প্রথম পাতা

নির্বাচন নিয়ে সরব কূটনীতি

মিজানুর রহমান

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

কূটনীতিকরা জানতে চাইছেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি কেমন হবে? এটি কি ৫ই জানুয়ারির মতো হবে নাকি সব দলের অংশগ্রহণে বিতর্ক মুক্ত হবে। বিভিন্ন কূটনৈতিক আড্ডায় সেই প্রশ্ন তুলছেন তারা। জানার চেষ্টা করছেন সরকারের মনোভাবও। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায়শই কথা বলছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাদের নিয়মিত কথাবার্তা হয়।

বিভিন্ন ফর্মে ঘুরেফিরে আসে নির্বাচন প্রসঙ্গ। সরকার ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন চায় না। তারা সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। কূটনীতিক অঙ্গনে এই বার্তা স্পষ্ট করা হয়েছে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে। কিন্তু আদৌ কি সে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখ থেকে সেটি শুনতে চান বিদেশী বন্ধু উন্নয়ন সহযোগীরা। এই প্রেক্ষাপটে আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় থাকা ভিনদেশী কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হচ্ছেন।

কূটনীতিক অঙ্গনে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে এমন কর্মকর্তারা বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণে সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে কূটনৈতিক তৎপরতা দিনদিন বাড়ছে। তবে এটি অতীতের মতো দৃশ্যমান বা গণমাধ্যমের সামনে নয়। অনেকটা পর্দার আড়ালে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি ও মনোভাব জানা-বুঝার চেষ্টায় রয়েছেন তারা। ওই দলে পূর্ব-পশ্চিম, কাছের-দূরের সব বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীরা রয়েছেন।

তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সরকারের যে অঙ্গীকার রয়েছে তার পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চান। কোন ফর্মুলায় এটি বাস্তবায়ন হবে? সেটি জানতে এরই মধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন একাধিক পশ্চিমা কূটনীতিক। ঢাকা সফরকারী জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুঁতেরেস খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপে একাদশ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন। কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতি ডিকাব-এর সঙ্গে মতবিনিময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের অনিয়মের কড়া সমালোচনা করলেও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছেন।

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিতর্ক ও সহিংসতামুক্ত রাখতে চলমান স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোকে গ্রহণযোগ্য করার তাগিদও দিয়েছেন তিনি। বিদেশিরা সিটি নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। এ নিয়ে বরাবরই তাদের উদ্বেগ রয়েছে। কেবল মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর জাতিসংঘ মহাসচিবই নন। সামপ্রতিক সময়ে বিদেশি যত প্রতিনিধি ঢাকা সফর করেছেন প্রত্যেকেই সরকারের নির্বাচন প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন। আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ হবে।

সেখানে নিশ্চিতভাবে নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসবে- এমনটি ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছে সেগুনবাগিচা। নির্বাচনকালীন সরকার কীভাবে হবে, তাদের কাজ এবং দায়-দায়িত্ব নিয়েও জিজ্ঞাসা রয়েছে বিদেশি দূতদের। দু’দিন আগে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন ঢাকা সফরকারী বৃটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের পরিচালক ও ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনার। সেখানে তাদের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ব্রেক্সিট পরবর্তী সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন। এছাড়া সবশেষ কূটনৈতিক পল্লীতে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

দেশীয় কূটনীতিকরা এটা মানছেন- যে নির্বাচনী বছরে কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। কিন্তু এটাকে তারা চাপ বলতে রাজি নন। তবে তারা এটা বলছেন, আগামী নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে বিদেশি ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ তথা আগামীর উন্নয়ন এজেন্ডা জড়িয়ে আছে। বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস প্রকাশিত গত সোমবারের মানবাধিকার রিপোর্টেও এ বিষয়ে দেশটির মূল্যায়ন ও মনোভাব ফুটে উঠেছে। সেখানে ২০১৭ সালের ঘটনাগুলো তুলে ধরে ২০১৮ সালের সমাপনীতে বিতর্কমুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বৃটেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকদের তাগিদে বা নিজে থেকেই নির্বাচন প্রশ্নে অবস্থান খোলাসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের বিদেশ নীতি-নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত সরকারি দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন- নির্বাচন নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আগেই বিদেশিদের ব্রিফ করবে সরকার। ঢাকায় থাকা বিদেশি মিশনগুলোর প্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজই বৈঠকে বসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বিকালের ওই আয়োজনে সরকারের তরফে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হবে। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠানোর বিষয়েও কথা হবে। এ নিয়ে দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন- বিদেশিদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিতই কথা বলেন। ব্রিফ করেন।

এবারের বিফিংটি সেই ধারাবাহিতায় হলেও সেখানে বাড়তি হিসাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনী ফর্মুলা নিয়ে তাদের যে জিজ্ঞাসা ও উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করা হবে। উল্লেখ্য, শুধু মাত্র সরকার নয়, সবার অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), সরকারি দল ও জোটের নেতা, সংসদের বাইরের এবং ভেতরের বিরোধী দলগুলো, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কূটনীতিকদের সিরিজ বৈঠক ও মতবিনিময় চলছে।

সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল বিএনপি’র মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে এতদিন অ্যা বিএনপি, দ্য বিএনপি বিতর্কসহ একাধিক পক্ষ সক্রিয় থাকলেও সামপ্রতিক সময়ে সেটি নেই। কূটনৈতিক মহলে বিএনপি নেতারা অতি সমপ্রতি যে বার্তা দিয়েছেন তা হলো- তারা কোনো অবস্থাতেই দলের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যেতে চান না। কূটনীতিকরা বিএনপি’র এ বক্তব্যকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখছেন। তবে এ নিয়ে পর্দার আড়ালে আদৌ কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টায় কোনো মহল বিশেষত বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধু বা উন্নয়ন সহযোগী কেউ রয়েছে কি-না সেটি এখনও খোলাসা হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status