বিশ্বজমিন

পাকিস্তানের নির্বাচনে দৃষ্টি সেনাবাহিনীর!

মানবজমিন ডেস্ক

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ২:৫৮ পূর্বাহ্ন

সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস ও ধারাবাহিক কতগুলো সন্ত্রাসী হামলার পর ২৫ শে জুলাই পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে ওপর উদ্বেগজনক এক ছায়াপাত পড়েছে। পাকিস্তান আশা করে আছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার হাতবদল হবে। এমন পালাবদল পাকিস্তানের ইতিহাসে খুব অল্প সময়েই ঘটেছে। পর্যবেক্ষকরা এরই মধ্যে ব্যালট নিয়ে ভয়াবহ কারচুপি হতে পারে বলে উদ্বেগ হানিয়েছেন। এ নির্বাচনকে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে জেলে থাকা নওয়াজ শরীফ ও তার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বিজয়ী ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক ইমরান খানের মধ্যে বড় লড়াই হিসেবে দেখছেন অনেকে।  বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, নির্বাচনী পরিবেশকে আরো ভারি করে তুলেছে মধ্য জুলাইয়ে ধারাবাহিক কয়েকটি হামলা। এর ফলে বিপুল জনসংখ্যার এ দেশটিতে নিরাপত্তার মান নিয়ে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক হুসেইন হাক্কানি বলেছেন, নির্বাচনে ফল যা-ই হোক না কেন, ২৫ শে জুলাইয়ের নির্বাচন পাকিস্তানে শুধু অস্থিতিশীলতা বাড়াবে। এ নির্বাচন হবে এমন, যাতে কেউই জিতবে না। ওই নির্বাচনে প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ পাকিস্তানি তাদের ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজের (পিএমএলএন) পরবর্তী সরকারে উত্তরসুরি কে হবেন। পিএমএলএনের নওয়াজ শরীফ ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৩ সালে। তারা এবারও আশা করছে, নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফের অধীনে তারাই নির্বাচনে ম্যান্ডেট পাবে। অন্যদিকে এ নির্বাচন ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, নওয়াজ শরীফ জেলে রয়েছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহসভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নাম জড়িয়ে আছে তিনটি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে লেনদেনের সঙ্গে। সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ রাজনৈতিক দল দাঁড় করালেও তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠ বলতে গেলে ফাঁকা। এই ফাঁকা মাঠে ইমরান খানের জন্য ‘ছক্কা’ মারাটা খুবই সহজ হতে পারে। যদি তিনি তা না পারেন তাহলে এমন সুযোগ আর পাবেন কিনা তা বলা মুশকিল। যদি তিনি না পারেন তাহলে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো তার পিপিপিকে নিয়ে কিং মেকারে ভূমিকায় যেতে পারেন। বিজয়ীদের নিয়ে তিনি জোট গঠনের দিকে যেতে পারেন।
‘নীরব অভ্যুত্থান’
এক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী দুটি পক্ষের মধ্যে কথার লড়াই দেখা দিয়েছে। এতে পরিবেশের ওপর ছায়া পড়েছে। এ লড়াই এমন দু’টি এক্টরের মধ্যে যারা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারবে না। তার একজন হলেন দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত ও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। দ্বিতীয় পক্ষ হলো সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর জেনারেলরা তার দলকে টার্গেট করছে বলে অভিযোগ করেছেন নওয়াজ শরীফ। বলা হচ্ছে, তার দলের প্রার্থীদের তারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বিশেষ করে পাঞ্জাবে তা বেশি। পাকিস্তানে ক্ষমতার মূল নিহিত রয়েছে এই প্রদেশে। কারণ, দেশটির জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্টে যে ৩৪২টি আসন আছে তার মধ্যে পাঞ্জাবেই রয়েছে ১৪১টি। নওয়াজ শরীফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ এ মাসের শুরুতে চরমে ওঠে, যখন তার অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়। নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ লন্ডনে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখান থেকে এক সপ্তাহ আগে নওয়াজ পাকিস্তান ফেরেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর কারসাজির শিকার হয়ে তিনি নিজের সক্ষমতা কতটুকু দেখাতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করছে পিএমএলএনের পরিণতি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু নওয়াজ একার নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে অপহরণ ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করছে পাকিস্তানের বড় বড় মিডিয়া ও অধিকারকর্মীরা। একটি থিংকট্যাংক এই চাপকে ‘নীরব অভ্যুত্থান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। প্রচারণায় ফোকাসে ফেলা হয়েছে পিএমএলএনকে। ওদিকে বিলাওয়াল ভুট্টোও তার প্রচারণায় বিঘœ ঘটানোর অভিযোগ করেছেন। এমনিতেই পাকিস্তানে একটি দুর্বল বেসামরিক সরকার হোক এমনটা চায় সেনাবাহিনী- এ রকম একটি ব্যাপক ধারণা প্রচলিত আছে। তারা চায় না বেসামরিক সরকার ও নিরাপত্তা বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আসুক।  নিরাপত্তা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, সেনাবাহিনী সুস্পষ্টভাবে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এতে সুবিধা পাবেন ইমরান খান। এমনটা মনে করা হচ্ছে। তাকে পাকিস্তানে অবাধে চলাচল করতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দেখছে দেশ শাসন করার জন্য তিনিই উত্তম বাছাই হতে পারেন। ওদিকে ইতিহাসে পাকিস্তানের প্রায় অর্ধেক সময় শাসন করেছে সেনাবাহিনী। এবার তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে বা হচ্ছে তা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, নির্বাচনে তাদের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচনের দিনে তারা ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করবে।
আর্জেন্ট চ্যালেঞ্জ
হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান নিজেদেরকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে ঘোষণা করেছে। নির্বাচনকে ভয়াবহভাবে, আগ্রাসীভাবে জালিয়াতির চেষ্টা রয়েছে নির্বাচনে। নির্ধারিত দিনে নির্বাচন হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদি সামান্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়, যদি একটু পিছলে যায়, যদি কর্তৃত্বপরায়ণতা জেগে ওঠে তাহলে পাকিস্তান বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status