বাংলারজমিন

৪০ বছর পর সাজেদা ফিরে পেলেন পরিবার

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

অভাব অনটনের জন্য খাওয়ানো-পরানোর কষ্টে ৪০ বছর আগে গফরগাঁও রেলস্টেশনে অপেক্ষমাণ অবস্থায় ট্রেনের ভেতর ফেলে রেখে আসা দুই কন্যাশিশুর মধ্যে সাজেদা নিজ বাড়িতে ফিরেছে। হতভাগা দুই কন্যাশিশুর নাম সাজেদা ও মল্লিকা।
৪০ বছর পর ছোট মেয়ে সাজেদা ফিরে এসেছে তার বাবার বাড়িতে। ফিরে পেয়েছে আপনজনদের। শুধু নেই সেই বাবা-মা। যে বাবা-মা তাদের নিত্য অভাব অনটনের কারণে বুকে পাথর বেঁধে ফেলে রেখে এসেছিলেন ট্রেনে। ভাগ্যের বিড়ম্বনায় ট্রেন থেকে মাতৃসদন, সেখান থেকে দুই শিশুর আশ্রয় মেলে নেদারল্যান্ডসের দুই দম্পতির ঘরে।
গত সোমবার সাজেদা নেদারল্যান্ডসের নাগরিক স্বামী সমাছ ও দুই কন্যাসন্তান নিয়ে ইত্যাদির একটি টিমের সহযোগিতায় গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের খারুয়া মুকন্দ গ্রামের জন্মভূমিতে আসেন।
পরিবারের ভাষ্য ১৯৭৮ সালে তখন তাদের বয়স ছিল ৬-৭ বছরের মতো। অভাবের সংসারে তাদের খাবার জোগানোর সুযোগ হয়নি বাবা মায়ের। ফলে বাধ্য হয়ে হতভাগ্য দুই বোনের বাবা-মা তাদের ট্রেনের ভেতর ফেলে রেখে আসেন। পরে ট্রেনটি গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতিকালে দুই শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের দত্তপাড়ায় অবস্থিত একটি মাতৃসদনে ভর্তি করে দেন। সেখানে কেটে যায় দুই বছর। দুই বছরে তারা বাড়ির কোন কথাই মনে করতে পারেনি। পরে ১৯৮০ সালে নেদারল্যান্ডসের এভার্ট বেকার ও মেরিয়ান্ট রেজল্যান্ড দম্পতি তখন বাংলাদেশ সফর করছেন। তারা টঙ্গীর ওই মাতৃসদন থেকে শিশু মল্লিকাকে দত্তক নেন। পরে ওই দম্পতির মাধ্যমেই নেদারল্যান্ডসের আরেকটি পরিবার মল্লিকার ছোট বোন সাজেদাকে দত্তক নিয়ে যায়। সেখানেই সাজেদা ও মল্লিকা বড় হন। নেদারল্যান্ডসের নাগরিক সমাছের সঙ্গে বিয়ে হয় সাজেদার। তাদের সুখের সংসারে রয়েছে দুই কন্যা সন্তান। দত্তক নেয়ার সময় দুই বোনের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। দত্তক নেয়া পরিবার এ খবর জানলেও প্রকৃত পরিচয় তাদের জানা ছিল না। পরে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তার মা বাবার সন্ধান করে ব্যর্থ হন।
এ নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সূত্র ধরে অনেকেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনকি ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে গফরগাঁও থেকে যোগাযোগ করেন সাজেদা ও মল্লিকার স্বজনরাও। তাদের আবেদনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে সাজেদা ও মল্লিকার পরিচয় উন্মোচিত হয়।
সোমবার সাজেদা নেদারল্যান্ডসের নাগরিক স্বামী ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ইত্যাদির একটি টিমের সহযোগিতায় গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের খারুয়া মুকন্দ গ্রামের জন্ম ভূমিতে আসেন। এ সময় এক আবেগঘন অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় বড় বোন সলেমন নেসা ও ভাই ছুতু মিয়া হারিয়ে যাওয়া বোনকে জড়িয়ে ধরে বলেন ৪০ বছর পর বোন ফিইরা আইছে। এতদিন ভাবছিলাম বোনডা আমাদের মইরা গেছে। ওরে পাইয়া এখন কইলজাডা ঠাণ্ডা অইয়া গেছে। তবে এখন আর বাংলা বলতে পারেন না সাজেদা। পরে সাজেদারা বাবা-মার কবর জিয়ারত করেন। এখন আত্মীয়-স্বজন ও আশেপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ দুদিন ধরে সাজেদাকে দেখতে আসছে। তাদের পরিবারে যেন এখন উৎসবের আমজ বইছে। কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাজেদার ভাই ছুতু মিয়া। তিনি বলেন, বহুত বছর পর বোনেরে পাইছি। কিন্তু আব্বা আর বোনেরে দেখে যেতে পারলো না। আব্বা বেঁচে থাকলে এহন সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। রাওনা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম বলেন, সাজেদার আগমনে সারা গ্রামে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে। তাকে দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে। পরিবারের সাধ্যমতো বাড়িতে আসা মানুষজনদের আপ্যায়নের চেষ্টা করছে তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status