এক্সক্লুসিভ

সিদ্দিকুরের চোখের বিনিময়েও আলো পায়নি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা

মরিয়ম চম্পা

২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

যে আন্দোলনের জন্য জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ চোখ দুটোকে হারালাম তার ফলাফল শূন্য। কারণ আমাদের আন্দোলনটা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। সেশন জট, ফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় নেয়া, নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়া, এসব সমস্যা এখনো বিদ্যমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে এমনটিই জানালেন তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বলেন, যদি ব্যক্তিগতভাবে কেমন আছি জানতে চান তাহলে বলবো ততোটা ভালো নেই। কারণ আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষার্থী বা বন্ধুরা যখন ফোন দিয়ে তাদের সমস্যার কথা বলে তখন মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। কারণ কোনো কিছুই ঠিক হয়নি। সবই আগের মতো আছে। এসব শুনলে কীভাবে ভালো থাকি বলেন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আন্দোলনে আহত হওয়ার পর সরকার আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। চাকরির পাশাপাশি এখন লেখাপড়াও চলছে। ২০শে জুলাই দিনটা আমার কাছে অনেক কষ্টের ও পীড়াদায়ক। তবে আমি গর্ববোধ করছি এই ভেবে ওদের (৭ কলেজের শিক্ষার্থী) কল্যাণে দৃষ্টিশক্তি উৎসর্গ করতে পেরেছি। কিন্তু খারাপ লাগে যখন এই হারানোটা নিষ্ফল হয়েছে এটা মনে করে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো সুনিদৃষ্ট ভাবনা নেই বলে জানান সিদ্দিকুর।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাকরি থেকে যা পাই তা দিয়ে মাকে নিয়ে কোনোভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পুরো বিষয়টাকেই একটা সমস্যা মনে হয়। নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারি না। অন্যের সাহায্য লাগে। নিজের ইচ্ছামতো কিছু করতে পারছি না। তবে এসব বিষয় নিয়ে এখন আর খুব বেশি ভাবি না। কারণ কিছু কিছু ভাবনার কোনো উত্তর হয় না। যদিও স্বপ্নগুলো এখনো মরেনি। স্বপ্নটাকে লালন করছি। দেখি এটা বাস্তবে কোনো রূপ নেয় কিনা।

আক্ষেপ করে বলেন, ফাইনাল ইয়ারে উঠলেও থার্ড ইয়ারের ফলাফল এখনো পেন্ডিং রয়েছে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সিদ্দিকুর সবার ছোট। ময়মনসিংয়ের ছেলে সিদ্দিকুরের বাবা তফুর উদ্দিন মণ্ডল মারা গেছেন ছোট সময়। মা ছুলেমা খাতুনই এখন তার অন্ধের যষ্ঠী। কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর বলেন, আমাদের আন্দোলনটা ছিল নির্দিষ্ট সময়ে রুটিনমাফিক পরীক্ষা, ঠিকমতো ক্লাস না হওয়া ও ফল প্রকাশে বিলম্বসহ বিভিন্ন কারণে। আর কোটা সংস্কার আন্দোলন হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি আন্দোলন। প্রতিবন্ধী বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য যে কয়টি কোটা রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। থাকলেও সেগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে যাদের পাওয়ার কথা তারা পায় না। তাই বিশেষভাবে দাবি জানাতে চাই যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাদের জন্য যেন পর্যাপ্ত কোটার ব্যবস্থা করা হয়।

গত বছরের ২০শে জুলাই রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারান সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। ওই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কে নেবে তার দায়িত্ব? তার সহপাঠীরা সিদ্দিকুরের একটি চাকরির দাবি জানায় সরকারের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবিও মানা হয়। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর সাত রাস্তায় অবস্থিত সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে অস্থায়ী ভিত্তিতে টেলিফোন অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয় তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status