বাংলারজমিন

মেধাবী মনিরার উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কা

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:

২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

মেধাবী শিক্ষার্থী মনিরা মমতাজ। দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বাবা মোস্তাফিজার রহমান একজন দরিদ্র কৃষক। মা আঞ্জুয়ারা বেগম গৃহিণী। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের ঝাড়পাড়া গ্রামে। অভাবের সংসারে বেড়ে উঠেছে মনিরা। দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোটেনি ঠিকভাবে। এক পোশাকে সারা বছর যেতে হয়েছে কলেজে। তার সহপাঠীরা বিভিন্ন যানবাহনে কলেজে গেলেও সে অর্থাভাবে ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে প্রতিদিন কলেজে যেত। টিফিনের সময় কলেজে তার সহপাঠীরা অনেক কিছু খেলেও অর্থের অভাবে সে না খেয়ে থাকতো। পড়াশোনা চালাতে তাকে টিউশনিও করতে হয়েছে। এরপরও সে দমে যায়নি, সব বাধা পেরিয়ে এবারে বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।  মনিরা জেডিসি ও এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তবে এমন অভাবনীয় সাফল্যে মনিরার পরিবারে যেমন এসেছে আনন্দের বন্যা, তেমনি দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। এখন বাবা মোস্তাফিজার রহমান ও মা আঞ্জুয়ারা বেগমের একটাই চিন্তা সামনের দিনে কিভাবে হবে মেয়ের পড়াশোনা। কে তাকে সাহায্যে করবে।
মনিরার বাবা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘মোর এক বিঘা জমি আছে। ওই জমির আবাদ দিয়ে ছয় মাসের ভাতও হয় না। ছইলটে খায়া নাখায়া পড়ি ভালো এজাল্ট (রেজাল্ট) করছে। এখন সবায় কওছে বিশ্ববিদ্যালয়ত পড়বার নাগবে। মুই কলেজোতে পড়বার পারনা। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ত পড়াইম কেমন করি।’ তার মা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন,‘মোর বেটির নেকাপড়ার (লেখাপড়া) প্রতি খুব ঝোঁক। খায়া না খায়া স্কুল করচে। তার রেজাল (রেজাল্ট) ভালো করায় গ্রামের মানুষ কওচে তোমার বেটি সোনা। বেটির লেখাপড়া বন্ধ করেন না। অয়(মেয়ে) একদিন অনেক বড় জাগাত যাইবে, গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু টাকা না থাকলে অ্যকে (মেয়েকে) কিভাবে পড়াইম? মনিরা বলে, ‘আমার লেখাপড়ায় চাচা গাউছুল আজমের পাশাপাশি স্যারেরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। যা কখনো ভুলতে পারবো না।’ মনিরা লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দরিদ্রতার কষাঘাতে তার এই স্বপ্ন কি পূরণ হবে? বদরগঞ্জ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার বলেন, ‘মনিরা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উপজেলায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র শিক্ষার্থী। সে অত্যন্ত মেধাবী। কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েও মেয়েটি মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। কলেজের শিক্ষকেরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। সে আগামীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছ থেকে সহযোগিতা  পেলে অনেক বড় হবে বলে তিনি জানান।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status