শরীর ও মন
বিএসএমএমইউতে বিশ্ব স্ক্লেরোডার্মা দিবস পালিত
মানুষের শরীরে ছয় শতাধিক বাতরোগ হতে পারে
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুন ২০১৮, শনিবার, ৪:২০ পূর্বাহ্ন
মানুষের শরীরে ছয় শতাধিক বাতরোগ হতে পারে, স্ক্লেরোডার্মা (ঝপষবৎড়ফবৎসধ) এদের মধ্যে অন্যতম। “স্ক্লেরো” (ংপষবৎড়) শব্দের অর্থ শক্ত, “ডার্মা” (ফবৎসধ) শব্দের অর্থ ত্বক বা চামড়া, “স্ক্লেরোডার্মা” (ঝপষবৎড়ফবৎসধ) শব্দের অর্থ “শক্ত ত্বক বা চামড়া”। এ রোগে সাধারণত ত্বক বা চামড়া শক্ত হয়ে যায়, তবে ত্বকের পাশাপাশি এ রোগে শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে, যদি শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস (ঝুংঃবসরপ ংপষবৎড়ংরং) বলে। আজ শনিবার ‘বিশ্ব স্ক্লেরোডার্মা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত র্যালি ও সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে রোগীদের সঙ্গে সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। র্যালিতে নেতৃত্ব দেন ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া।
চিকিৎসকরা জানান, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি রোগ। আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যা নিজ থেকেই শরীরকে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হঠাৎ যখন পাগলামী শুরু করে এবং নিজেই নিজের শরীরকে আক্রমণ করে বসে তখন এ জাতীয় রোগ হয়। তবে আজ পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোন কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি। এ রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো- শুরুতে হাত ও পায়ের পাতা এবং উপরের তালুসহ আঙ্গুলসমূহ ফুলে যায়, এরপর চামড়া ধীরে ধীরে মোটা এবং শক্ত হওয়া শুরু করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি হাতের কনুই এবং পায়ের হাটু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, কারও কারও ক্ষেত্রে এটি কনুই ও হাটুর উপরিভাগসহ মুখমন্ডল, বুক এবং পিঠের চামড়া আক্রান্ত করতে পারে। পরবর্তীতে আঙ্গুলের মাথাগুলো চিকন হয়ে যেতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে আঙ্গুগুলের মাথায় ঘা হতে পারে। এ রোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা মানসিক বিষন্নতায় হাতের আঙ্গুলসমূহ নীল এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বকের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করতে পারে, যেমন: ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, কীডনি, অন্ত্র ইত্যাদি। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বক আক্রমণ না করেও ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করতে পারে। এ রোগে গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হতে পারে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে রোগীরা সাধারণত অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠেন, সেই সঙ্গে খুসখুসে কাশিও হতে পারে। খাদ্যনালী এবং পাকস্থলি আক্রান্ত হলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে, গলায় খাবার উঠে আসতে পারে ইত্যাদি। অন্যান্য উপসর্গগুলো হলো- গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা, গলায় খাবার উঠে আসা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, কিডনি-জনিত সমস্যার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। আলোচনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্ক্লেরোডার্মা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সুষ্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে এ রোগের রোগের রোগীরা নানাবিধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকেন। এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদী। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা রোগীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে। বিএসএমএমইউ রিউমাটোলজি বিভাগ প্রতি বুধবার স্ক্লেরোডার্মা ক্লিনিকের ব্যবস্থা করে থাকে, যেখানে শুধুমাত্র স্ক্লেরোডার্মা রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আজগর মোড়ল। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. মুজিবর রহমান।