প্রথম পাতা

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার

২০ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হওয়ার পর  এবার ছাত্রলীগের হুমকির মুখে ক্যাস্পাস ছেড়ে চলে গেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তার পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখি করায় ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেকজন  শিক্ষক। এসব ঘটনায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। যারাই কোটা আন্দোলনে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মানববন্ধন, পথসভা বা বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিচ্ছেন তারাই এ ধরনের হুমকির মুখে পড়েছেন। এমনকি ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেও পার পাচ্ছেন না তারা। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে ভীতি সঞ্চার করে পুরো আন্দোলনকে অন্যখাতে প্রবাহিত করতেই এসব হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের পাঁয়তারা চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখির জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাইদুল ইসলাম। ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিজেই জানিয়েছেন ওই শিক্ষক। শুধু তাই নয়, এ শিক্ষকের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখি করায় ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খ. আলী আর রাজী। শিক্ষকরা বলছেন, এসব ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক মো. মাইদুল ইসলাম বেশ কিছুদিন ধরে নিজের ফেসবুকে কোটা সংস্কারের পক্ষে লেখালেখি করছেন। পাশাপাশি এ আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিরুদ্ধেও তিনি সরব ছিলেন। সর্বশেষ ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর হামলার ছবি শেয়ার করে এর প্রতিবাদ করেন। এ সব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত রোববার দুপুরে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি এসএম মনিরুল হাসানের কাছে মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নালিশ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মী বিভাগের সভাপতির কক্ষে গিয়ে হট্টগোল করেন। পরে এসএম মনিরুল হাসান বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করার পর নেতা-কর্মীরা চলে যান। নালিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে মাইদুল ইসলামের ছবি শেয়ার করে নানা মন্তব্য করছেন। অনেকে তাঁকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেন। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার জন্য ক্যাম্পাস ছাড়ার কথা বলেন মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। হুমকির কারণে গতকাল তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন। নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পাসে যাবেন না বলেও জানিয়েছেন।  তবে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বুঝে তিনি পদক্ষেপ নেবেন। অন্যদিকে শিক্ষক খ. আলী আর রাজীও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে বলেন, স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছি না। গতকাল তিনিও বিভাগে যাননি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, তা জানাতে চাননি। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কথা বলার স্বাধীনতায় যাঁরা হস্তক্ষেপ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি লড়ে যাবেন। কোটা সংস্কার নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে গত রোববার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থী মীর মোহাম্মদ জুনায়েদকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এই দুই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর টিপু স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে এই দুই শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করার কথাও উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে চবি’র প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে আসতে পারছেন না-এ ধরনের তথ্য জানা নেই। কোনো শিক্ষক এখনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের। এক্ষেত্রে প্রশাসনের ধারাবাহিক নিষ্ক্রিয়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ দিন দিন বিঘ্ন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ছাত্র-শিক্ষকদের অসন্তোষ ভবিষ্যতে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। শহীদ মিনার ও ঢাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১৪ ছাত্রলীগ নেতার নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন জানিয়ে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status