বাংলাদেশ কর্নার
বিশ্বকাপ ফুটবল: উপাধি-উপনাম
কাফি কামাল
২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন
সেলেকাও, গাউচো, সামুরাই, সুপার ঈগলস বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে এ রকম ডাকনাম আছে প্রতিটি দেশের। কোন ডাকনাম অতিপরিচিত, কোনটি অখ্যাত। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের কাছে পছন্দের দেশের ডাকনাম প্রিয়জনের মতোই আবেগের। ফুটবল দলগুলোর এ ডাকনামের রয়েছে নানা অর্থ। নামগুলোর উদ্ভব ও চর্চা নিয়েও রয়েছে নানাগল্প। নামগুলোর কোন কোনোটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য আর জাতিগত পরিচয়।
ফুটবল মানেই জাদুকর পেলে, হলুদ জার্সি আর সাম্বা নৃত্যের দেশ ব্রাজিল। বিশ্বফুটবলে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় এই দেশ। বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে অংশ নেয়া একমাত্র দেশ ব্রাজিল পেন্টা জয় করেছে ২০০২ বিশ্বকাপে। মধ্যখানে তিন বিশ্বকাপ পেরিয়ে হেক্সা জয়ের মিশন নিয়ে এবার যাচ্ছে রাশিয়া। নান্দনিক ফুটবলের দেশ ব্রাজিলের ফুটবল দলের রয়েছে তিনটি ডাকনাম। সেলেকাও, কানারিনহোস ও ওরিভার্দেস। সেলেকাও শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই ফুটবল ভক্তদের চোখে ভেসে উঠে ব্রাজিল। সেলেকাও একটি পর্তুগিজ শব্দ। যার অর্থ মনোনীত। বিশ্ব আসরে পাঠানো খেলোয়াড়দের সম্মানিত করতেই শুরু হয় এ শব্দটির ব্যবহার। বর্তমানে ন্যাশনাল টিম শব্দবন্ধটির প্রতিশব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেলেকাও। দেশটির অন্য ‘কানারিনহোস’ উপনামটি এসেছে ক্যানারী পাখি থেকে। ল্যাতিন আমেরিকায় প্রচুর ক্যানারী পাখির বসবাস। ব্রাজিলিয়ানরা দেশের ফুটবল টিমকে আদর করে সে প্রিয় ক্যানারী পাখির নামে সম্মোধন করে। আর জার্সির হলুদ-সবুজ রঙের কারণে তৃতীয় ডাকনামটি হয়েছে ওরিভার্দেস বা হলুদ-সবুজ। ব্রাজিল ফুটবল টিমের প্রতিটি ডাকনাম পর্তুগিজ শব্দে কারণ দেশটি এক সময় ছিল ইউনাইটেড কিংডম অব পর্তুগালের অংশ। আর ব্রাজিল হচ্ছে বিশ্বে সবচেয়ে বিশাল পর্তুগিজ ভাষাভাষী অঞ্চল। বিশ্বফুটবলে শীর্ষ জনপ্রিয় দুই দেশের একটি ল্যাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। ফুটবলের রাজা দিয়াগো ম্যারাডোনা পায়ের কারিকুরিতেই দেশটিকে চিনেছে বিশ্ববাসী। সে পরিচয়কে ক্লাব ফুটবলের মাধ্যমে নতুন মাত্রা দিয়েছেন একজন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের রয়েছে দুইটি ডাকনাম। লা এলবিসেলেস্তে, লা সেলেস্তে ওয়াই ব্লাঙ্কা ও লস গাউচোস। স্পেনিশ ভাষা থেকে এসেছে ডাকনামগুলো। যার প্রথম দুইটির অর্থ সাদা ও আকাশী নীল। আর্জেন্টিনার জার্সির রঙ থেকেই এসেছে এ ডাকনাম। যদিও আর্জেন্টিনার মতো জনপ্রিয় নয় তাদের ডাকনাম। ব্রাজিলের সেলেকাওয়ের মতো পরিচিতও নয়Ñ লা এলবিসেলেস্তে। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অন্য এক নাম লস গাউচোস। স্পেনিশ ভাষায় যার অর্থ দক্ষ-সাহসী অশ্বারোহীবৃন্দ। এককালে আর্জেন্টিনাসহ ল্যাটিনে গাইচো’রা ছিলেন সম্মানিত এবং ক্ষমতাশালী। ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনাও এককালে ঔপনিবেশ ছিল স্পেনের। বিশ্বকাপ ফুটবল বিজয়ী প্রথম দেশ কোনটি? নিশ্চয়ই কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করেই বলতে হচ্ছে উরুগুয়ে। ১৯৩০ সালের প্রথম আসরে যখন দেশটি কাপ জয় করে তখন তার নাম ছিল ভিক্টোরি আর ১৯৫০ সালে দ্বিতীয়বার যখন বিজয়ী হয় তখনও ট্রফিটির নাম ছিল জুলেরিমে। ওয়ার্ল্ড কাপ নামকরণের পর ৬৮ বছরেও দেশটি চ্যাম্পিয়ন তো দূরের কথা রানারআপও হতে পারেনি। ২০১০ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল বিজয়ী ডিয়াগো ফোরলানের মাধ্যমে আবার বিশ্বব্যাপী উঠে আসে উরুগুয়ের নাম। দেশটির দুইটি ডাকনাম লা সেলেন্তে (আকাশী নীল), লস চারুয়াস ও লা র্গ্রারা চারুয়া। চারুয়া হচ্ছে, ল্যাতিনের একটি আমিরেন্ডিয়ান আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী। যারা চার হাজার বছর আগে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দক্ষিণভাগ থেকে উরুগুয়ের দক্ষিণাংশে গিয়ে থিতু হয়েছিল। সে চারুয়া যোদ্ধাদের থেকে উরুগুয়ে ফুটবল টিমের নাম হয়েছে লা র্গ্রারা চারুয়া বা চারুয়াদের নখর। দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যপশ্চিমের দেশ পেরু। আন্দেজ পর্বতমালার শিখর দেশে প্রাচীন ইনকা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি মাচু পিচুর জন্য যার খ্যাতি জগৎজোড়া। দেশটির ফুটবল দলের দুইটি ডাকনাম লা ব্লাঙ্কোইরোজ্জা ও লস ইনকা। পেরুর বেশিরভাগ লোক ইনকা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। সে জাতিগোষ্ঠীর নামে দ্য ইনকা ও পতাকার রঙ থেকে ব্লাঙ্কোইরোজ্জা (লাল-সাদা) নামটি হয়েছে তাদের। বিশ্বকাপের পাগলাটে গোলরক্ষক রেনে হিগোয়েতার কথা মনে পড়ে কিংবা পাখির বাসার মতো ঝাকালো চুলের ভালদেরামার কথা? নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের থিমসং ‘ওয়াকা ওয়াকা’র শিল্পী শাকিরা কিংবা কথাসাহিত্যে জাদুবাস্তবতার রূপকার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে কথা জানেন। ল্যাতিনের এ দেশটি শিল্পসাহিত্য ও ফুটবলের জন্য বিখ্যাত তেমনি কুখ্যাত মাদক আর অস্ত্রবাজির কারণে। দেশটির ফুটবল টিমের দুটি নাম হচ্ছে লা ক্যাফেতেরোস ও লা ট্রাইকালার। বিশ্বের অন্যতম প্রধান কফি উৎপাদনকারী দেশ কলম্বিয়া তাদের ফুটবল দলকে আদর করে সম্মোধন করে লা ক্যাফেতেরোস বা কফি চাষীগণ। আর তিনরঙ্গা পতাকা থেকে এসেছে ট্রাইকালার।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে চারবার করে কাপ জিতেছে ইতালী ও জার্মানী। এবারের আসরে ইতালী নেই। সে হিসেবে সাফল্যের বিচারে শীর্ষদেশ ব্রাজিলকে ছুঁয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে জার্মানীর সামনে। নান্দনিক ফুটবল নয়, পাওয়ার ফুটবলের দেশ জার্মানী। দেশটির ফুটবল টিমের ডাকনাম দুইটি জার্মান ভাষার ডিয়ে ন্যাশনালিলফ (দ্য ন্যাশনাল এলেভেন) ও ম্যাশিনে ম্যানশ্যাফট (মেশিন টিম)। দুইটি নামই দারুণ অর্থবহ। বলা হয়, জার্মানীর জার্সি গায়ে উঠলেই অন্যরকম এক জাতীয়তাবোধ তৈরি হয় দেশটির ফুটবলারদের। সে জাতীয়তাবোধের আবেগীয় ঐক্য থেকেই একটি নাম এসেছে ডিয়ে ন্যাশনালিলফ। অন্যদিকে যন্ত্রের মতো পাওয়ার ফুটবল চর্চার জন্য এসেছে অন্যনাম ম্যাশিনে ম্যানশ্যাফট বা মেশিন টিম। ইংল্যান্ডকে বলা হয় ফুটবলের আবিস্কারক দেশ। ক্লাব ফুটবলে ইংলিশ লীগের রয়েছে দারুন জৌলুস। ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড ফুটবল টিমের প্রতীক তিন সিংহের নামেই ‘থ্রি লায়ন’ খ্যাত দেশটির ফুটবল টিম। কোন দেশের ক্লাব ফুটবল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়? সবারই একবাক্য উত্তর হবে স্পেন। ২০১০ বিশ্বকাপ জয় করেছে ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী এই দেশ। স্পেন ফুটবল দলের ডাকনাম হচ্ছে- লা ফুরিয়া রোজা, লা ফুরিয়া ও লা রোজা। স্পেনিশ শব্দ রোজা অর্থ লাল আর ফুরিয়া অর্থ শিখা। জার্সির লাল রঙ থেকেই স্পেনিশরা তাদের ফুটবল টিমকে ডাকে লা ফুরিয়া রোজা বা লালশিখা। বিশ্বফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দল ১৯৯৮ আসরের বিজয়ী ফ্রান্স। একআসরে সর্বাধিক গোলদাতা জাঁ ফন্টেইন, মিশেল প্লাতিনি কিংবা জিনেদিন জিদানের ভক্তের সংখ্যা নেহাৎ কম নয় বিশ্বব্যাপী। শিল্প-সাহিত্যের আঁতুড়ঘর খ্যাত দেশটির ফুটবল টিমের ডাক নাম লা ব্লুজ বা নীল। অবশ্য এবারের বিশ্বকাপে রঙধনুর সাতরঙের মধ্যে নীল ও কমলার অনুপস্থিতি অনুভব করবে সারাবিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। গ্লি আজ্জুরি ইতালী আর অরেঞ্জ হল্যান্ডের মতো শক্তিশালী এবং সফল দল দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার পেরোতে পারেনি বাছাইপর্বের গেরো। বিশ্বকাপ জয় করতে না পারলেও ফুটবলের অন্যতম দাপুটে দেশ পর্তুগাল। এককালের ঔপনিবেশিক শক্তি পর্তুগাল তাদের ফুটবল টিমকে নাম দিয়েছে সেলেকাও দ্যাস কুইনাস। পর্তুগাল সাম্রাজ্যের প্রতীক কুইনাস পাঁচটি শিল্ড থেকেই এসেছে নামটি। যার অন্য অর্থ হচ্ছে মনোনীত নাবিক। সমুদ্রজয় করে ল্যাতিন থেকে আফ্রিকা, এশিয়ায় ঔপনিবেশ গড়ে তোলা দেশটির ফুটবল টিমের এ নাম সার্থক নাম বটে। ফিফার সদরদপ্তর যেখানে অবস্থিত সে দেশটির নাম সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংক, জেনেভা চুক্তি আর জোট নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে এ দেশের। সুইজারল্যান্ড ফুটবল টিমের ডাকনাম হচ্ছেÑ সুইস ন্যাতি (সুইস ন্যাশনাল), লা নাতি ও রোজ্জুকরোসিয়েতি। রোজ্জুকরোসিয়েতির অর্থ রেড ক্রুসেডারস বা লাল ধর্মযোদ্ধা। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের ফুটবল দলের নাম ডেনিশ ডিনামাইট। ২০১৮ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ রাশিয়ার ফুটবল দলটির নাম বরনায়া বা দ্য ন্যাশনাল টিম। নিশিথ সূর্যের দেশ নরওয়ে ফুটবল দলের নাম দ্রিল্লোস। পূর্ব ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়াকে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেন ১৯৯৮ বিশ্বকাপের গোল্ডেন স্যু বিজয়ী ডেভর সুকার। ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দলের ডাকনাম ভাতরেনি বা দ্য ব্লেজারর্স। রীতিমতো ফুটবল বিপ্লব করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আসরে জায়গা করে নিয়েছে ওয়েস্ট নরডিক দেশ আইসল্যান্ড। পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্রজাতির দেশ মাত্র তিন লক্ষ জনসংখ্যার আইসল্যান্ড। ইংরেজির প্রবাদ ‘কোয়ানটিটি নট কোয়ালিটি ম্যাটারর্স’ কথাটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছে এই দেশ। দেশটির ফুটবল দলের আদুরে নামÑ স্ট্রাকারনির ওক্কার বা আওয়ার বয়েজ। ইউরোপের এককালের অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দল ছিল সুইডেন। পরপর দুই বিশ্বকাপ আসরের বাইরে থাকার পর আবারও ফিরে এসেছে দেশটি। সুইডেন ফুটবল টিমের উপনাম ব্লাগুল্ট বা নীল-হলুদ। ফুটবল টিমের লগো ও জার্সির রঙ থেকেই তাদের এ নামকরণ। ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী বেলজিয়াম ফুটবল দলের উপনাম তিনটি। সেগুলো হচ্ছে ডে রোডে ডুইভেলস, লেস ডিয়াবলেস রোজেস ও ডাই রোটেন টেউফিলস। ফ্রেঞ্চ, ডাচ ও জার্মান ভাষায় তিনটি নামেরই অর্থ এক দ্য রেড ডেভিলস।
