ঈদ আনন্দ ২০১৮
ছড়া
একগুচ্ছ ঢাকাইয়া ছড়া
আসলাম সানীর
৩০ জুন ২০১৮, শনিবার, ৬:০৯ পূর্বাহ্ন
ঈদের ছড়া
পুরান ঢাকার লালবাগে রই
বাড়ি আমলিগোলা
খাস ঢাকাইয়্যা মানু আমি
সামিউল্লাহর পোলা
রাসবাহারী জীবন আমার
দিলটা মাগার খোলা।
রোজার দিনে রোজা রাখি
ঈদের খুশি বুকে
মিলামিশা থাকি সবতে
আহা কী যে সুখে!
নয়া জামাকাপড় পিন্দা
ঘুরি হাসি মুখে।
সানিউল্লাহ কবি আমি
সবতে ডাকে সানী
দিল খুইলা কোর্মা-পোলাও
সেমাই বাকরখানি
খাইতো দিমু, চাইলে আরও
ফিন্নি ও বোরহানি
আছে বি কোক পানি।
ঈদের ঈদি দিমু আইসেন
দেশরে সবতে ভালোবাইসেন
ঈদ মোবারক বাণী
জানাই আসলাম সানী।
আইলো বচ্ছর চৌদ্দ শ পঁচিশ
গেল বচ্ছর চৌদ্দ শ চব্বিশ
সুখে-দুখে উন্নয়নে ভালোই গেল ইস!
আইলো বচ্ছর চৌদ্দ শ পঁচিশ
বাংলা নববর্ষে দোস্ত শুভেচ্ছা বি লিস।
নয়া ফলে-ফুল-ফসলে
হালখাতা বি লেখ
আবহমান এই বাংলার
মঙ্গল অভিষেক-
শ্রমে ঘামে নয়া কামে
বৈশাখী ওই ঝড়
পোলাপানে গায় বাগানে
‘আম পড় আম পড়’-
ভুরুম আমগো ঘর
সম্প্রীত সুন্দর।
স্বাধীন বাংলাদেশটা আনল
পিতা মুজিবর
সোনার বাংলা গড়তে সবাই
হাতটা শক্ত কর
এই নয়া বচ্ছর!
দেশেই জীবননৌকা বাই
টেকা বি নাই
ঠেকা বি নাই
দেশ-বিদেশে যামু
শাক-মাছ-ভাত ছাইড়া দিয়া
ফাস্টফুড বি খামু
কুনখানে কন পামু?
তাই তো নিজের গাঁয়েই থাকি
মাম্মি বি না, আম্মি বি না
মাকে আমি মা-ই ডাকি
সুখের কুঁড়ে ঘর
আহ কী সুন্দর
তাই ভাবি না পর.
বিদেশ গিয়া
করবি বিয়া
মরবি তোরা মর,
দেশেই জীবননৌকা বাই
ভাটিয়ালি গান বি গাই
শান্তি-সুখের হাওয়া খাই।
ঢাকা ছাইড়া কই যামু?
কন তো চাচা কন মামু
কন তো দেহি কই যামু!
শান্তি খুঁইজা কই পামু?
গাড়ি-ঘোড়া-মানুষ ভিড়
ট্রাফিক জ্যামে প্রাণ অস্থির
মিছিল-মিটিং-ভাঙ গাড়ি
গুলি বোমা দাঙ্গারই-
ভীতি থেকে বাঁচতে চাই
হাসতে চাই নাচতে চাই,
খোলা মাঠ আর গাছও নাই
সত্য কইরা কন তো ভাই
একটু ছায়া কোথায় পাই?
মুক্ত হাওয়া কই পামু
বিশুদ্ধ জল কই খামু
ঢাকা ছাইড়া কই যামু?
জীবন বড় পেরেশান
বিহান বেলায় জাইগা দেহি
ফকফকা আসমান
শুভ আলোয় কাটুক ভালোয়
গাই আনন্দ গান-
পুরান ঢাকায় লাইগা গেছে
আচার অনুষ্ঠান,
বাগ বাগিচায় ফুলবি ফোটে
জুয়ান-বুড়া সবতে জোটে-
সব পেরেশান কামে
ছুটছে ডানে বামে
গাড়ি-ঘোড়ার জামে,
দোকান-অফিস-কোর্টে
পোলা-মাইয়্যা সব ঢাকাইয়্যা
নাক্কে-মুখ্খকে ছোটে
ব্যস্ত হয়া ওঠে,
সদরঘাট আর গুলিস্তান
মুখে দিয়া খিলি পান
ভিড় ঝঞ্ঝাট-ঠেলাঠেলি
জীবন বড় পেরেশান।
ইমুন খাঁচা বানাও চাচা
চান মামু কই রে- চান মামু কই?
