প্রথম পাতা

মেয়েটির জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল ওরা

মরিয়ম চম্পা

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

জীবন এখন তার কাছে এক যন্ত্রণা। নানা ঘটনার পর পেয়েছেন ধর্ষণের হুমকিও। তার অপরাধ কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়া। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শিকার এই অমানবিক মানসিক পীড়নের। ঘটনায় জড়িত হিসেবে উঠে এসেছে ছাত্রলীগের এক নেতা ও তার চার সহযোগীর নাম।

ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী ঘনিষ্ঠজনদের বলেন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই অনেক সচেতন। অথচ সেখানে কিনা একজন নারী হিসেবে আমি নিরাপদ নই। একজন সাধারণ ছাত্রী হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত হয়েছি। কোনো কমিটিতে আমার নাম নেই। কোনো দল-মতের হয়ে নয়, একজন শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক হিসেবে এই আন্দোলন ও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। ২০১৬ সালের শেষের দিকে আমাকে ছাত্রলীগে জয়েন করতে বলা হয়েছিল। আমাকে বলেছিল, তুমি যদি ছাত্রলীগে যোগ দাও তাহলে অনেক ভালো করবে। কিন্তু আমি ছাত্রলীগে যোগ দেইনি। আমার পারিবারিক ব্যাগগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত হলেও আমি কোনো দলকে সাপোর্ট করি না। এমনকি আমাদের ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক জোটসহ অনেকগুলো সংগঠন সক্রিয় থাকলেও সেখানে আমার নাম নেই। আমি বরাবরই চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। তবে যেখানে প্রতিবাদ করা দরকার সেখানেতো প্রতিবাদ করবোই।

জানা গেছে, জাবি’র কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা শাকিলুজ্জামানকে সম্প্রতি পতাকা মিছিল থেকে ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মী ধরে নিয়ে যায়। শাকিলকে গল্প করার কথা বলে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরপরই ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ৩-৪টা মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করে। মেয়েদের ভয়ভীতি দেখায়। এ ঘটনার পর ওই নারী শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়। এতে লেখা হয়, আমি ফেসবুকে লিখেছিলাম, আমাদের খুব কষ্ট করে চলতে হয়।

আমরা টিউশনি করে খাবার টাকা জোগাই। সর্বোচ্চ ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পাই একটি টিউশনিতে। সেই টিউশনির টাকায় একটি পোশাক কিনলেও তাতে ভ্যাট দিতে হয়। আমার বাবা ব্যবসা করেন, ভাই চাকরি করেন। তারাও সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট দিয়ে থাকেন। এই কমেন্ট লেখার পর কেউ কেউ ওই নারী শিক্ষার্থীর সমালোচনা করেন। ইশকাত হারুন আকিব নামের একজন অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় ওই নারীর বিরুদ্ধে লেখেন। তাকে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট বলে গালিগালাজ করতে থাকে। ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, অথচ ২০১৪ সালে আমার প্রথম ভোটটি আওয়ামী লীগের নৌকাতেই দিয়েছিলাম। শনিবার এই ঘটনার পরপরই আমার ফেসবুক আইডি একাধিকবার হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। এবং রিপোর্ট করা হয়।

এমনকি তারা প্রকাশ্যে বলে- ‘আমাকে নাকি রেপ করে মুন্নি সরণির মতো নতুন একটি সরণিতে পরিণত করবে।’  পরদিন তারা পুনরায় মোটরসাইকেল নিয়ে আমাকে রীতিমতো নাজেহাল শুরু করে। এ সময় আমি ডানে গেলে ওরা ডানে যায়, বামে গেলে বামে। এরপর বাধ্য হয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সেলিম স্যারকে বিষয়টি জানাই। তখন স্যার আমাকে প্রক্টর স্যার সিকদার জুলকারনাইনের কাছে নিয়ে যান। তিনি প্রক্টর স্যারকে বলেন, কোনো দল-মতের নয়- ও আমাদের ছাত্রী, ওর নিরাপত্তা আমাদেরই দিতে হবে। প্রক্টর স্যারকে বলি, স্যার ওরা আমাকে নিয়মিত হুমকি ও যৌন হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলছে, আমি অনিরাপদ বোধ করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তারা হলেন-হামজা রহমান অন্তর, ইশকাত হারুন আকিব, জাহিদ হাসান ইমন, মাসুদ রানা। এদের মধ্যে হামজা রহমান অন্তর শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status