দেশ বিদেশ

মিরপুরে গুপ্তধনের সন্ধানে খনন

স্টাফ রিপোর্টার

২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

‘টিনশেডের বাড়ির সাতটি কক্ষ। পাকা মেঝে। আবু তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন বাড়ির মাটির তলে গুপ্তধন থাকতে পারে? পুলিশ বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলামকে অবহিত করেন। পরে বাড়ির মালিকও থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করে আবেদন করেছেন যে, বাড়িটির নিচে গুপ্তধন থাকতে পারে বলে তিনি লোকেমুখে শুনেছেন। কিন্তু, আইনি জটিতলায় ভয়ে তিনি তা খনন করতে পারছেন না। যেই অভিযোগ সেই কাজ। অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ২০ জন শ্রমিক প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে দু’টি কক্ষে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন। কিন্তু, হতাশ হলেন সবাই! প্রায় ৪ ফুট খনন করার পর কিছুই পাওয়া যায়নি। বাড়িটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত রাখা হয়েছে। ভূতত্ত্ববিদ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হলে আবারও সেটি খনন করা শুরু হবে বলে জানা গেছে। গতকাল মিরপুর-১০ নম্বরের ডেসকো অফিসের পাশের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
সরজমিন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর থানাধীন ১০ নম্বরের সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর একটি টিনশেড বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। আগে ওই বাড়ির মালিক ছিলেন দিলদাশ খান। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময় তিনি দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। বাড়িটি বিক্রয়ের সময় সেই সময়ের মালিক দিলদাশ খান প্রায় দুই মণ স্বর্ণ মেঝের নিচে পুঁতে রেখে গেছেন স্থানীয় লোকজনের মুখে এমন আলোচনা ছিল। দিলদাশ খানের পুরনো বংশধর দাবিদার আবু তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি গত ১০ই জুলাই মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে তার ঠিকানা দিয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায়। তিনি ওই জিডিতে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন যে, ওই বাড়িটি তার আত্মীয়ের। সেখানে প্রচুর গুপ্তধন রয়েছে। সেই গুপ্তধন উত্তোলন করা হোক। জিডির বিষয়টি পুলিশ বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলামকে অবহিত করেন। মনিরুল ইসলাম আইনি জটিলতা এড়াতে আরো একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন। সেই জিডিতে নিরাপত্তার স্বার্থে সেই স্বর্ণ প্রশাসনের অনুমতিতে তিনি খনন করে উত্তোলন করতে চান বলে থানা পুলিশে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার-উজ-জামান এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২০ জন শ্রমিক বাড়ির দুটি কক্ষ খনন শুরু করেন। বাড়িটির আশপাশ ঘিরে ছিল থানা পুলিশসহ র‌্যাব-২ এর সদস্যরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ফুট খনন করার পর সেখানে কিছুই পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বাড়িটির টিনশেড ও দেয়ালের পিলার দুর্বল হওয়ার কারণে দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় ম্যাজিস্ট্রেট খননকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এ সময় শ্রমিকরা সেটি খনন বন্ধ করে সেখান থেকে উঠে আসেন। পরে ওই দুটি কক্ষ ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ সিলগালা করে দেন। স্বর্ণের জন্য বাড়ির মেঝে খনন করা হচ্ছে এই কথা শুনে আশপাশের লোকজন ওই বাড়িটির সামনে ভিড় করেন। তাদের ভিড় সামলাতে পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যদের বেগ পেতে হয়। সেখানে ভিড় কমাতে পুলিশ একদফা মৃদু লাঠিচার্জ করে। বাড়িটির বর্তমান মালিক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ২০১০ সালে সেলিম রেজা নামে এক ব্যক্তির কাছ তিনি বাড়িটি কিনেছেন। গত কয়েক বছর যাবৎ বাড়িটি ফাঁকা পড়ে ছিল। দু’জন কেয়ারটেকার বাড়িটির দেখাশোনা করতেন। বাড়িতে কয়েকজন ভাড়াটিয়া ছিলেন। তিনি আরো জানান, গত ১২ই জুলাই রাত আনুমানিক ১১টার দিকে দুজন লোক বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তারা বাড়ির কেয়ারটেকারদের আর্থিক প্রলোভনও দেখান। এছাড়াও কয়েকদিন আগে বেশ কিছু লোক বাড়িটিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। তারাই গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে, বাড়িটিতে গুপ্তধন রয়েছে। আইনি জটিলতা এড়াতে তিনি বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেছেন। বাড়িতে যদি গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে তিনি তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবেন। থানায় প্রথম জিডি দায়েরকারী আবু তৈয়ব নামে ওই ব্যক্তির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি তাকে চেনেন না বলে দাবি করেন। বাড়িটির নিচে গুপ্তধন পাওয়া গেলে সরকারি কোষাগারে জমা হোক এটাই আমি চাই। এর প্রতি আমার কোনো দাবি নেই। খননকারী শ্রমিক আবু মোস্তফা জানান, খনন করতে গিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। কোন কিছু পাওয়ার আভাসও পাওয়া যায়নি। বাড়ির দেয়াল দুর্বল হওয়ার কারণে কাজ করতে ভয় লাগছিল। এ বিষয়ে মিরপুর থানার ওসি দাদস ফকির মানবজমিনকে জানান, বাড়িটিতে গুপ্তধন রয়েছে বলে আবু তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি গত ১০ই জুলাই থানায় জিডি করেন। এছাড়াও ওই বাড়ির বর্তমান মালিক মনিরুল আলম স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছেন এখানে গুপ্তধন থাকতে পারে। সেই গুঞ্জনের ভিত্তিতে ১৪ই জুলাই থানায় একটি জিডি করেন। তিনি বিষয়টি দেখার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন। তিনি আরো জানান, খনন করে সেখানে কোনো মূল্যবান বস্তু পাওয়া যায়নি। আধুনিক টেকনিসিয়ানদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আবারো সেটি খনন করা হবে। খনন স্থগিত করার পর এক প্রেস বিফ্রিংয়ে ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার-উজ-জামান জানান, আমরা সাড়ে চার ফুট খনন করেছি। বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর দুর্বল হওয়ায় আরও খনন করলে বাড়িটি দেবে যেতে পারে তাই আপাতত খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ খুঁজে তাদের পরামর্শ নিয়ে আবার খনন শুরু করবো। যদি বিশেষজ্ঞ আগামীকালকের মধ্যে পাওয়া যায় তবে কালই কার্যক্রম শুরু করবো। ততক্ষণ পর্যন্ত বাড়িটি পুলিশ হেফাজতে থাকবে। এখানে কোনো মূল্যবান বস্তু পাওয়া গেলে সেটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা মানবজমিনকে জানান, বাড়িটির মালিক ছিলেন এক পাকিস্তানি নাগরিক। যুদ্ধকালীন সময় তিনি বাড়িটি রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। ওই বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। তিনি আরো জানান, কয়েক বছর আগে সেলিম নামে এক প্রভাবশালীর কাছ থেকে মনিরুল ইসলাম বাড়িটি কিনে নেন। বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে দখলের লড়াই চলছিল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই দ্বিতীয় পক্ষ বাড়িটিতে গুপ্তধন আছে বলে অভিযোগ করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status