পুরান ঢাকার গল্লির মুখে
লাগছে রে হইচই,
আলিশান ওই দালান দিয়া
আসমান ঢাইকা যায়
চান্দের বইন তারা বিবি
করছে রে হায়! হায়!
হাওয়াবি নাই খাওয়াবি নাই
কুনুখানে যাওয়াবি নাই
হারাইতাছি সবই কিছু,
কোনো কিছু পাওয়াবি নাই,
পানি বন্ধ- নাই আনন্দ
বাঁইচা আমি মগর
ইমুন খাঁচা বানাও চাচা
গাছবি নাই- ফুল পাইবা কই?
গোলাপ-জবা-টগর।
আমরা আসল ঢাকাইয়্যা
আমরা পুরান ঢাকাইয়্যা
থাকি অহন না খাইয়্যা
তোমরা চলো ঢাকার বুকে
এসি গাড়ি হাঁকাইয়্যা!
আমরা আদি ঢাকাইয়্যা
সকালবেলা বাকরখানি
গুলগুল্লার নাস্তা খাইয়্যা
ফুটানিতে ঘুইরা বেড়াই
মাথার বাবরি ঝাঁকাইয়্যা।
আমরা তো খাস ঢাকাইয়্যা
কোমর ও পিঠ বাঁকাইয়্যা
তোমগো উঁচা দালাল দেহি
অবাকা চোখে তাকাইয়্যা!
পথের মোড়ে পোলাও বেচি
পথের উপর পাকাইয়্যা।
আমরা আসল ঢাকাইয়্যা
গলির মুখে চাপা মারি
গলির পচা চা খাইয়্যা।
নবাবপুরের নবাব
নবাবপুরের নবাব
নবাবী তার স্বভাব
বাপ-দাদারা খাইতো নাকি
রোজ গোস্তের কাবাব,
তুমি কি খাও? কয় না কথা
টেকা পসার অভাব,
কাজ কাজ কি? আয় রুজি?
দেয় না কোনো জবাব,
অহনওবি চলন-বলন
নবাব সাবের স্বভাব
ঘর-বাড়ি নাই, পথেই থাকে
নবাবপুরের নবাব।
ঢাকার পোলা
আমি মগর ঢাকার পোলা
বাড়ি আমার আমলিগোলা
হাজিসাবের বড়ো পোলা
দিলটা উদার খুবই খোলা
আমার লগে জোলাইচ না-
চিনচ লালবাগ কিল্লা?
ধরলে পরে ছিল্লা
তরে খামু গিল্লা,
পাইলে তরে চান খাঁ পুল
টাইনা ধরুম মাথার চুল
আহচ যুদি মতিঝিল
পিঠে দিমু দুইটা কিল,
আইলে পরে বুকে
পোলাও কোর্মা খাওয়ামু বি
থাকবি মনের সুখে,
তরে লয়া নাচুম-গামু
চুম্মা দিমু মুখে।
আন্ডা-বাচ্চা
আন্ডা-বাচ্চার কাউ কাবারি
চিল্লচিল্লি-ক্যাঁচাল
ভিড় যানজট-ঠেলাঠেলি
পুরান ঢাকার প্যাঁচাল।
বুইড়া হইছে-ফালবি গেছে
চোক্ষে মুখে আন্ধার
অখনোবি নাচে-গানে
হুঁশ থাকে না বান্দার
দিলের মাঝে লেংড়ি মারে
মাল কামানো ধান্দার-
অহনো সব খোয়াব দেখে
সুখ-দুঃখের পর্ব
ফুটানিতে ঢাকাইয়্যারা
পুরান ঢাকার গর্ব।
ও ঢাকা ও ঢাকারে
ঢাকেশ্বরীর ঢাকের শব্দ
যেতো দূরে যেতো
ততো দূরের জায়গাজুড়ে
ঢাকা বলা হতো।
ঢাকা নিয়ে এমন তরো
কিংবদন্তি আছে
আণ্টাঘরটা খুঁজে দেখো
লালকুঠির কাছে।
নবাববাড়ী হোসনী দালাল
