প্রথম পাতা

আণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ইলিশের জন্য হুমকি!

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ তার ইলিশের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপই হাতে নিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা তার ২৪০০  মেগাওয়াটের দ্বিতীয় আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ঠিক ইলিশের   অভয়ারণ্যে তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে এ প্ল্যান্ট ইলিশের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। দি থার্ডপোলডটনেট ১৭ই জুলাই এই খবর দিয়েছে। এদিকে মস্কো থেকে তাসের বরাত দিয়ে ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাতা সংস্থা রোসাতমের উপ-পরিচালক আলেক্সান্ডার লকশিন সোমবার বলেছেন, বাংলাদেশের রূপপুরের বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতে ভারতীয় কোম্পানির অংশগ্রহণকে রাশিয়া স্বাগত জানায়। ভারত রূপপুরে কতিপয় মেটেরিয়ালস এবং ইকুইপমেন্টস, নির্মাণ এবং স্থাপনার কাজ করবে। মস্কোতে এবিষয়ে গত মার্চে একটি ত্রিদেশীয় চুক্তি সই হয়েছে। এবং আমরা আশা করি ভারতীয়  কোম্পানি ভবিষ্যতে টেন্ডারে অংশ নেবে। প্রথম প্ল্যান্টের কাজ গত নভেম্বরে শুরু হয়। গত ৮ই জুলাই বাংলাদেশ অ্যাটমিক অ্যানার্জি রেগুলেটরি অথরিটি দ্বিতীয় প্রকল্পের ডিজাইন ও নির্মাণের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করেছে বলেও তাসের খবরে বলা হয়েছে।  

দি থার্ডপোলডটনেটের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন বরিশাল জেলার  মেঘনা নদী এলাকায় ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত ২ হাজার একর জমি নিয়েছে। হিজলা ও  মেহেন্দীগঞ্জের চর মেঘলা নামক স্থানে ওই আণবিক প্ল্যান্ট উঠবে। আর এখানেই সরকার সমপ্রতি  দেশটির ষষ্ঠ বৃহৎ ইলিশ অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছিল। প্রকল্প পরিচালক এএফএম মিজানুর রহমান দি থার্ড পোলকে বলেছেন, এই প্ল্যান্টের জন্য আমরা তিন-চারটি স্থান দেখেছিলাম। কিন্তু পানির প্রাপ্যতা ও কম জনসংখ্যা বিবেচনায় চর মেঘলাই শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ইলিশ উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ইলিশ বাংলাদেশের মোট মৎস্য সম্পদের ১২ ভাগের  যোগান দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই)’র জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ইলিশ বিশ্বের অন্যতম সংবেদনশীল মৎস্য প্রজাতি। এর উৎপাদন ও প্রজনন ধরে রাখতে সযত্ন পদক্ষেপ দরকার। আণবিক শক্তি বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো ভারী শিল্প ইলিশের অভয়ারণ্যে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব  ফেলবে।

বিশেষ করে সরকার যদি আগেভাগেই সম্ভাব্য পরিবেশ প্রতিকূলতা চিন্তা করে তা প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে। তার কথায়, আণবিক শক্তি প্রকল্প তার কুলিং টাওয়ারের জন্য বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করে। পরে  সেই পানি গরম অবস্থায় নদীতে গিয়ে পড়বে। সুতরাং ধাতব মিশ্রিত ওই পানি যখন মাছের সংস্পর্শে আসবে তখন তা সহ্য করার মতো প্রাণী পানির তলায় কমই থাকতে পারে। ইলিশ ও তার পোনা খুব সহজেই মরে যাবে। উপরন্তু পুরো ইকো-সিস্টেমের খাদ্য সরবরাহের  চেইনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তিনি অবশ্য উল্লেখ করেন যে, সবেমাত্র আমরা প্রকল্পের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার কাজ হাতে নিয়েছি। আশা করি আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রাখবো।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয় এবং তা বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা অর্জনের একটি উপায়।  এর ৬৫ ভাগ সমুদ্র এবং বাকিটা নদীতে ধরা পড়বে।   প্রায় ৫ লাখ জেলে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হতে চাইলেও তার জ্বালানি ঘাটতি প্রকট। বর্তমানে তারা ১৪,৫০০  মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দেশটির ২৪ ভাগ মানুষ এখনো পর্যন্ত জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বাইরে রয়ে  গেছে। এ জন্য সরকার ছয়টি বৃহৎ কয়লানির্ভর পাওয়ার প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনা করছে। বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের কাছে তারা এখন ১৩২০ মেগাওয়াট আণবিক প্ল্যান্ট তৈরি করছে।

দেশটি ১৩২০ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে পটুয়াখালীতে, আর এজন্য  যে এলাকাটি প্রকল্পের জন্য বেছে  নেয়া হয়েছে সেটিও আবার ইলিশের আরেক বৃহৎ অভয়াশ্রম আন্ধারমানিকের কাছে। চীনের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে করা এই প্ল্যান্ট থেকে ২০১৮ সালের শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এছাড়া ১৩২০ মেগাওয়াটের মহেশখালী প্রকল্প মালয়েশিয়ার, ১৩২০ মেগাওয়াট বাংলাদেশ- কোরিয়া এবং মাতাবাড়ী প্ল্যান্ট সিঙ্গাপুরের সঙ্গে করার কাজ চলছে। এসব পয়েন্ট থেকে ২০২১ সালে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status