ভারত
ভারতের কারাগার থেকে কিভাবে বাদল ফারাজি দেশে ফিরলেন
কলকাতা প্রতিনিধি
৮ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৩:১৩ পূর্বাহ্ন
দীর্ঘ দশ বছর ভারতের কারাগারে থাকা নিরপরাধ বন্দি বাদল ফারাজি শুক্রবার বাংলাদেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত বন্দি প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় বাদল প্রথম বন্দি যাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বাদলের এই ফেরা খুব সহজে হয় নি। ২০১২ সালে ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় বাদলের ঘটনা নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশ হাইকমিশনও ভারত সরকারকে চিঠি লিখেছিল। কিন্তু ভারতের সরকারি স্তরে কোনও হেলদোল ছিল না। তবে ২০১৬ সাল থেকে এক সমাজকর্মীর লড়াইয়ের ফলেই বাদলের প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়েছে। দিল্লির এই সমাজ কর্মীর নাম রাহুল কাপুর। স্যোসাল মিডিয়ায় রাহুল কাপুরের এই লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাকে চিঠি লিখেছেন। সুষমা লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী বাদল ফারাজিকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছি। বাদল ফারাজির সঙ্গে রাহুলের দেখা হওয়াটাও বেশ নাটকীয়। এ ব্যাপারে রাহুল সোসাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আমি একজন সমাজকর্মী। আমার ¯œাতকোত্তর সমাজ কর্মবিদ্যায় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আমি তিহার জেলে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে সোসাল ওয়ার্কের কাজ শুরু করি। তিহার জেলেই (তিন নম্বর) আমি বাদল ফারাজির (পিতা আব্দুল খালেক ফারাজি) দেখা পাই। তিনি ভারতীয় নন। তিনি একজন বাংলাদেশি। সে তিহার জেলে আসে ২০০৮ সালের ২১ জুলাই। সেই থেকে সে জেলে রয়েছে। তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার ঘটনাটি আমি জানি যে কারও পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু ঘটনাটি একটি ‘ট্রাজিক গল্প’, যেন সরাসরি বলিউডের সিনেমা থেকে তুলে আনা হয়েছে। আসলে কারাগারে রাহুল বাদল ফারাজির কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তাকে বানোয়াট মামলায় যুক্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে যে নিরপরাধ সে কথা রাহুল নিশ্চিত হয়েই দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে কিছু সহমর্মী মানুষকে নিয়ে বাদল ফারাজির মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর তিনি সোসাল মিডিয়ায় শুরু করেছিলেন, স্বাক্ষর অভিযান। আর সোসাল মিডিয়ায় তার এই লড়াইয়ের ফলেই ভারত সরকার নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। তবে সমাজকর্মীদের মতে, বাদল ফারাজি নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ১০ বছর জেল ঘাটতে হয়েছে। ভারতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ফিরেও তাকে বন্দি জীবনই কাটাতে হবে। ভারতের আদালতে তার কোনও আবেদন করার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের সমাজকর্মীরা মনে করেন, তাকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই ২৮ বছরের বাদল ফারাজি নতুন জীবন ফিরে পেতে পারেন।