প্রথম পাতা

ভ্লাদিমির পুতিনই যেখানে তারকা

সামন হোসেন, মস্কো (রাশিয়া) থেকে

২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

দুনিয়ার আর কোনো দেশে এমন দৃশ্য দেখা যায় কি-না কে জানে? মস্কোয় পা ফেলতেই বিষয়টি চোখে পড়ে। বিমানবন্দর থেকে  বিপণীবিতান সর্বত্র ভ্লাদিমির পুতিনের ছায়া। তার ছবি বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
মার্চে অনুষ্ঠিত রাশিয়ার সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৭৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন পুতিন। ২০১২ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি ভোটে জয়ী হন তিনি। শেষবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিন পেয়েছিলেন ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে পুতিনের উপর বেজায় খুশি এদেশের জনগণ। তাকেই আসল তারকা মনে করেন তারা। তারা মনে করে সোচিকে অলিম্পিক আয়োজন করে রাশিয়ার মাথা যেমন বিশ্ব দরবারে উঁচু হয়েছে। বিশ্বকাপে সেটা ছাড়িয়ে যাবে।
১৯৯৯ সাল থেকে রুশ রাজনীতিতে পুতিনের নামটি উচ্চারিত হয়ে আসছে। তবে গত ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উচ্চারিত হয়ে আসছে পুতিনের নাম। সিরিয়া-ইরান নিয়ে মার্কিন রাজনীতির বিপরীতে রাশিয়ার সক্রিয় তৎপরতা এবং সস্প্রতি ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়ার আলাদা হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে পুতিনের অবস্থান শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এসব কারণেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে দেখছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পুতিন অনেক ক্ষমতাধর হওয়ার পরেও কিন্তু সমালোচনা তার পিছু ছাড়ে না। কিছুদিন আগে ইংল্যান্ড এ রাশিয়ার সাবেক গুপ্তচরকে রাসায়নিক বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়। এজন্য ইংল্যান্ড রাশিয়াকেই দুষছে। বরাবরের মতই রাশিয়া এর দায়ভার অস্বীকার করে আসছে। ইংল্যান্ড তার দেশের মাটিতে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি হিসেবে রাশিয়ার ২২ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। বিশ্বকাপে আয়োজনেও এর প্রভাব পরেছে। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশতো বিশ্বকাপ বয়কটেও হুমকি দিয়েছিল। পুতিন ছিলেন বলে নাকি এসব নিয়ে রাশিয়ানরা একটুও ভয় পাননি। সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে সফল একটি বিশ্বকাপ আয়োজনে পুতিনকে বাহবা দিচ্ছেন এখানকার জনগণ। তাদের কাছে সবেচেয় খুশির খবর রাশিয়া দলও ভালো করছে। এর কৃতিত্বও প্রেসিডেন্টকে দিচ্ছেন তারা।
পুতিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে রাশিয়াতে কাজ করা অনেক কঠিন বিষয়। অন্যান্য বিরোধী নেতাদের মতো অ্যালেক্সি নাভালনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে অনুমোদনবিহীন নির্বাচনবিরোধী গণজমায়েত করার জন্য তিনিসহ প্রায় ৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আবার দণ্ডিত করে নির্বাচনে অযোগ্য করে রেখেছে পুতিন সরকার।
এত কিছুর পরেও পুতিনের জনপ্রিয়তা কমছে না। তরুণরা মনে করেও পুতিনের মতো এখনো হয়তো কেউ রাশিয়ার আশাপ্রদ ভবিষ্যৎ দেখাতে পারেনি। তাদের মতো এখনো পুতিনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর থেকেই রাশিয়া একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিচয় পাচ্ছিল। সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর এলোমেলো রাশিয়াকে যদি কেউ আজকের অবস্থানে নিয়ে আসে তাহলে পুতিন এর অবদানের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি যেমন চেচনিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করতে পেরেছেন তেমনি রাশিয়ার মানুষের মনে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসও তৈরি করেছেন।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার দরুন তিনি এমন এক প্রভাব বিস্তার করেছেন যে নেতা বলতে সবাই তাকেই মনে করে। পুতিন বেশ যত্ন করে তার ছবি মিডিয়াতে প্রকাশ করেন। মাঝে মাঝে সেই ছবি বিক্রি হয় বিভিন্ন জায়গায়। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্থাপনায় টানানো হয়েছে পুতিনের সেই সব ছবি। যেমন কখনো শক্তিশালী বাঘের সঙ্গে, ঘোড়ার উপর চড়ে খালি গায়ের ছবি অথবা ধর্মীয় কারণে ভয়াবহ ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা- এগুলোর মাধ্যমে তিনি একটা বিশেষ পরিচয় জনগণের সামনে তুলে ধরেন। পুতিন এমনিতে প্রচণ্ড পরিশ্রমী। নিজে পরিশ্রম করে দেশের জনগণকে পরিশ্রমী করে তুলতে অনুপ্রেরণা জোগান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status