গাড়িতে বেরুতে পারবেন না, আসুন অন্য গাড়িতে আপনাকে তুলে দেই। এরপর আদালতের বারান্দা থেকে নেমে গাড়িতে উঠেন তিনি। ১৫ ফুট যাওয়ার পরেই তাকে বহনকারী প্রাইভেট কারে ইট ছুড়ে হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ সময় পাশের চায়ের দোকানে ৬ থেকে ৭ জন পুলিশ সদস্য বসে ছিল। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ছুটে এলে পিছু হটে হামলাকারীরা। এরপর সেখান থেকে ৪০-৫০ ফুট এগিয়ে আবার হামলার শিকার হয় মাহমুদুর রহমানকে বহনকারী গাড়ি। এ সময় গাড়িতে রড, ইট ও হকিস্টিক নিয়ে হামলা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা গাড়ির কাচ ভেঙে মাহমুদুর রহমানকে রড দিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। এ সময় ড্রাইভার ও আরোহী আরেক আইনজীবীকেও মারধর করে।
পরে আইনজীবীরা তাকে উদ্ধার করে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামস তামিম মুক্তির চেম্বারে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই চেম্বারের জানালা দরজায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল বাকিরা উন্মুক্তভাবে হামলা করে।
হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় আদালতের বারান্দায় বসে মাহমুদুর হামলার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, এখানে প্রয়োজনে জীবন দেব। দেশের জন্য, ইসলামের জন্য জীবন দেব। আদালতের ভেতর হামলার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলে পুলিশ আমাকে গুণ্ডাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা হয়েছে। এর জন্য একদিন তাদেরও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
এ সময় সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাকে বলেন, ‘হামলার সময় কোথায় ছিলেন। আপনারা তো আমাকে মার খাওয়ালেন। হাসপাতালেও নিয়ে যাচ্ছেন না। আমার সারা মুখ থেকে রক্ত ঝরছে, আমি যন্ত্রণায় দাঁড়াতে পারছি না। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে যশোরের দিকে রওনা দেন মাহমুদুর রহমান।
মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে থাকা ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, আদালত থেকে জামিন পেলেও আদালত চত্বরে ছাত্রলীগের অবরোধের মুখে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা বের হতে পারেননি জামিনপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের নীরব উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে।
এ বিষয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান জানান, জামিনপ্রাপ্ত আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই আদালত ভবনের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় কে বা কারা হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার জানান, আমি এই মামলার বাদী হিসেবে কোর্টে গিয়েছি। এ সময় কেউ যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হন তার জন্য তো আমি দায়ী নই। এই মামলার বিবাদীর উপর কে বা কারা হামলা করেছে সেটাও আমি জানি না। আদালতে মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন কুষ্টিয়া বারের সিনিয়র আইনজীবী প্রিন্সিপাল আমিরুল ইসলাম, বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীসহ দলটির নেতাকর্মীরা।
যশোর বিমানবন্দরে প্রাথমিক চিকিৎসা
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, কুষ্টিয়ার আদালত চত্বরে হামলার শিকার মাহমুদুর রহমান যশোর বিমানবন্দর থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। ৭টা ২৫ মিনিটে নভো এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। এর আগে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসযোগে কুষ্টিয়া থেকে যশোর বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ড্যাব নেতা আবু আহসান লাল্টুর নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম।
মাহমুদুর রহমান যশোর বিমানবন্দরে পৌঁছালে যাত্রী বিশ্রামাগারে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ডাক্তার লাল্টু। এ সময় মাহমুদুর রহমান বিমান বন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের কুষ্টিয়ার ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ প্রহরায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। তিনি আদালতের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করলে আদালত কুষ্টিয়া সদর থানার ওসিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কোর্টের সেই নির্দেশনা পুলিশ পালন করেনি। ফলে এই ঘটনার পর থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আদালতগুলোতে তার নামে দায়েরকৃত মামলায় হাজিরা দিতে যাবেন কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।
রাতে মাহমুদুর রহমানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে কটূক্তি করার অভিযোগে দায়ের করা মানহানির মামলায় জামিন নিতে আদালতে যান মাহমুদুর রহমান। জামিন শুনানিকে ঘিরে সকাল থেকে ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আদালত এলাকায় অবস্থান নেয়।
ছাত্রলীগের মহড়ায় জামিন পাওয়ার পরও নিরাপত্তা শঙ্কায় মাহমুদুর রহমান আদালত এজলাসেই প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ নিরাপত্তা দিতে এলে মাহমুদুর রহমান এজলাস থেকে বের হলেই হামলার শিকার হন। এ সময় পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। হামলার বর্ণনা দিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের বললো আপনারা আমার এজলাসে আশ্রয় নেন।
সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আমরা এজলাসে বসা ছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, আমি র্যাব স্কোয়াডের ব্যবস্থা করছি। সাড়ে চারটার দিকে কোর্ট ওসি বললো এই গাড়িতে করেই আপনি চলে যান। তাদের একটা গাড়িতে করে আমাদের উঠিয়ে দেয়া হলো। গাড়িতে ওঠার দুই মিনিটের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন বড় বড় পাথর, লাঠি, দা নিয়ে হামলা করে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে আমার মাথায় তিন চারটা পাথর দিয়ে আঘাত করে তারপর লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়। আমি যতদূর পারি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। আমি গাড়ি থেকে নেমে এক আইনজীবীর চেম্বারে আশ্রয় নিই। এর প্রায় আধাঘণ্টা পর পুলিশ আসে।