বিশ্বকাপে এশিয়ার সবচেয়ে সফল দল দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির ফুটবল টিমের ডাকনাম হচ্ছে তেগুক জিওনসা (তেগুক ওয়ারিয়স), তেগুক টাইগারস ও রেড। তেগুক শব্দটির উৎপত্তি চীনা শব্দ তাইজি থেকে। যার অর্থ সর্বোচ্চ চূড়ান্ত। তেগুক ওয়ারিয়রস মানে সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। নিজেদের দেশের ফুটবল টিমকে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাই মনে করে দক্ষিণ কোরিয়রা। বাঘের ছবিযুক্ত ফুটবল লগোতে দেশটি দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের দলকে সেরা বাঘ ও জার্সির রঙে লাল বলেও ডাকে। বিশ্বকাপে এশিয়ার দেশ বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু জাপান। দেশটির ফুটবল দলের নাম ব্লু সামুরাই। জাপানের প্রাক-শিল্পাঞ্চল যুগের সামরিক বাহিনীর সদস্য বা জাপানী যোদ্ধাদের বলা হতো সামুরাই। জাপানী ক্রিয়াবাচক শব্দ সাবুরাই থেকে উৎপত্তি সামুরাইয়ের মূল অর্থ কাউকে সেবা করা। পরে বিশেষ যোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় শব্দটির অর্থ। প্রাচীন জাপানী সমাজে অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও মর্যাদাবান ছিলেন সামুরাইগন। কোন সামুরাই পরাজিত বা অসম্মানিত হলে পেট চিরে আত্মহত্যা করতেন। সে ক্ষমতাশীল ও সম্মানিত যোদ্ধাদের নামেই নিজ দেশের খেলোয়াড়দের সম্মোধন করে জাপান। আগে ওশেনিয়া অঞ্চলের হয়ে বাছাইপর্বে অংশ নিলেও এখন থেকে এশিয়ার প্রতিনিধি করছেন অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট বিশ্বের প্রধানতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের ডাকনাম সকারুজ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর দক্ষিণ ভিয়েতনামে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল যখন একটি সৌজন্যে সফরে যায় তখন টার্মটি ব্যবহার করেন দেশটির সাংবাদিক টনি হর্সটেইট। অবশ্যই দেশটিতে ফুটবলকে আখ্যায়িত করা হয় সকার এবং সেখান থেকেই এসেছে ডাকনাম সকারুজ। এশিয়ার দেশ ইরানের ফুটবল দলের রয়েছে দুইটি ডাকনাম টিম মেল্লি। কিন্তু তাদের শাহজাদেগান-ই-প্রিন্সেস অব পার্সিয়া বা পারস্যের রাজপুত্র বলেও সম্মোধন করা হয় ইরানে। বিশ্বখ্যাত একটি শিকারী পাখির নাম ঈগল। বিশ্বকাপ ফুটবলের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের ফুটবল দলকে ঈগল সম্মোধন করেন। আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া বিশ্বকাপে একটি শক্তিশালী দেশ। ফুটবল পরাশক্তিগুলোও সমঝে চলে এ দেশকে। নিজ দেশের ফুটবল টিমকে তারা আখ্যায়িত করে সুপার ঈগল। দেশটির প্রথম ডাকনাম ছিল রেড ডেবিলস। পরে জাতীয় পতাকার সবুজ রঙের কারণে নাম হয় গ্রীণ ঈগল। কিন্তু ১৯৮৮ সালের আফ্রিকান ন্যাশনাল কাপের ফাইনালে বিতর্কিত পরাজয়ের পর তারা নাম পাল্টে রাখেন সুপার ঈগল। অবশ্য দেশটির যুবদলটির নাম ফ্লাইং ঈগল। অন্যদিকে ইউরোপের ছোট দেশ সার্বিয়ার ফুটবল দলটির ডাকনাম অরলোভি বা হোয়াইট ঈগল। পোল্যান্ডের ফুটবল দলের ডাকনাম ওরলি বা ঈগল। আবার এশিয়ার দেশ সৌদি আরবের ফুটবল দলের ডাকনাম গ্রীন ফ্যালকন বা সবুজ বাজপাখি। