দেশ বিদেশ
তিন সিটি নির্বাচন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনা
সিরাজুস সালেকিন
১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
তিন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গি তৎপরতা ও গুজব রটানো রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকা, সরঞ্জাম, ভোটকেন্দ্র, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সিটিতে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশনা সংবলিত খসড়া পরিপত্র ইসিতে পাঠিয়েছে। ইসির ভেটিংয়ের পর পরিপত্র আকারে জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ভোটারদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ ৭ জন, অস্ত্রসহ আনসার তিনজন, লাঠিসহ নারী-পুরুষ আনসার ও ভিডিপি ১২ জন করে মোতায়েন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত দুজন অস্ত্রসহ ব্যাটালিয়ান আনসার মোতায়েন করা হবে। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এছাড়া প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম ও প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। গড়ে ন্যূনপক্ষে ৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি মোবাইল ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগে দুদিন ও পরে একদিন করে মোট চারদিন দায়িত্ব পালন করবে। আচরণবিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকে দুদিন পরে পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড প্রতি একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া নির্বাচনী অপরাধের বিচারের জন্য রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে ১০ জন করে এবং সিলেট সিটিতে ৯জন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে সাহসী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। আইন ও নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগদানে সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভোট গণনার সময় যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট কিংবা পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকে অথবা কোনো প্রার্থী এজেন্ট নিয়োজিত না করেন তাহলে তার অনুপস্থিতির বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসার লিখিতভাবে রেকর্ড রাখবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া থেকে নিরপরাধী বা বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নির্বাচনী এলাকায় সন্দেহভাজন, বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজন। তবে কারও বিরুদ্ধে যেন হয়রানিমূলক বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় অথবা নিরপরাধী বা বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার না করা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যাবশ্যক। ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে কয়েকজন পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তা বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনার বিষয়ে আপত্তি তুলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন কমিশনার জানান, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা যাবে। তবে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করতে হবে। উল্লেখ্য, আগামী ৩০শে জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন সিটি নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এর আগে খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের’ অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।