পুরান ঢাকার বুকে
লালবাগ কেল্লাতে বসে
হাওয়া খাই যে সুখে।
বাহান্ন বাজারের এখন
তিপান্নটা গলি
হারিয়ে গেছে তবু আমরা
গর্বে কথা বলি।
ঢাকাইয়্যা এই উপাধিতে
পাই না শরম লাজ
চারশ বছর পূর্ণ হলো
এই ঢাকাটার আজ।
ও ঢাকা ও ঢাকারে
আমার দিকে তাকারে
রাস্তা আঁকা-বাঁকারে
কিন্তু আকাশ ফাঁকারে
ঘুরছে তবু চাকারে
তোরই বুকে থাকারে
ও ঢাকা ও ঢাকারে।
ঢাকাই ছড়া
ঢাকাইয়া পোলা আমি
লক্ষ টেকা তোলা,
খানাপিনা রাশ বাহারি
দিলটা যিমুন খোলা।
জিন্দেগিটা ফানাফানা
কলজা অইলো তামা,
মাথায় টুপি-গায়ে আমার
শেরওয়ানি জামা।
পুরান ঢাকায় থাকি আমি
বাড়ি আমলিগোলা,
হাজী সামিউল্লাহ্ মিয়ার
আমি বড়ো পোলা।
ঢাকার বুকটা ফাইট্টা যায়
হাইট্টা যায় খাইট্টা খায়
ঢাকা দেইখা ঢাকাইয়্যা গো
বুকটা অহন ফাইট্টা যায়,
যেই দিকে চাই-ঢাকাতো নাই!
উল্টা পাল্টা কারবার
ট্যাক্স-খাজনা বিল বাট্টায়
উপায় দেহি মারবার
হায়রে! ঢাকা-চাইয়্যা থাকি
তোমার দিকে বার বার,
সকাল হয় রাইতটা যায়
সুখের সময় কাইট্টা যায়
ঢাকার গর্ব জাইতটা যায়
ঢাকার বুকটা ফাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় ফাইট্টা যায়...।
ঢাকার লগেই পেয়ার মহব্বত
ঢাকায় আমার জন্ম-বাড়া
ঢাকাই আমার প্রাণ,
শাবিস্তানে ফিলিম দেখি
উর্দুতে গাই গান।
ঢাকার লগেই পেয়ার-মহব্বত
ঢাকার লগেই দোস্তি
লালবাগের ওই কেল্লায় আমি
ঘুমাই পাই স্বস্তি।
আহসান মঞ্জিলে আমি
খোয়াব দেখি শুইয়া
নওয়াব-সুবা বাপ-দাদারা
গেছে আমায় থুইয়া।
কোর্মা-পোলাও-ফিন্নি-পায়েস
কেমতে আমি খাই
ঢাকাইয়্যা শেষ পোলা আমি
জেবে টেকা নাই।
পেয়ারে ঢাকার চাইর শ বছর
আমার নাইকা ঘুম
স্মৃতিগুলো চোখে-মুখে
দিতাছে যে চুম্
দিলে খুশি উথলায়া যায়
ঝুম্ বারাবার ঝুম্।
যাইতাছি...যাইতাছি...
যাইতাছি- যাইতাছি-
কই যাইতাছি
জানি না তো কিচ্ছু,
কেউ আমারে পাগল বি কয়
কেউ আবার কয় বিচ্ছু,
আমার কি দোষ পথ চিনি না
উল্টা পুল্টা ছুটছি
গন্তব্য হারায়া অহন
উন্মাদ হয়া উঠছি,
সত্য না হউক অর্ধসত্য
আমি মগর লেখছি
হেমায়েতপুর-পাবনা-রাঁচী
সবি আমি দেখছি,
যাইতাছি যাইতাছি
ঠুঁয়া থাপ্পর খাইতাছি...
যাইতাছি- যাইতাছি
লাত্থি-গুঁতা খাইতাছি...
