শেষের পাতা

তিন সিটিতে প্রচারণায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

কাফি কামাল

২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে প্রচারণার মাঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির অধীনে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। কেন্দ্রীয় নেতাদের এ উদ্যোগের ফলে সংকট কেটেছে সিলেটে। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন করে সরে দাঁড়িয়েছেন। কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি দেখভাল করছেন স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম।

স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে নির্বাচন পরিচালনার কৌশল নিয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন মহল্লায় মহল্লায়। ভোটারদের হাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী লিফলেট। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে একদিকে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার অন্যদিকে সাহস পেয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলের অঙ্গসংগঠন, পেশাজীবী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনও অংশ নিচ্ছে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায়। সবমিলিয়ে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের জেতাতে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। আবার প্রতিটি মহানগরেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অধীনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে জোনাল টিম ও জেলা এবং মহানগর নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ওয়ার্ড কমিটি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।  

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে প্রচারণায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে আরো দুটি কমিটি। একটির সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক ও সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক। আরেকটির সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মোক্তাদির ও সদস্য সচিব জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ।

সিলেটে ১০১টি নির্বাচনী কেন্দ্রের জন্য গঠন করা হয়েছে আলাদা কমিটি। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে এখন ধানের শীষের পক্ষে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ জনজোয়ার ও নেতাকর্মীদের ঐক্য দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান ও গ্রেপ্তার করছে। ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করছে।

শুক্রবার কিছু কর্মীকে গ্রেপ্তার করলেও পুলিশ স্বীকার করছিল না। পরে বিএনপি প্রার্থীসহ নেতাকর্মীরা উপ-কমিশনার অফিসের সামনে অবস্থান করলে পুলিশ গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করে তাদের আদালতে চালান করেছে। সিলেটে যে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে নির্বাচনের দিন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। যে কোনো ধরনের ভোট জালিয়াতি প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত সিলেটবাসী। এদিকে প্রচারণার পাশাপাশি মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডের সভাপতি থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পর্যন্ত নেতাদের নিয়ে সিলেটে বিএনপির সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বৈঠক করেছেন। মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সিলেটে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী।

আমাদের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবাই তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভুলে গেছেন। আমাদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীও সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, সিলেটে জনগণের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেছি তা আশাব্যঞ্জক। নির্বাচিত হয়ে আরিফুল হক কয়েক বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। যতদিন তিনি দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন নগরীর উন্নয়নে নিরলস ভূমিকা রেখেছেন। ভোটাররা এসব বিবেচনা করছেন। আমাদের বিশ্বাস মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও বিএনপির প্রার্থী জিতবে। এখন ভোট কিভাবে হবে সেটা নিয়েই প্রশ্ন।

সিলেটে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান,  শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলমসহ অনেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, ডা. শাহরিয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকসহ জেলা ও মহানগরের নেতারা। নির্বাচনের মাঠ থেকে সেলিমের সরে দাঁড়ানোর ঘটনা রাতারাতি আরিফুল হক চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার শক্ত অবস্থান। এদিকে খুলনা ও গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী কৌশল থেকে সিলেটে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের। একই সঙ্গে এজেন্টদের যাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতে না পারে, সে জন্য নেতাকর্মীদের একটি অংশকে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেট বিএনপি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে প্রচারণায় গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও মহানগর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আহ্বায়ক করে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুকে আহ্বায়ক করে গঠিত মহানগর নির্বাচন পরিচালনার কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে দুই দফায় রাজশাহী গেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

প্রথম দফায় তিনদিন থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন ও সমন্বয় করেছেন। পরে ৫ দিন থেকে চালিয়েছেন প্রচারণা। আগামীকাল তিনি আবারো কয়েকদিনের জন্য রাজশাহী যাবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনী প্রচার ও পরিচালনার জন্য মহানগরের নেতৃত্বে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে কমিটির অধীনে বিষয় ও ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেসব তৃণমূল কমিটির দেখভাল করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আমরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সুপারভাইজ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচারণার বিষয়টি সমন্বয় করি। গয়েশ্বর রায় বলেন, রাজশাহীতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান অত্যন্ত মজবুত। দলের পুরুষকর্মীদের চেয়ে এ মহানগরে নারীকর্মীদের অবস্থান শক্তিশালী এবং তারা অত্যন্ত সক্রিয়।

দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব-সংকটও নেই। গাজীপুর বা খুলনা মতো সরকার সহজে ভোট কেড়ে নিতে পারবে না। তিনি বলেন, কর্মীরা গ্রেপ্তারের আশঙ্কা উহ্য করে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। আমরা ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করছি। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটদানের ব্যাপক আগ্রহ দেখলাম। রাজশাহী সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহীতে এসে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। ধানের শীষের পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

রাজশাহীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, আমিরুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তফার পাশাপাশি সক্রিয় রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু ও সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। রাজশাহীতে বিএনপি নেতারা ভোটারদের কাছে যে বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেটা হলো- ‘বুলবুল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন’। মেয়র নির্বাচিত হয়েও তাকে নগর ভবনের বাইরে কাটাতে হয়েছে প্রায় আড়াই বছর।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। আর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নিজেই। নির্বাচন পরিচালনার কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবায়দুল হক চান। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে ঢাকা থেকে ছুটে গেছেন দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, আকন কুদ্দুসুর রহমানের পাশাপাশি জেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপিরাও সক্রিয় রয়েছেন প্রচারে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল করার মতো রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগের নেই।

প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যদি আওয়ামী লীগকে সহায়তা করে তাহলে ভিন্নকথা। তিনি বলেন, আমাদের বন্ধু সংগঠন জামায়াতের নেতাদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে যেভাবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে; সেখানে একটি সংবেদনশীল কৌশলী খেলা হতে পারে। তারপরও আমরা বিশ্বাস করি, বরিশাল সিটি বিএনপির ঘাঁটি। আসন্ন সিটি নির্বাচনেও জাতীয়তাবাদী শক্তিই জয়লাভ করবে-এটাই বিশ্বাস করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status