দেশ বিদেশ

ছাতক সিমেন্ট কারখানায় আড়াই কোটি টাকার জালিয়াতি

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে জালিয়াতি করে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের সিমেন্ট উত্তোলনের অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার রুবেল মিয়া নামের এক ডিলারকে শুক্রবার রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম মজুমদারের আদালতে ছাতক থানার ওসি (অপারেশন) কাজী গোলাম মোস্তফা ৩ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় কারখানার কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিবিএ নেতাসহ ক’জন রাঘব বোয়ালের নাম উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রূপালী ব্যাংক ঢাকা কাপ্তান বাজার শাখার ২ কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি ও পূবালী ব্যাংক ছাতক শাখার ৮টি জাল ক্রেডিট ভাউচার দিয়ে মেসার্স শম্পা অ্যান্ড সন্স এবং হানিফ এন্টারপ্রাইজের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে সিমেন্ট উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে। মেসার্স শম্পা অ্যান্ড সন্স এবং হানিফ এন্টাপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ছাতক শহরের ফকিরটিলা এলাকার মৃত কালা মিয়ার পুত্র রুবেল মিয়া প্রায় এক বছর আগে ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের সিমেন্ট উত্তোলন করে জালিয়াতির মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে তোলপাড় শুরু হলে তৎকালীন সময় জালিয়াতির বিষয়টি বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। সমপ্রতি কারখানায় এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের লোকজন বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করেন। গত রোববার মধ্যরাতে রুবেল মিয়াকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি টিম। পরে জালিয়াতির অভিযোগে রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তাকে গেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়ার জালিয়াতির ঘটনায় প্রায় ৯ মাস পর কারখানার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক, প্রশাসনের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম বাদী হয়ে ছাতক থানায় দুটি মামলা করেন। মামলা দু’টির একটিতে সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়া ছাড়াও রূপালী ব্যাংক ঢাকা কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও একই শাখার সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা বিকাশ দত্তকে আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, মেসার্স শম্পা অ্যান্ড সন্স এবং হানিফ এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রুবেল মিয়া ২০১৭ সালের ২রা নভেম্বর থেকে ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পূবালী ব্যাংক ছাতক সিমেন্ট কারখানা শাখার কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ৮টি ভুয়া ক্রেডিট ভাউচার জমা দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ব্যাংক স্টেইটমেন্ট সংগ্রহ করা হলে হিসেবে গরমিল ধরা পড়ে। এছাড়াও রুবেল মিয়া ঢাকার রূপালী ব্যাংক কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও কর্মকর্তা বিকাশ দত্তের যোগসাজশে ২ কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টিতে ১ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেছেন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে। এ ভয়াবহ জালিয়াতির বিষয়টি ২০১৭ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানানো হয়। ২০১৮ সালের ৩রা জানুয়ারি ৩৭৭তম সিসিসিএল এন্টারপ্রাইজ বোর্ড সভায় অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির বিষয়টি উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের দু’জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে গঠিত তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তে জালিয়াতির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। 
ব্যাংক গ্যারান্টি ও ক্রেডিট ভাউচার জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে অভিযুক্ত সিমেন্ট ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা আত্মসাতের দায় স্বীকার করে ৩শ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য রুবেল মিয়া তিনটি ব্যাংকের ২৭টি চেক প্রদান করেছেন। কারখানায় ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ একাধিক লোকজনের অভিযোগ এক সময়ের নৌকার মাঝি অশিক্ষিত রুবেল মিয়ার সঙ্গে জালিয়াতি কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কারখানার কিছু কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা জড়িত রয়েছেন। কারখানার এসব কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাদের খুঁটির জোরেই রুবেল মিয়া জালিয়াতি করেও ৯মাস আইনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল। জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর কারখানার সংশ্লিষ্ট শাখায় ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাতক থানার ওসি (অপারেশন) কাজী গোলাম মোস্তফা জানান, রিমান্ডে জালিয়াতির বিষয়ে আসামি রুবেল মিয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
ছাতকে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: ছাতকে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার দুপুরে উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ক’দিন ধরে নারী সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গ্রামের সামছু মিয়া ও গৌছ উদ্দিন পক্ষদ্বয়ের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। এ নিয়ে শনিবার সকালে নোয়ারাই স্ট্যান্ডে সামছু মিয়া ও গৌছ মিয়ার পুত্র লায়েক মিয়ার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে দুপুরে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত গৌছ উদ্দিন, সামছু মিয়া ও সায়েদ আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাপ্পু, লায়েক মিয়াসহ আহতদের ছাতক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status