যাইতাছি- যাইতাছি
যাইতাছি- যাইতাছি...।
খাস ঢাকাইয়্যা
কালাচানের পোলায় কয়
ঢাকাইয়্যা হাস করবো ভয়
কওতো দেহি কারে?
খাস ঢাকাইয়্যা পোলায় আমি
লক্ষ টেকা তোলা দামি
চেনো কী আমারে?
খান্দানী এই পরিচয়
সেটা হেনো তেনো নয়
তাইরে নাইরে নারে!
চেনো না আমারে?
ঢাকায় আইছো ক্যালা?
: ওই মিয়া-
ঢাকায় আইছো ক্যালা?
: কাম আছে ম্যালা,
মাথায় বড়ো টেনশন
নিবার আইছি পেনশন।
: খাইবার লাগছো বেনসন।
: কি করুম ভাই-
অফিস-আদালত সবি তো ঢাকায়
তাই পাঠাইলো কাকায়,
গাঁয়ে কিচ্ছু নাইক্যা-
কি লাভ গাঁয়ে থাইক্যা?
: অহন কিমুন ঢাকায় আয়া
গেছো মিয়া বাঁইক্যা?
করলা গেঞ্জাম,
বাড়াইলাবি যানজট।
: খাকুম না তাই যামুগা ভাই
ঢাকার বড়ো মাথায় গরম
মেজাজ বড়ো হট।
ঢাকার লগে ভাব নাই
যানজটের ঢাকার বি মা-বাপ নাই
বিষবাষ্পের ঢাকায় থাইকা-
আম গো কুনু লাভ নাই,
বিশুদ্ধ জল-বায়ুহীন এই
ফুল-পাখি-চাঁদ নদীও নেই
সেই ঢাকাটার সঙ্গে আমার
নাইরে কুনু ভাব নাই
ঢাকায় থাইকা লাভ নাই,
মারামারি কাটাকাটি
মিছিল-মিটিং-ফাটাফাটি
বোমাবাজি-লাঠালাঠি-
হাইরাইজে আকাশ ঢাকা
বুঝি না ভাই রাতদিন
জীবনটা যে এখানটাতে
লয়া আছে ফর্মালিন,
তাইতো কুনু লাভ নাই
ঢাকার লগে ভাব নাই।
হইছে যে তৈয়ার
আজাইরা বি চিল্লাচিল্লি ছাড়
জামাত-শিবির যুদ্ধাপরাধী
-নব্য রাজাকার
নাইলে তরা খাইবি অহন ঘার
নতুন প্রজন্মর মুক্তিযোদ্ধা
হইছে যে তৈয়ার
হুন-
করিচ না পুনপুন-
উল্টাপুল্টা করলে তরা
পাইবি না পার কেউ
দিলদার আলীর নেড়ি কুত্তা
করতাছে ঘেউ ঘেউ।
কি লাভ ঢাকায় থাইকা?
ঢাকা শহর আইসা
গেলাম আমি ফাইসা
দম বন্ধ দুর্গন্ধ
ভিড়বাট্টা চুড়িহাট্টা
নাই জীবনের ছন্দ,
কেমতে বাঁচুম হাইসা?
লঞ্চে আইলাম ভাইসা
ঝামেলা বি লাইগা আছে
দেহো বারো মাইসা,
দিলটা খালি কান্দে
যামুগাবি চান্দে
পইড়া গেছি ফান্দে
বউয়ে পোলাও রান্ধে-
মগর শান্তি নাইক্যা
কি লাভ ঢাকায় থাইক্যা?
গর্দান গেছে বাঁইক্যা।
কষ্টে আছে আইজুদ্দিন
কষ্টে আছে আইজুদ্দিন
কিয়ের লাইগা?
ঘুম আহেনা খিদার জ্বালায়
রয় বি জাইগা,
থাকলে অভাব
প্রেমের স্বভাব
হৃদয় থাইকা
যায় ভাইগা,
কষ্টে আছে আইজুদ্দিন
জগৎ হাটে-জীবন কাটে
কাটুক তবে যায় যদ্দিন।
আব্বে
আব্বে-
যাব্বে,
ঠুয়া থাপ্পড় খাব্বে,
পুরান ঢাকায় আইলে-
তেহারি বি খাইলে
এট্টু বি চান্স পাইলে
মইজা উঠচ গাইলে,
গাইল পারলে ঘাড়ে খাবি
ঢাকা ছাইড়া ভাইগ্যা যাবি।
পুরান ঢাকার লালবাগে রই
বাড়ি আমলিগোলা
খাস ঢাকাইয়্যা মানু আমি
সামিউল্লাহর পোলা
রাসবাহারী জীবন আমার
দিলটা মাগার খোলা।
রোজার দিনে রোজা রাখি
ঈদের খুশি বুকে
মিলামিশা থাকি সবতে
আহা কী যে সুখে!