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ও সপ্তাচার্যের একটি পিরামিডের জন্য বিখ্যাত আফ্রিকার দেশ মিশর। এবারের বিশ্বকাপে দেশটির প্রতি ফুটবলপ্রেমীদের আলাদা মনোযোগ টেনেছে আফ্রিকান মেসি খ্যাত মোহাম্মদ সালেহ। মিশর ফুটবল দলের ডাকনাম ফারাও বা ফেরাউন। প্রাচীন মিশরের শাসকরা ফেরাউন নামে খ্যাত ছিলেন। ফেরাউনদের বলা হতো দেবতা ও জনগণের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী। উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মরক্কোকে ফুটবল বিশ্বে পরিচিত এনে দেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপের তারকা মুস্তাফা হাজি। দেশটির ফুটবল টিমের উপনাম অ্যাটলাস লায়ন। আফ্রিকার পশ্চিমপ্রান্তে উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব উপকূলের দেশ সেনেগাল। দেশটির ফুটবল দলের নাম লেস লায়ন ডে লা তিরাঙ্গা বা তিরঙ্গা সিংহ। আফ্রিকার দুইটি বড় দেশ লিবিয়া ও আলজেরিয়ার মধ্যখানে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ তিউনেসিয়া। দেশটির ফুটবল টিমের নাম হচ্ছেÑ ঈগল অব চার্থাজ। ল্যাতিন শব্দ চার্থাজ এর অর্থ নতুন শহর। মানে নতুন শহরের ঈগল। চার্থাজ শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশটির একটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠার গল্প।
মায়া সভ্যতা, শিল্পসাহিত্য, ফুটবল আর মাদক চারটি কারণে বিশ্বব্যাপী পরিচিত আমেরিকার প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো। দেশটির ফুটবল দলের ডাকনাম এল ট্রাই বা ত্রিরঙা। পতাকা ও জার্সির রঙ থেকেই এ নামের উদ্ভব। উত্তর আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার ফুটবল দলের রয়েছে চারটি ডাকনাম। সেগুলো হচ্ছে লা সেলে (মনোনীত), লা মুয়েরর্তে (মৃত্যু), লা ট্রাইকালার (ত্রিরঙ্গা) ও লস টিকোস। লস টিকোস এটি কোস্টারিকায় ব্যবহৃদ একটি আদিবাসী টার্ম। দুই আমেরিকা মহাদেশের সংযোগভূমি পানামা। সাম্প্রতিক সময়ে পানামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে পেপার্স কেলেংকারি। পানামা ফুটবল দলের ডাকনাম হচ্ছে- লস কেনেলারোস (ক্যানেল ম্যান) ও লা মারিয়া রোজা (রেড)। যে দেশের বুক চিরে পানামা ক্যানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর সে দেশের ফুটবল দলের ক্যানেলম্যান ডাকনাম সত্যিই অর্থবহ।
রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথমপর্বে গাইচোদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামবে সুপার ঈগল, আওয়ার বয়েজ ও দ্য ব্লেজারস। সেলেকাওদের সঙ্গে লড়বে রেড ক্রুসেডার্স, হোয়াইট ঈগল ও টিকোরা। মেশিন টিমের মুখোমুখি হবে তেগুক যোদ্ধা, ত্রিরঙা আর নীল-হলুদ। সামুরাইদের সঙ্গে লড়বে ঈগল, ত্রিরঙা সিংহ, কফি চাষিরা। চারুয়া যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে ফেরাউন, সবুজ বাজ ও ন্যাশনাল টিম। লালশিখার উত্তাপের সঙ্গে লড়বে মনোনীত নাবিক, অ্যাটলাসের সিংহ আর পারস্যের রাজপুত্ররা। নীলের জগতের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ইনকা, সকারুজ আর ডেনিশ ডিনামাইট। রেড ডেবিলদের বিরুদ্ধে ফুটবল যুদ্ধে নামবে ক্যানেল ম্যান, নতুন শহরের ঈগল আর ত্রি লায়ন। নকআউট পর্বে কার সঙ্গে কার লড়াই অনিবার্য হয়ে পড়বে সেটা বলে দেবে সময়।