ইংল্যান্ড থেকে

‘দ্য হিস্ট্রি মেকারস’-এ দুই ঘণ্টা

সামন হোসেন, মস্কো (রাশিয়া) থেকে

১০ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

ফুটবলের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা)। রাশিয়ার প্রতিটি শহরে তারা তৈরি করেছে ফুটবলের অস্থায়ী জাদুঘর। তবে মস্কোর জাদুঘরটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ফিফা এর নাম দিয়েছে,‘দ্য হিস্ট্রি মেকারস’।
মস্কো শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় গত ৯ই জুন। যা সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে আগামী ২০শে জুলাই পর্যন্ত।  ব্রাজিলের ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা রবার্তো কার্লোসসহ প্রায় দেড় শতাধিক অতিথি ‘দ্য হিস্ট্রি মেকারস’-এর উদ্বোধন করেন। একদিন খেলার ফাঁকে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে ‘দ্য হিস্ট্রি মেকারস’-এ। ছোট্ট সুসজ্জিত বিল্ডিংয়ের শুরুতেই রয়েছে এবারের বিশ্বকাপের বড় একটি ফিকশ্চার। দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে বড় স্ক্রিনে ৩০ মিনিটের এক প্রামাণ্যচিত্রে বিশ্বকাপের নানা কিছু প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘৫০ এর মারাকানা ট্র্যাজেডি, ৫৮ সালে ব্রাজিলের শিরোপা উৎসব, ৮২’র পাওলো রসির পারফরম্যান্স, ৮৬ সালে ম্যারাডোনার একক প্রচেষ্টায় সেই গোল, শুধু স্ট্রাইকারদেরই নয় রাশিয়ার সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিন, ইতালির বুফনদেরও বেশ কিছু অসাধারণ মুহূর্তও রয়েছে ভিডিওতে। অডিও ভিজুয়ালের ডানদিকে রয়েছে বলের সম্ভার। যুগে যুগে ফুটবলের বিবর্তন হয়েছে সেই বলগুলো সাজানো। প্রতিটি বলের ইতিহাসও সংক্ষিপ্ত করে লেখা। নিচতলার শেষ প্রান্তে অটোগ্রাফ কর্নার। রবার্তো কার্লোস, পিটার স্যামুয়েলসসহ বেশ কয়েকজন তারকার অটোগ্রাফ ফ্রেমে বন্দি। ফিফার বর্তমান ও প্রথম মহিলা সাধারণ সম্পাদক ফাতিমার অটোগ্রাফও রয়েছে। অটোগ্রাফ সেকশনের পাশেই নিচে কালো এক দেয়ালে জাদুঘর দেখতে আসা দর্শনার্থীদের নিজেদেরও ইতিহাসে সাক্ষী রাখার মাধ্যম আছে। এখানে যে কেউ চাইলে নিজের নাম দেশের নাম কিংবা অটোগ্রাফ দিতে পারবে। সেখানে নিজের নাম ও দেশের নাম লেখার পর চোখ পড়লো একটি শিশুর দিকে। কানে হেড ফোন লাগিয়ে দুলছে শিশুটি। শিশুটির কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম ১৯৬২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সব বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সংয়ের অডিও-ভিডিও ডিসপ্লে। সেখানে আবার একটি কুইজ অপশন ছিল। বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত, দর্শকদের আওয়াজ, গান শুনে বলতে হবে কোন দেশ। যন্ত্রগত কুইজও রয়েছে। যন্ত্রের আওয়াজ শোনার পর অপশন বাছাই করতে হবে শব্দটি কিসের  ভুভুজেলা, বাঁশি না অন্য কিছুর।
নিচ তলার মুগ্ধতা ছাড়িয়ে দোতলা উঠতে অন্তত দু’বার দাঁড়াতেই হবে। ১৯৩০ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত  প্রতিটি বিশ্বকাপের পোস্টার সিরিয়াল অনুযায়ী সাজানো। আরেক পাশে প্রত্যেক বিশ্বকাপে যে বলগুলো দিয়ে খেলা হয়েছে সেগুলো। সংগ্রহের শেষ নেই। পোস্টারের উল্টো দিকে আলাদা কর্নার। সেখানে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপের বাস্তব স্মৃতি কাচে ঘেরা। ১৯৩০ বিশ্বকাপের টিকিট, ১৯৫০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সি, ২০১০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ভুভুজেলা, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স গোলরক্ষকের গ্লাভস, ১৯৮২ বিশ্বকাপে পাওলো রসির বুট, প্রতিটি বিশ্বকাপের বাস্তব সব কিছু চাক্ষুস করার অপূর্ব ব্যবস্থা। এগুলো দেখতে দেখতে ক্লান্ত হওয়ার মোটেও সুযোগ নেই। দর্শনার্থীদের জন্য পেলে, ম্যারাডোনা, লেভ ইয়াসিন অপেক্ষায়! পেলে ও ম্যারাডোনার খেলোয়াড়কালীন অবয়ব। দুই গ্রেটকে দুই পাশে দর্শনার্থীরা নিজেদের মাঝে রেখে ছবি তোলার হিড়িক। লম্বা লাইনের কারণে দুই গ্রেটের মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ হয়নি। পেলের একটু পাশে আলাদা এককভাবে লেভ ইয়াসিন। বল ধরার জন্য ডাইভ দিচ্ছেন এমন ভঙ্গি।
দোতলা সিঁড়ি দিয়ে  নামার পথেই পূর্ণাঙ্গ পূর্ণতা অনুভব করলাম। সেই বিখ্যাত জুলেরিমে ট্রফি। যেটা ১৯৭০ সালে ব্রাজিল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেদের করে নিয়েছিল। ট্রফিটি আবার চুরিও হয়েছিল। যা নিয়ে হইচই হয়েছে সারা বিশ্বে। জুলেরিমে ট্রফির পাশে এবারের ট্রফিও প্রদর্শনীর জন্য আনার কথা রয়েছে। ছোট্ট দোতলা বিল্ডিং দেখতে দেখতে নিমিষেই দুই ঘণ্টা শেষ হয়ে গেল। বিদায় নেয়ার সময় রেফারির ভূমিকায় দাঁড়িয়ে গেলাম। ভিডিও গেমসের বিগত বিশ্বকাপের বিভিন্ন ঘটনা দেখিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত দিলে বেশি পয়েন্ট। নির্দিষ্ট পয়েন্টের মাত্রা অতিক্রম করলে রয়েছে পুরস্কারও।
এসব দেখতে দেখতে নিজের দেশের কথা মনে হলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৪৮ বছর অতিবাহিত হলেও আজ গড়ে উঠেনি একটি ক্রীড়া জাদুঘর। এমনটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের স্মৃতির রক্ষার জন্যও উদ্যোগ নেয়নি সরকার। এসব মনে করে এক প্রকার অপূর্ণতা নিয়ে মস্কোতে অবস্থিত ফিফা জাদুঘর থেকে বিদায় নিলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status