দেশ বিদেশ

‘স্বপনকেও ৭ টুকরো করে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেই’

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২০ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জ শহরের কালিরবাজারের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষের ঘাতক পিন্টু দেবনাথ তার আরেক বন্ধু ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহাকেও ২১ মাস আগে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরো করে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে পিন্টুর সঙ্গী ছিল তার পরকীয়া প্রেমিকা রতœা রানী চক্রবর্তী। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জের পৃথক দুটি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে রতœা রানী চক্রবর্তী ও হত্যার প্ররোচনাকারী আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুন। মোল্লা মামুন ঘাতক পিন্টু দেবনাথের কথিত ‘বড় ভাই’।

নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে রত্মা রানী চক্রবর্তী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসীনের আদালতে আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। নিহত স্বপন কুমার সাহা নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ কাচারীগলি এলাকার মৃত সোনাতন চন্দ্র সাহার ছেলে।

আদালতকে রতœা রানী চক্রবর্তী জানায়, ভারতের কলকাতায় একটি ফ্ল্যাটের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে পিন্টু দেবনাথ ও তার বান্ধবী রতœা রানী চক্রবর্তী ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহাকে ২১ মাস আগে হত্যা করে। প্রথমে শীলপুতা দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্বপনকে অজ্ঞান করা হয়। তারপর বটি দিয়ে লাশ কেটে সাত টুকরা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। একই ঘটনায় হত্যার প্ররোচনাকারী আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুনও আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

রতœা আদালতকে আরো জানায়, ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর বাজার কাজী বাড়ির প্রবাসী আজহারুল ইসলামের ৪ তলা ভবনের ২য় তলায় রতœা রানী চক্রবর্তীর ফ্ল্যাট বাসায় স্বপনকে পিছন থেকে শিলপুতা দিয়ে আঘাত করে রতœা ও পিন্টু। পরে অচেতন অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে তাকে ৭ টুকরো করে। ব্যাগে ভরে স্বপনের দেহ (অংশগুলো) পিন্টু ঠাণ্ডা মাথায় ভবনের পাশে খালি স্থানে রাখে। পরে সুযোগ বুঝে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় পিন্টু।

স্বপন হত্যায় গত ১৫ই জুলাই রাতে মাসদাইর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন মামুন ও পিন্টুর পরকীয়া প্রেমিকা পরিচিত রত্মা রানী চক্রবর্তী। ১৮ই জুলাই রাতে গ্রেপ্তারকৃত রতœা ও রিমান্ডে থাকা পিন্টুকে নিয়ে মাসদাইরে রতœা যে বাড়িতে থাকে সেই বাড়িতে যায় ডিবি পুলিশের একটি টিম। পরে ওই ফ্ল্যাট থেকে স্বপন কুমার সাহাকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত শিলপুতা, বটি, রক্তমাখা বিছানা চাদর ও তোষক উদ্ধার করা হয়।

এর আগে স্বপনের বড় ভাই অজিত কুমার সাহা জানান, স্বপন কুমার সাহা ছিলেন খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। গত ৯ই জুলাই ঘাতক বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টুর ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষের খ-িত লাশ উদ্ধারের পর পিন্টুর প্রতি আমাদের সন্দেহ বাড়ে। পরে ১৫ই জুলাই বিষয়টি ডিবিকে জানালে রিমান্ডে থাকা পিন্টুর সহযোগী বাপান ভৌমিক বাবু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। সে তখন পিন্টু দেবনাথের এক বান্ধবী রত্না রানী চক্রবর্তীর সন্ধান দেন। তার মোবাইল নাম্বার পর্যালোচনা করে জানা গেছে স্বপনের মোবাইলটি রতœা ব্যবহার করছে। ১৫ই জুলাই রাতেই তাকে আটকের পর তার কাছ থেকে স্বপনের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল উদ্ধার করে। মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে। ওই ফ্ল্যাট পিন্টুকে না দিয়ে বরং উল্টো হুমকি দিচ্ছিল স্বপন। এসব কারণেই ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দিতো। তখন থেকেই স্বপন সাহা ও প্রবীর ঘোষকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে পিন্টু। পরে ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর স্বপনকে ডেকে নেয় পিন্টু। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল।  

স্বপন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত রত্না ও মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রত্নার ফ্ল্যাট থেকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত শিলপুতা, বটি, রক্তমাখা বিছানা চাদর ও তোষক উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন হত্যাকা-ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু ও তার সহকারী বাপেনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে। ওই ফ্ল্যাট পিন্টুকে না দিয়ে বরং উল্টো হুমকি দিচ্ছিল স্বপন। এসব কারণেই ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দিতো। তখন থেকেই স্বপন সাহা ও প্রবীর ঘোষকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে পিন্টু। পরে ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর স্বপনকে বাসায় ডেকে নেয় পিন্টু। পরে তার ফ্ল্যাটে সে রাতে চাপাতি দিয়ে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মৃতদেহ খ- খ- করে ব্যাগে ভরে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়।

এদিকে স্বপন কুমার সাহা নিখোঁজ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় করা জিডির তদন্ত থামায় ওই সময়ে সদর থানায় কর্মরত এসআই উত্তম কুমার। ঘাতক পিন্টুর সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকায় স্বপনের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধারেও সে কোনো ভূমিকা নেয়নি। ফলে স্বপন ২১ মাস নিখোঁজ থাকলেও স্বপনের মোবাইল ব্যবহার করে আসছিল পিন্টুর পরকীয়া প্রেমিকা রতœা রানী চক্রবর্তী। এসআই উত্তম কুমার ওই সময়ে জিডির তদন্ত সঠিকভাবে করলে হয়তো প্রবীর ঘোষ মার্ডার হতো না। এমনটাই বলছেন শহরের কালিরবাজারের ব্যবসায়ীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status