বাংলারজমিন

সিদ্ধিরগঞ্জে ঘাতকের স্বীকারোক্তি

উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত ৩ লাশ মা ও তার দুই সন্তানের

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৫ জুন ২০১৮, সোমবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

সিদ্ধিরগঞ্জে পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রথম স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে মায়ের লাশ ড্রামে ভরে এবং দুই সন্তানের লাশ বস্তায় ভরে পৃথক স্থানে ফেলে দেয়া হয়। পুলিশ প্রথমে পৃথকভাবে লাশ তিনটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে। পরে ঘাতক চক্রের একাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পর লাশগুলোর পরিচয় শনাক্ত হয়। নিহতরা হলো- আঞ্জুবী আক্তার (২৮), তার দুই মেয়ে সাত বছর বয়সী মাঈদা আক্তার ও ১৫ মাস বয়সী মাহি। নিহত আঞ্জুবী আক্তার নোয়াখালীর সেনবাগের পদুয়া এলাকার সোলেমানের মেয়ে।
এদিকে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া এক ঘাতক গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে কেন, কী কারণে ও হত্যা মিশনে কে কে জড়িত ছিল তার বিষদ বর্ণনা দেয় আদালতে। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালত ঘাতক সবুজ ওরফে সোহেলের ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এছাড়া অপর ঘাতক মাসুদ দেওয়ানকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আদালত আজ সোমবার তার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
তদন্ত সংস্থার তথ্যমতে, ট্রিপল মার্ডারে হত্যা মিশনে অংশ নেয় নিহত আঞ্জুবী আক্তারের স্বামী মাসুদ দেওয়ান, সতীন শোভা আক্তার ও শোভা আক্তারের চাচাতো ভাই সবুজ ওরফে সোহেল। এরমধ্যে  মাসুদ দেওয়ান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার দক্ষিণ শাশাআলী এলাকার খলিলুর রহমানের পুত্র, শোভা আক্তার মাসুদের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সবুজ ওরফে সোহেল নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানার ফতুয়া এলাকার স্বপন মিয়ার পুত্র।
এ বিষয়ে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মো. শরফুদ্দিন এ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বিবরণ গণমাধ্যমকে জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার (ওসি) আব্দুস সাত্তার, পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপরারেশন) আজিজুল হক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং মসজিদ গলির কবির মিয়ার বাড়ির ছয় তলার পশ্চিম দক্ষিণ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় মাসুদ দেওয়ান। সে তার প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারের অমতে তারই বান্ধবী শোভা আক্তারকে বিয়ে করে। এই বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল। ওই ঝগড়ার জের ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ই জুন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও চাচাতো শ্যালক মিলে বাসায় ডেকে এনে প্রথমে আঞ্জুবী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বড় মেয়ে মাঈদা ও ছোট মেয়ে মাহিকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর আঞ্জুবীর লাশ বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের ড্রামে করে সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি ইরিগেশন খালের পাশে ফেলে দেয়। পরে শিশু দু’টির লাশও ব্যাগে ভরে সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিংয়ের আলী মোহাম্মদের মাছের খামারের পৃথক দু’টি স্থানে ফেলে দেয়। গত ১১ই জুন বিকাল ৫টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি ইরিগেশন খালের পাশ থেকে ড্রামের মধ্যে আঞ্জুবী আক্তারের (২৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গত ১৬ই জুন ঈদের দিন আটি হাউজিংয়ের আলী মোহাম্মদের মাছের খামারে ভাসতে থাকা বস্তাবন্দি অবস্থায় ১৫ মাস বয়সী শিশু মাহির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ই জুন আটি এলাকার একই খামারে ভাসতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শিশু মাইদার (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মো. শরফুদ্দিন জানান, ঘাতক সবুজ ওরফে সোহেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বামী মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অপর ঘাতক দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status