এক্সক্লুসিভ

খ্রিষ্টান মিশনে অনিয়ম-পর্ব ৩

আর্থিক ঝুঁকিতে ৫শ’ পরিবার

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

বগুড়া খ্রিষ্টান মিশনের চলমান দুর্নীতি এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পথে বাসার উপক্রম হয়েছে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৫শ’ খ্রিষ্টান পরিবার। প্রতিবছর আমেরিকা এই মিশনের মাধ্যমে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে পর্যাপ্ত অর্থ দিয়ে আসছে। সেই অর্থেই এই অঞ্চলের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পরিবার চলে আসছে। শিক্ষা, অন্ন বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে এই মিশন। ১৮৯৮ সালে যীশু খ্রিষ্টের ধর্ম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্য নিয়ে এদেশের সবচেয়ে বড় চার্চেস অব গড মিশন বগুড়ায় যাত্রা শুরু কর্‌ে আমেরিকান জেনারেল কনফারেন্সের সিদ্ধান্তে হোম বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন বগুড়া শহরের সূত্রাপুরে ২০ একর জমির উপর চার্চেস অব গড মিশনের কার্যক্রম শুর হয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উপাসনার জন্য ১৯০৫ সালে এ মিশনের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয় উপাসনালয়। মিশনের কার্যক্রম শুধু ধর্ম প্রচার ও প্রসারের মাঝেই থেমে থাকেনি। স্বল্প খরচে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯০৫ সালে স্থাপন করা হয় খ্রিষ্টান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা এ অঞ্চলের অনেককেই শিক্ষার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শিক্ষার পাশাপাশি স্বল্প খরচে অবহেলিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে এ মিশন চত্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয় খ্রিষ্টান মিশন হাসপাতাল। আমেরিকান মিশনারি মি. ভায়ালো জি কোভার প্রথমে এ মিশনের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে একই সঙ্গে মিশনারি ও হাসপাতাল দু’টোরই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আরেক আমেরিকান এ অঞ্চলের আধুনিক চিকিৎসার রূপকার খ্যাত ডা. ইভা ফেডালিয়া গিলবার্ট। মিশনের এই সেবার ধারাবাহিকতা চলে ২০০০ সাল পর্যন্ত। তার পর আস্তে আস্তে ফাটল ধরতে থাকে মিশনে। বর্তমানে সেই ফাটল মারাত্মক আকার ধারণ করছে। নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৫শ’ খ্রিষ্টান পরিবার। যদিও এই সমস্যার সমাধানের জন্য বর্তমান খ্রিষ্টান চার্চ অব গড মিশনের মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সাধারণ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন।
সেবার মধ্য দিয়ে খ্র্রিষ্টান মিশন তাদের ধর্ম প্রচারের কাজ করে আসছে দীর্ঘ প্রায় সোয়া শ’ বছর ধরে। এতে অর্থ দিয়ে আমেরিকা পরিচালিত চার্চেস অব গড মিশন। এই মিশনের অর্থ লুটপাট করার জন্য সম্প্রতি নেতৃস্থানীয় কিছু খ্রিষ্টান নেতা নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিশেষ করে বগুড়া খ্রিষ্টিয়ান হাসপাতালের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি রেভা. জন আগস্টিন বিশ্বাস, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. রিতা মণ্ডল, সদস্য ডা. মো. রেজাউল করিম, পরিচালক ডা. সুপ্রতীক খাগ্রা, সদস্য মিসেস সলিতা আরেং ও আরেক সদস্য মিস্টার চন্দন চৌধুরীকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখছেন খ্রিষ্টান চার্চ অব গড মিশনের মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান। তিনি ইতিমধ্যেই এসব নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে জেলা বগুড়ার যুগ্ম জজ আদালত-১ এ একটি মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়ে চার্চেস অব গড মিশনের নীতিমালার বাইরে এসব নেতারা ইচ্ছেমতো অপকর্ম করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে এই মিশনের খুঁটিনাটির খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমান মিশন চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। তাদের নিজের মধ্যে চলমান বিবাদে চরমভাবে আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে এখানকার সাধারণ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। তারা অভিযোগ করছে নেতৃত্ব পর্যায়ের গুটি কয়েক খ্রিষ্টান নেতা সুবিধা ভোগ করছেন। তারা সাধারণ খ্রিষ্টানদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি পক্ষ ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মিশনের কার্যক্রম। যদি এই অবস্থার পরিবর্তন না হয়, তাহলে আমেরিকা হয়তো তাদের অর্থ দেয়া থেকে সরে যেতে পারে। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে মিশনের কার্যক্রম। আর ষড়যন্ত্রকারীরা এমনটাই চাচ্ছে। আমেরিকা এই মিশন বন্ধ করে দিলে মিশনের স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি রাতারাতি তারা দখল করে নেবে ক্ষমতার জোরে। বিশেষ করে মিশন হাসপাতাল ইতিমধ্যেই একটা পক্ষ দখল করে ইচ্ছেমতো বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে এই মিশনকে ধ্বংসের মিশনে মাঠে নেমেছে। তারা এই উত্তরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক খ্রিষ্টান পরিবারকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমেরিকা তাদের এই ষড়যন্ত্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেনও তিনি উল্লেখ করেন। অপরদিকে বরাবরের মতোই মিশন হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. রিতা মণ্ডল এসব বিষয়ে মুখ খোলেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status