নয়া জামাকাপড় পিন্দা
ঘুরি হাসি মুখে।
সানিউল্লাহ কবি আমি
সবতে ডাকে সানী
দিল খুইলা কোর্মা-পোলাও
সেমাই বাকরখানি
খাইতো দিমু, চাইলে আরও
ফিন্নি ও বোরহানি
আছে বি কোক পানি।
ঈদের ঈদি দিমু আইসেন
দেশরে সবতে ভালোবাইসেন
ঈদ মোবারক বাণী
জানাই আসলাম সানী।
আইলো বচ্ছর চৌদ্দ শ পঁচিশ
গেল বচ্ছর চৌদ্দ শ চব্বিশ
সুখে-দুখে উন্নয়নে ভালোই গেল ইস!
আইলো বচ্ছর চৌদ্দ শ পঁচিশ
বাংলা নববর্ষে দোস্ত শুভেচ্ছা বি লিস।
নয়া ফলে-ফুল-ফসলে
হালখাতা বি লেখ
আবহমান এই বাংলার
মঙ্গল অভিষেক-
শ্রমে ঘামে নয়া কামে
বৈশাখী ওই ঝড়
পোলাপানে গায় বাগানে
‘আম পড় আম পড়’-
ভুরুম আমগো ঘর
সম্প্রীত সুন্দর।
স্বাধীন বাংলাদেশটা আনল
পিতা মুজিবর
সোনার বাংলা গড়তে সবাই
হাতটা শক্ত কর
এই নয়া বচ্ছর!
দেশেই জীবননৌকা বাই
টেকা বি নাই
ঠেকা বি নাই
দেশ-বিদেশে যামু
শাক-মাছ-ভাত ছাইড়া দিয়া
ফাস্টফুড বি খামু
কুনখানে কন পামু?
তাই তো নিজের গাঁয়েই থাকি
মাম্মি বি না, আম্মি বি না
মাকে আমি মা-ই ডাকি
সুখের কুঁড়ে ঘর
আহ কী সুন্দর
তাই ভাবি না পর.
বিদেশ গিয়া
করবি বিয়া
মরবি তোরা মর,
দেশেই জীবননৌকা বাই
ভাটিয়ালি গান বি গাই
শান্তি-সুখের হাওয়া খাই।
ঢাকা ছাইড়া কই যামু?
কন তো চাচা কন মামু
কন তো দেহি কই যামু!
শান্তি খুঁইজা কই পামু?
গাড়ি-ঘোড়া-মানুষ ভিড়
ট্রাফিক জ্যামে প্রাণ অস্থির
মিছিল-মিটিং-ভাঙ গাড়ি
গুলি বোমা দাঙ্গারই-
ভীতি থেকে বাঁচতে চাই
হাসতে চাই নাচতে চাই,
খোলা মাঠ আর গাছও নাই
সত্য কইরা কন তো ভাই
একটু ছায়া কোথায় পাই?
মুক্ত হাওয়া কই পামু
বিশুদ্ধ জল কই খামু
ঢাকা ছাইড়া কই যামু?
জীবন বড় পেরেশান
বিহান বেলায় জাইগা দেহি
ফকফকা আসমান
শুভ আলোয় কাটুক ভালোয়
গাই আনন্দ গান-
পুরান ঢাকায় লাইগা গেছে
আচার অনুষ্ঠান,
বাগ বাগিচায় ফুলবি ফোটে
জুয়ান-বুড়া সবতে জোটে-
সব পেরেশান কামে
ছুটছে ডানে বামে
গাড়ি-ঘোড়ার জামে,
দোকান-অফিস-কোর্টে
পোলা-মাইয়্যা সব ঢাকাইয়্যা
নাক্কে-মুখ্খকে ছোটে
ব্যস্ত হয়া ওঠে,
সদরঘাট আর গুলিস্তান
মুখে দিয়া খিলি পান
ভিড় ঝঞ্ঝাট-ঠেলাঠেলি
জীবন বড় পেরেশান।
ইমুন খাঁচা বানাও চাচা
চান মামু কই রে- চান মামু কই?
