বাংলারজমিন

গণধর্ষণের শিকার তরুণীর আত্মহত্যা

গ্রেপ্তার হয়নি আসামি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

নলছিটিতে গণধর্ষিত কলেজছাত্রীর আত্মাহুতিতে পুলিশের নাটকীয় ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরে এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ আইনি কোনো পদক্ষেপ রাখেনি। এমনকি ওই তরুণীর পরিবার মামলা করতে গেলেও তা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। বরং নিহত কলেজছাত্রী লিমা আক্তারের ময়নাতদন্ত রিপোর্টের দোহাই দিয়ে পরিবারকে নীরব রাখছে পুলিশ। এমতাবস্থায় তরুণী ধর্ষণে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিশেষ কলেজছাত্রীর বিকারগ্রস্ত পিতাকে ভয়ভীতির ওপরে রাখছে। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অনুরাগ গ্রামের আলোচিত এই বিষয়টি সম্পর্কে থানা পুলিশ অবগত থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে স্থানীয়ভাবে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় তরুণীর পিতা অনেকটা আতঙ্কগ্রস্ত। অভিযোগ রয়েছে- নলছিটি পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফারুক হোসেন এই গণধর্ষণের বিষয়টি আড়ালে রাখতে চাইছেন। এমনকি ঘটনায় জড়িতদের ‘সেইভ সাইডে’ রাখারও কৌশল নিয়েছেন। কারণ, তরুণীকে যে ইটভাটায় গণধর্ষণ করা হয়েছে সেটি ফারুকের। তাছাড়া যাদের বিরুদ্ধে তরুণী ধর্ষণের এই অভিযোগ তারাও সাবেক কাউন্সিলর ফারুকের ক্যাডার বাহিনী বলে পরিচিত। মূলত এই কারণেই ফারুকের দ্বারা পুলিশ প্রভাবিত হয়ে তরুণীর পিতার মামলাটি গ্রহণে গড়িমসি শুরু করেছে। যদিও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাখায়াত হোসেন বলছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি মোটেও ওয়াকিবহাল নন। তবে কলেজছাত্রী আত্মাহুতির বিষয়টি শুনেছেন এবং তার নির্দেশেই ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পাশাপাশি তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না এই বিষয়টিরও প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।’ তবে নিহত তরুণীর পিতা মো. কামাল হোসেন সরদারের অভিযোগ হচ্ছে, গত ১২ই জুলাই বিকালে মেয়ের আত্মাহুতির আগেই পুরো বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হয়েছেন এবং সেই বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেনকে অবহিত করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ না রেখে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের দোহাই দিচ্ছেন। এমনকি সন্দেহভাজনদের হুমকির বিষয়টি তাকে অবহিত করলেও দেখি দেখছি বলে কালক্ষেপণ করেন। এখন তিনি হুমকিতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। যে কারণে সর্বশেষ থানা-পুলিশে মামলা দিতে ব্যর্থ হলে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি ভাবছেন। উল্লেখ্য, গত ১২ই জুলাই অনুরাগ গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেনের মেয়ে নলছিটি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের এসআই আনোয়ার হোসেন লাশটি হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে প্রেরণ করেন। অবশ্য ওই সময় এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছিল। এই বিষয়ে এসআই আনোয়ারের ভাষ্য হচ্ছে লাশটি উদ্ধারকালে পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাছাড়া পুুলিশের প্রাথমিক সুরতহালেও ধর্ষণের আলমত মেলেনি। যে কারণে এই বিষয়টি শুধু অপমৃত্যু মামলাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে মেয়ের বাবা কামাল হোসেন বলছেন, স্বামী পরিত্যক্তা লিমা আক্তারের (২২) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী মালিপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে সোহাগের হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক ছিল। সোহাগের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে অপারগতা জানালেও তাদের সম্পর্ক চলছিল। মূলত এই সোহাগের সঙ্গেই দেখা করিয়ে দিতেই গত ৮ই জুলাই লিমা আক্তারকে বাসা থেকে ডেকে নেন তার বান্ধবী সুরাইয়া আক্তার রিনতু। পরবর্তীকালে রিনতুর বাসায় লিমা থাকার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত দেখা করছিলেন সোহাগ। এমনকি ঘটনার দিন অর্থাৎ ১১ই জুলাই বিকেলেও প্রেমিক সোহাগ আসার খবর পেয়ে লিমা ও রিনতু তাকে এগিয়ে আনতে যান। তখন সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফারুকের ক্যাডার মিজান হাওলাদার, মোহাম্মদ আলী, মাকসুদ হাওলাদার, শাহিন হাওলাদার, সুরাইয়া আক্তার রিনতু ও বাপ্পি হাওলাদার একত্রিত হয়ে সোহাগকে মারধর করে। তখন প্রাণ রক্ষার্থে সোহাগ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে অভিযুক্তরা তাকে ধরে আরও পিটুনি দিয়ে নির্জন স্থানে আটকে রাখে বলে অভিযোগ।

পরবর্তীকালে সোহাগের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে রিনতুর বাসা থেকে লিমাকে বের করে নেয়। ওই দিন রাত ১১টার দিকে সাবেক মেয়র ফারুকের ইটভাটায় লিমা আক্তারকে আটকে গণধর্ষণ করা হয়। এই বিষয়টি গভীর রাতে কলেজছাত্রীর পিতা নিশ্চিত হয়ে বান্ধবী রিনতুর বাসায় গিয়ে দেখতে পান তার মেয়ের সঙ্গেই সোহাগের জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার তোড়জোর করছে ফারুকের লোকজন। কিন্তু এই বিয়েতে সোহাগ দ্বিমত পোষন করায় তাকে মারধর করা হচ্ছিল। অবশ্য এই ঘটনার প্রাক্কালে সাবেক কাউন্সিলর ফারুক তাকে ফোন করে মীমাংসার প্রস্তাবও করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবের পরদিন অর্থাৎ ১২ই জুলাই কোনো ধরনের সালিশ-মীমাংসা না হওয়ায় অনেকটা লোকলজ্জার ভয়ে লিমা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মাহুতি দেন বলে দাবি করেন পিতা কামাল হোসেন সরদার। এমতাবস্থায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফারুকের ভাষ্য হচ্ছে- বিষয়টি সম্পর্কে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু কোনো ধরনের ধর্ষণের আলামত তার কাছেও নেই। কিন্তু এখন একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে তার লোকজনকে ফাঁসাতে চাইছে বলে উল্টো অভিযোগ করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status