বিশ্বজমিন

বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ছাড়া চীনেও পোশাক শ্রমিকদের ওপর যৌন হয়রানি

মানবজমিন ডেস্ক

২৪ জুন ২০১৮, রবিবার, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

গ্লোবাল লেবার জাস্টিস ও এশিয়ান ফ্লোর ওয়েজ এলায়েন্স সহ শ্রমিক গ্রুপগুলোর একটি জোট গত মাসে শ্রম বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করে। তাতে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ওয়ালমার্টের জন্য যেসব কারখানা পোশাক সরবরাহ দেয় সেখানে যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। ওই রিপোর্টের নাম দেয়া হয়েছে ‘জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ইন দ্য ওয়ালমার্ট গার্মেন্ট সাপ্লাই চেইন’। এতে বলা হয়, নারী শ্রমিকদের কাছে যৌন সুবিধা চাওয়া হয়। এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে অথবা এ নিয়ে কারো কাছে অভিযোগ করছে তাদের ওপর প্রতিশোধ নেয়া হয়। ৬ সপ্তাহের বেশি সময় ৬০ টি কারখানায় ২৫০ জন শ্রমিকের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ওই প্রতিবেদন। এতে গেলো বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার চিত্র। কিন্তু বিশ্বে পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের রপ্তানিকারক দেশ চীনের শ্রম অবস্থা কি? দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেখানেও ওয়ালমার্টের যেসব কারখানা রয়েছে তার অবস্থায় যথেষ্ট ভাল নয়। চীনে ওয়ালমার্টের রয়েছে ৬০০০ এর বেশি সরবরাহকারী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন হংকয় ফ্রি প্রেস। সেখানে দশকের বেশি সময় ধরে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের রিপোর্ট আছে। তাৎক্ষণিকভাবে ২০০৪ সালের ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট এখানে উল্লেখ করা যায়। তাতে বলা হয়েছে, চীনের এসব কারখানায় শিশু শ্রম ও অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে নেয়া হয়। বড়দিনের ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর জন্য যেসব অলঙ্কার লাগে তা ওয়ালমার্টের জন্য তৈরি করে এমন একটি কারখানায় অনুসন্ধান চালানো হয় ২০০৬ সালে। তখন সেখানে দেখা যায়, হাই স্কুলে পড়া কয়েক শত ছেলেমেয়ে সপ্তাহে সাত দিন কাজ করছে। কোলাহলপূর্ণ স্থানে দিনে তারা ১৫ ঘন্টা কাজ করে। সেখানে নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্তা। বিনিময়ে প্রতি মাসে ওইসব শিক্ষার্থী পাচ্ছে প্রায় ১১০ ডলার। এখনও শ্রমিকদের সঙ্কট রয়েই গেছে। চায়না লেবার ওয়াচ নামে একটি সংগঠন ২০০৬ সালে ওয়ালমার্টের জন্য খেলনা তৈরি করে এমন কারখানাগুলোতে অনুসন্ধান চালায়। সেখানে দেখা যায় অবৈধভাবে অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে অনেক কম বেতন দেয়া হচ্ছে। কর্মপরিবেশ অনিরাপদ ও ক্ষতিকর। একই গ্রুপ রান্নাঘরের জিনিসপত্র তৈরি করে এমন কারখানার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে কর্মরত কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের কথা উঠে আসে। সেখানে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়। তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়, যদি কাজ ছেড়ে যায় তাহলে তাদের বেতন আটকে রাখা হবে।
এক বছর আগের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের একটি ওয়ালমার্ট স্টোর থেকে মার্কিন এক নারী একটি পার্স কেনেন। তার ভিতর তিনি হাতে লেখা একটি নোট পান। তাতে লেখা চীনের জেলখানার বন্দি, যারা দিনে ১৪ ঘন্টা কাজ করে এই পার্স বানিয়েছে, তাদেরকে প্রহার করা হয়। এর জবাবে ওয়ালমার্চের একজন মুখপাত্র বলেন, যেসব সরবরাহকারী আমাদের মানকে সমুন্নত রেখে কাজ করে তারাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে মনিটরিং করা হয়। ২০১৩ সালে একটি জরিপ চালানো হয়। তাতে চীনের গুয়াঝু প্রদেশের ১৩৪ জন নারী শ্রমিকের কাছে প্রশ্ন করে জানা যায়, তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই বিরক্তিকর হুইসেলিং, ডাকচিৎকার ও অশালীন কৌতুকের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। শতকরা ৬৬ ভাগ বলেছেন তারা তাদের শরীর নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য শুনেছেন। শতকরা ৩২ ভাগ বলেছেন, তাদেরকে স্পর্শ করা হয়েছে। এসব কারণে শতকরা ১৫ ভাগ তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এ বছরের শুরুর দিকে যখন মি টু আন্দোলন বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পরে তখন ফক্সকন-এর এক কর্মী রিপোর্ট করেন, তার কর্মক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত সব অশালীন আচরণই আছে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে যৌন হয়রানির একটি সংস্কৃতি। বিভিন্ন কারণে চীনা নারীরা এসব হয়রানির বিষয়ে মুখ খোলেন না কখনো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status