পুরান ঢাকার গল্লির মুখে
লাগছে রে হইচই,
আলিশান ওই দালান দিয়া
আসমান ঢাইকা যায়
চান্দের বইন তারা বিবি
করছে রে হায়! হায়!
হাওয়াবি নাই খাওয়াবি নাই
কুনুখানে যাওয়াবি নাই
হারাইতাছি সবই কিছু,
কোনো কিছু পাওয়াবি নাই,
পানি বন্ধ- নাই আনন্দ
বাঁইচা আমি মগর
ইমুন খাঁচা বানাও চাচা
গাছবি নাই- ফুল পাইবা কই?
গোলাপ-জবা-টগর।
আমরা আসল ঢাকাইয়্যা
আমরা পুরান ঢাকাইয়্যা
থাকি অহন না খাইয়্যা
তোমরা চলো ঢাকার বুকে
এসি গাড়ি হাঁকাইয়্যা!
আমরা আদি ঢাকাইয়্যা
সকালবেলা বাকরখানি
গুলগুল্লার নাস্তা খাইয়্যা
ফুটানিতে ঘুইরা বেড়াই
মাথার বাবরি ঝাঁকাইয়্যা।
আমরা তো খাস ঢাকাইয়্যা
কোমর ও পিঠ বাঁকাইয়্যা
তোমগো উঁচা দালাল দেহি
অবাকা চোখে তাকাইয়্যা!
পথের মোড়ে পোলাও বেচি
পথের উপর পাকাইয়্যা।
আমরা আসল ঢাকাইয়্যা
গলির মুখে চাপা মারি
গলির পচা চা খাইয়্যা।
নবাবপুরের নবাব
নবাবপুরের নবাব
নবাবী তার স্বভাব
বাপ-দাদারা খাইতো নাকি
রোজ গোস্তের কাবাব,
তুমি কি খাও? কয় না কথা
টেকা পসার অভাব,
কাজ কাজ কি? আয় রুজি?
দেয় না কোনো জবাব,
অহনওবি চলন-বলন
নবাব সাবের স্বভাব
ঘর-বাড়ি নাই, পথেই থাকে
নবাবপুরের নবাব।
ঢাকার পোলা
আমি মগর ঢাকার পোলা
বাড়ি আমার আমলিগোলা
হাজিসাবের বড়ো পোলা
দিলটা উদার খুবই খোলা
আমার লগে জোলাইচ না-
চিনচ লালবাগ কিল্লা?
ধরলে পরে ছিল্লা
তরে খামু গিল্লা,
পাইলে তরে চান খাঁ পুল
টাইনা ধরুম মাথার চুল
আহচ যুদি মতিঝিল
পিঠে দিমু দুইটা কিল,
আইলে পরে বুকে
পোলাও কোর্মা খাওয়ামু বি
থাকবি মনের সুখে,
তরে লয়া নাচুম-গামু
চুম্মা দিমু মুখে।
আন্ডা-বাচ্চা
আন্ডা-বাচ্চার কাউ কাবারি
চিল্লচিল্লি-ক্যাঁচাল
ভিড় যানজট-ঠেলাঠেলি
পুরান ঢাকার প্যাঁচাল।
বুইড়া হইছে-ফালবি গেছে
চোক্ষে মুখে আন্ধার
অখনোবি নাচে-গানে
হুঁশ থাকে না বান্দার
দিলের মাঝে লেংড়ি মারে
মাল কামানো ধান্দার-
অহনো সব খোয়াব দেখে
সুখ-দুঃখের পর্ব
ফুটানিতে ঢাকাইয়্যারা
পুরান ঢাকার গর্ব।
ও ঢাকা ও ঢাকারে
ঢাকেশ্বরীর ঢাকের শব্দ
যেতো দূরে যেতো
ততো দূরের জায়গাজুড়ে
ঢাকা বলা হতো।
ঢাকা নিয়ে এমন তরো
কিংবদন্তি আছে
আণ্টাঘরটা খুঁজে দেখো
লালকুঠির কাছে।
নবাববাড়ী হোসনী দালাল
পুরান ঢাকার বুকে
লালবাগ কেল্লাতে বসে
হাওয়া খাই যে সুখে।
