অনলাইন

শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর ভাঙ্গন, আতঙ্কিত কৃষকরা

শাহ্ মোস্তফা কামাল, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে

২৫ জুন ২০১৮, সোমবার, ১২:৫১ অপরাহ্ন

খোয়াই নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লকুড়া, চাঁনপুর, গজারিয়াকান্দি, ধনারআব্দা গ্রামের কৃষকরা। ভাঙ্গনের ফলে এবার এলাকার শত শত কৃষক ইরি-বোর ধান চাষ করতে পারেনি। এর ফলে জমিগুলো পলি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এতে আগামী রোপা, আমন ধান চাষাবাদ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বছর খোয়াই নদীতে পানি বিপদসীমার উপরে উঠে যায়। এই পানি ৪দিন বিপদসীমার উপরে অবস্থান করায় মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গজারিয়াকান্দি ডেপ্পার বিল এলাকা দিয়ে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বাঁধ ভাঙ্গার ফলে গজারিয়াকান্দি, চাঁনপুর, ধনারআব্দা, মির্জাপুর গ্রামের জমিগুলোতে পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। বাঁধ ভাঙ্গনের কারণে যেমন এলাকার মানুষ ‘রোইয়াচ্ছা’ (রোপা আমন) ধান চাষাবাদ করতে পারেনি, তেমনি হবিগঞ্জ মির্জাপুর ভায়া শাহপুর সড়কটির বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে যায়। ফলে ওই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়িত চলাচলকারী চাঁনপুর, শাহপুর, ধনারআব্দা, পাশ্ববর্তীতে বানিয়াচঙ্গ উপজেলার শাহপুর, রতনপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামবাসীকে খোয়াই নদী দিয়ে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জমিগুলোতে বোরো মৌসুমে ইরি ধানও চাষ করতে পারেননি। সম্প্রতি আবারও মির্জাপুরের লম্বাবাগ এলাকা দিয়ে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। জমিগুলোতে মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। তেমনি হবিগঞ্জ মির্জাপুর ভায়া শাহপুর বাজার পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে সেই সড়কটির বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার মানুষকে আবারও নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। নদীর পাড়ে প্রচ- কাঁদা মাটি জমে যাওয়া নারী ও পুরুষদের পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা মাটি মাড়িয়ে নৌকায় উঠতে হচ্ছে। এতে চলাচলে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাঁধ ভেঙ্গে শুধু জমি-জমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, চাঁনপুর গজারিয়াকান্দি অনেক ফিসারী পানিতে তলিয়ে যায়। এতে মৎস্য চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাঁধ ভাঙ্গার ফলে চাঁনপুর, গজারিয়াকান্দি, ধনারসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি পাশ্ববর্তী বানিয়াচঙ্গ উপজেলার কুশিয়ারতলা, নিশ্চিতপুর, কাবিলপুর গ্রাম এলাকা দিয়ে পানি বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি পাওয়া পানি কমে নিচে নামার সাথে সাথে নিশ্চিতপুর ও কাবিলপুর গ্রামের ৫টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। গজারিয়াকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ী ও সেচ প্রকল্পের পরিচালক মো. সাজিদ আলী জানান, গত বছর ডেপ্পার বিল এলাকা দিয়ে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের এলাকার কৃষকরা ‘রোইয়াচ্ছা’ (রোপা আমন) ধান চাষ করতে পারেননি। আমাদের ১০/১২ একর জমিতে ধান চাষ করতে পারিনি। পরবর্তীতে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলোতে ইরি চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। ফলে আমরা সেচ প্রকল্পের মালিকগণ খরচের অনুপাতে যে ধান কৃষকদের কাছ থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি তাতে আমাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবেও কোন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এখন আবার লাম্বাবাগ এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে জমিগুলোতে পলি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এতে সামনে ‘রোইয়াচ্ছা’ চাষাবাদ করতে পারবেন না কৃষকরা। আমরা স্থায়ীভাবে বাঁধগুলো নির্মাণ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহিদুল ইসলাম জানান, চলতি মওসুমে বাঁধ মেরামত করার জন্য বরাদ্দ আসেনি। আগামী শুকনো মওসুমে বাঁধ মেরামত করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করতে পারবে। আমরা কৃষকদের কোন সহযোগিতা করতে পারছি না বা তাদের সহযোগিতা করার কোন সুযোগ আমাদের নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status