প্রত্যক্ষর্দশীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাজির হওয়ার পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এমএম মোর্শেদের আদালত মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন। পৌনে ১২টার দিকে আদালত থেকে বের হতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে যান তিনি। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। তারা মাহমুদুর রহমানকে বহনকারী গাড়ি আদালত চত্বরে ঢুকতে বাধা দেয়।
মাহমুদুর রহমান তখন সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমার লড়াই বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। এরপর কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আশ্রয় নেন তিনি। প্রায় ২০ মিনিট পর সেখান থেকে বের হয়ে আবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিরাপত্তার আবেদন করেন। এ সময় মামলার বাদী জেলা ছাত্রলী?গের সভাপ?তি ইয়া?সির আরাফাত তুষা?র ও সম্পাদক সাদ আহমেদ’র নেতাকর্মীরা এজলাসের বারান্দায় অবস্থান নেয়। নিরাপত্তার আবেদনের আদেশের জন্য এজলাসে অপেক্ষা করতে থাকেন মাহমুদুর রহমান।
বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে কোর্ট ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান এজলাসে এসে মাহমুদুর রহমানকে বলেন, আপনার গাড়িতে বেরুতে পারবেন না, আসুন অন্য গাড়িতে আপনাকে তুলে দেই। এরপর আদালতের বারান্দা থেকে নেমে গাড়িতে উঠেন তিনি। ১৫ ফুট যাওয়ার পরেই তাকে বহনকারী প্রাইভেট কারে ইট ছুড়ে হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ সময় পাশের চায়ের দোকানে ৬ থেকে ৭ জন পুলিশ সদস্য বসে ছিল। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ছুটে এলে পিছু হটে হামলাকারীরা। এরপর সেখান থেকে ৪০-৫০ ফুট এগিয়ে আবার হামলার শিকার হয় মাহমুদুর রহমানকে বহনকারী গাড়ি। এ সময় গাড়িতে রড, ইট ও হকিস্টিক নিয়ে হামলা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা গাড়ির কাচ ভেঙে মাহমুদুর রহমানকে রড দিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। এ সময় ড্রাইভার ও আরোহী আরেক আইনজীবীকেও মারধর করে।
পরে আইনজীবীরা তাকে উদ্ধার করে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামস তামিম মুক্তির চেম্বারে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই চেম্বারের জানালা দরজায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল বাকিরা উন্মুক্তভাবে হামলা করে।
হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় আদালতের বারান্দায় বসে মাহমুদুর হামলার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, এখানে প্রয়োজনে জীবন দেব। দেশের জন্য, ইসলামের জন্য জীবন দেব। আদালতের ভেতর হামলার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলে পুলিশ আমাকে গুণ্ডাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা হয়েছে। এর জন্য একদিন তাদেরও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
এ সময় সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাকে বলেন, ‘হামলার সময় কোথায় ছিলেন। আপনারা তো আমাকে মার খাওয়ালেন। হাসপাতালেও নিয়ে যাচ্ছেন না। আমার সারা মুখ থেকে রক্ত ঝরছে, আমি যন্ত্রণায় দাঁড়াতে পারছি না। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে যশোরের দিকে রওনা দেন মাহমুদুর রহমান।
মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে থাকা ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, আদালত থেকে জামিন পেলেও আদালত চত্বরে ছাত্রলীগের অবরোধের মুখে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা বের হতে পারেননি জামিনপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের নীরব উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে।
এ বিষয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান জানান, জামিনপ্রাপ্ত আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই আদালত ভবনের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় কে বা কারা হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার জানান, আমি এই মামলার বাদী হিসেবে কোর্টে গিয়েছি। এ সময় কেউ যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হন তার জন্য তো আমি দায়ী নই। এই মামলার বিবাদীর উপর কে বা কারা হামলা করেছে সেটাও আমি জানি না। আদালতে মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন কুষ্টিয়া বারের সিনিয়র আইনজীবী প্রিন্সিপাল আমিরুল ইসলাম, বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীসহ দলটির নেতাকর্মীরা।
যশোর বিমানবন্দরে প্রাথমিক চিকিৎসা
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, কুষ্টিয়ার আদালত চত্বরে হামলার শিকার মাহমুদুর রহমান যশোর বিমানবন্দর থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। ৭টা ২৫ মিনিটে নভো এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। এর আগে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসযোগে কুষ্টিয়া থেকে যশোর বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ড্যাব নেতা আবু আহসান লাল্টুর নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম।
মাহমুদুর রহমান যশোর বিমানবন্দরে পৌঁছালে যাত্রী বিশ্রামাগারে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ডাক্তার লাল্টু। এ সময় মাহমুদুর রহমান বিমান বন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের কুষ্টিয়ার ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ প্রহরায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। তিনি আদালতের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করলে আদালত কুষ্টিয়া সদর থানার ওসিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কোর্টের সেই নির্দেশনা পুলিশ পালন করেনি। ফলে এই ঘটনার পর থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আদালতগুলোতে তার নামে দায়েরকৃত মামলায় হাজিরা দিতে যাবেন কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।