বাহান্ন বাজারের এখন
তিপান্নটা গলি
হারিয়ে গেছে তবু আমরা
গর্বে কথা বলি।
ঢাকাইয়্যা এই উপাধিতে
পাই না শরম লাজ
চারশ বছর পূর্ণ হলো
এই ঢাকাটার আজ।
ও ঢাকা ও ঢাকারে
আমার দিকে তাকারে
রাস্তা আঁকা-বাঁকারে
কিন্তু আকাশ ফাঁকারে
ঘুরছে তবু চাকারে
তোরই বুকে থাকারে
ও ঢাকা ও ঢাকারে।
ঢাকাই ছড়া
ঢাকাইয়া পোলা আমি
লক্ষ টেকা তোলা,
খানাপিনা রাশ বাহারি
দিলটা যিমুন খোলা।
জিন্দেগিটা ফানাফানা
কলজা অইলো তামা,
মাথায় টুপি-গায়ে আমার
শেরওয়ানি জামা।
পুরান ঢাকায় থাকি আমি
বাড়ি আমলিগোলা,
হাজী সামিউল্লাহ্ মিয়ার
আমি বড়ো পোলা।
ঢাকার বুকটা ফাইট্টা যায়
হাইট্টা যায় খাইট্টা খায়
ঢাকা দেইখা ঢাকাইয়্যা গো
বুকটা অহন ফাইট্টা যায়,
যেই দিকে চাই-ঢাকাতো নাই!
উল্টা পাল্টা কারবার
ট্যাক্স-খাজনা বিল বাট্টায়
উপায় দেহি মারবার
হায়রে! ঢাকা-চাইয়্যা থাকি
তোমার দিকে বার বার,
সকাল হয় রাইতটা যায়
সুখের সময় কাইট্টা যায়
ঢাকার গর্ব জাইতটা যায়
ঢাকার বুকটা ফাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় ফাইট্টা যায়...।
ঢাকার লগেই পেয়ার মহব্বত
ঢাকায় আমার জন্ম-বাড়া
ঢাকাই আমার প্রাণ,
শাবিস্তানে ফিলিম দেখি
উর্দুতে গাই গান।
ঢাকার লগেই পেয়ার-মহব্বত
ঢাকার লগেই দোস্তি
লালবাগের ওই কেল্লায় আমি
ঘুমাই পাই স্বস্তি।
আহসান মঞ্জিলে আমি
খোয়াব দেখি শুইয়া
নওয়াব-সুবা বাপ-দাদারা
গেছে আমায় থুইয়া।
কোর্মা-পোলাও-ফিন্নি-পায়েস
কেমতে আমি খাই
ঢাকাইয়্যা শেষ পোলা আমি
জেবে টেকা নাই।
পেয়ারে ঢাকার চাইর শ বছর
আমার নাইকা ঘুম
স্মৃতিগুলো চোখে-মুখে
দিতাছে যে চুম্
দিলে খুশি উথলায়া যায়
ঝুম্ বারাবার ঝুম্।
যাইতাছি...যাইতাছি...
যাইতাছি- যাইতাছি-
কই যাইতাছি
জানি না তো কিচ্ছু,
কেউ আমারে পাগল বি কয়
কেউ আবার কয় বিচ্ছু,
আমার কি দোষ পথ চিনি না
উল্টা পুল্টা ছুটছি
গন্তব্য হারায়া অহন
উন্মাদ হয়া উঠছি,
সত্য না হউক অর্ধসত্য
আমি মগর লেখছি
হেমায়েতপুর-পাবনা-রাঁচী
সবি আমি দেখছি,
যাইতাছি যাইতাছি
ঠুঁয়া থাপ্পর খাইতাছি...
যাইতাছি- যাইতাছি
লাত্থি-গুঁতা খাইতাছি...
যাইতাছি- যাইতাছি
যাইতাছি- যাইতাছি...।
খাস ঢাকাইয়্যা
কালাচানের পোলায় কয়
ঢাকাইয়্যা হাস করবো ভয়
কওতো দেহি কারে?
খাস ঢাকাইয়্যা পোলায় আমি
লক্ষ টেকা তোলা দামি
চেনো কী আমারে?
খান্দানী এই পরিচয়
সেটা হেনো তেনো নয়
তাইরে নাইরে নারে!
চেনো না আমারে?
ঢাকায় আইছো ক্যালা?
: ওই মিয়া-
ঢাকায় আইছো ক্যালা?
: কাম আছে ম্যালা,
মাথায় বড়ো টেনশন
নিবার আইছি পেনশন।
: খাইবার লাগছো বেনসন।
: কি করুম ভাই-
অফিস-আদালত সবি তো ঢাকায়
তাই পাঠাইলো কাকায়,
গাঁয়ে কিচ্ছু নাইক্যা-
কি লাভ গাঁয়ে থাইক্যা?
: অহন কিমুন ঢাকায় আয়া
গেছো মিয়া বাঁইক্যা?
করলা গেঞ্জাম,
বাড়াইলাবি যানজট।
: খাকুম না তাই যামুগা ভাই
ঢাকার বড়ো মাথায় গরম
মেজাজ বড়ো হট।
ঢাকার লগে ভাব নাই
যানজটের ঢাকার বি মা-বাপ নাই
বিষবাষ্পের ঢাকায় থাইকা-
আম গো কুনু লাভ নাই,
বিশুদ্ধ জল-বায়ুহীন এই
ফুল-পাখি-চাঁদ নদীও নেই
সেই ঢাকাটার সঙ্গে আমার
নাইরে কুনু ভাব নাই
ঢাকায় থাইকা লাভ নাই,
মারামারি কাটাকাটি
মিছিল-মিটিং-ফাটাফাটি
বোমাবাজি-লাঠালাঠি-
হাইরাইজে আকাশ ঢাকা
বুঝি না ভাই রাতদিন
জীবনটা যে এখানটাতে
লয়া আছে ফর্মালিন,
তাইতো কুনু লাভ নাই
ঢাকার লগে ভাব নাই।
হইছে যে তৈয়ার
আজাইরা বি চিল্লাচিল্লি ছাড়
জামাত-শিবির যুদ্ধাপরাধী
-নব্য রাজাকার
নাইলে তরা খাইবি অহন ঘার
নতুন প্রজন্মর মুক্তিযোদ্ধা
হইছে যে তৈয়ার
হুন-
করিচ না পুনপুন-
উল্টাপুল্টা করলে তরা
পাইবি না পার কেউ
দিলদার আলীর নেড়ি কুত্তা
করতাছে ঘেউ ঘেউ।
কি লাভ ঢাকায় থাইকা?
ঢাকা শহর আইসা
গেলাম আমি ফাইসা
দম বন্ধ দুর্গন্ধ
ভিড়বাট্টা চুড়িহাট্টা
নাই জীবনের ছন্দ,
কেমতে বাঁচুম হাইসা?
লঞ্চে আইলাম ভাইসা
ঝামেলা বি লাইগা আছে
দেহো বারো মাইসা,
দিলটা খালি কান্দে
যামুগাবি চান্দে
পইড়া গেছি ফান্দে
বউয়ে পোলাও রান্ধে-
মগর শান্তি নাইক্যা
কি লাভ ঢাকায় থাইক্যা?
গর্দান গেছে বাঁইক্যা।
কষ্টে আছে আইজুদ্দিন
কষ্টে আছে আইজুদ্দিন
কিয়ের লাইগা?
ঘুম আহেনা খিদার জ্বালায়
রয় বি জাইগা,
থাকলে অভাব
প্রেমের স্বভাব
হৃদয় থাইকা
যায় ভাইগা,
কষ্টে আছে আইজুদ্দিন
জগৎ হাটে-জীবন কাটে
কাটুক তবে যায় যদ্দিন।
আব্বে
আব্বে-
যাব্বে,
ঠুয়া থাপ্পড় খাব্বে,
পুরান ঢাকায় আইলে-
তেহারি বি খাইলে
এট্টু বি চান্স পাইলে
মইজা উঠচ গাইলে,
গাইল পারলে ঘাড়ে খাবি
ঢাকা ছাইড়া ভাইগ্যা যাবি।