এক্সক্লুসিভ

গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ হাসান সরকারের, গুজব রটানোর অভিযোগ জাহাঙ্গীরের

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর ৪ দিন। ভোর থেকে রাত অবধি চলছে মিছিল- মিটিং, গণসংযোগ আর মাইকিং। ভোটারদের মন জয় করতে নানা কর্মসূচিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। দলীয় মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। খুলনার নতুন বিজয়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে পাশে নিয়ে শেষ মুহূর্তে ভোট চাইতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরুর অভিযোগ তুলছেন বিএনপির প্রার্থী। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি দল। বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকারের অভিযোগ, বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৮ নেতাকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারে নির্বাচনী কর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন বলে হতাশা প্রকাশ করে তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, ভোটারদের আতঙ্কিত করতে গুজব রটাচ্ছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেছেন, জনসম্পৃক্ততা না থাকার কারণেই একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে শুরু করে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ডুয়েট, জয়দেবপুর, হাড়িনাল, ধীরাশ্রম ও আশপাশের এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন। প্রচারণায় পরিকল্পিত, আধুনিক ও নিরাপদ নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবার ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। শ্রমিকবান্ধব নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। গত নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত বিএনপির মেয়রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে নগরে কোনো উন্নয়নই হয়নি। যে কারণে জলাবদ্ধতা ও যানজটে অচল হয়ে থাকে নগর। তিনি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় নানা সমস্যার সমাধান করে ব্যাপক উন্নয়ন করতে চান চীন ও জাপানের সহযোগিতায়। নির্বাচনের মাত্র নব্বই দিনের মধ্যেই অনেক সমস্যার সমাধান ও ব্যাপক উন্নয়ন করতে না পারলে ভোটের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর জবাব দেয়ার কথাও বলেন ভোটারদের উদ্দেশ্যে। এ সময় তিনি দাবি করেন, যারা সন্ত্রাসী তাদেরকেই শুধু গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার সকালে তাঁর টঙ্গীর বাসায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে হাসান উদ্দীন সরকার সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের ছেড়ে না দেয়া হলে, এমনকি নির্বাচন কমিশন মতবিনিময় সভায় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে দলীয়ভাবে বা আমি এককভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। পরে, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে গ্রেপ্তার করা নেতা কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। দুপুরে তিনি নগরের কোনাবাড়ি থেকে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, জেলা হেফাজতের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিনসহ ২০ দলীয় জোট নেতারা।
মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি নিজ দলের পক্ষে মাঠে নামছেন সমর্থকরাও। দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন দল ও জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা। খুলনা সিটির বিজয়ী মেয়র প্রার্থী গাজীপুরে এসে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে হাড়িনাল, ছায়াবীথিসহ বিভিন্নস্থানে নির্বাচনী গণসংযোগ করে পথসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
কেন্দ্রীয় নেতারা তুলে ধরছেন তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নেমেছেন ১৪ দলীয় জোট নেতারা। সাম্যবাদী দলের নেতা সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টি নেতা ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার, আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও জাসদসহ জোটের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দুপুরে চান্দনা স্কুলে নির্বাচনী বৈঠক হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন প্রচারে নেমে তাদের দলের নেতাদের হয়রানি ও নানা শঙ্কার বিষয় তুলে ধরে নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নগরের শালনা, দেশিপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় নির্বচনী পথসভায় বক্তব্য রাখেন। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে সিটির বিভিন্ন এলাকায় নৌকা ও ধারেন শীষ মার্কার প্রার্থীর পক্ষে তারা এই প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই ভাবে দুই দল ও জোটের আরো বেশিসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছক করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে ভোট চাইবেন ২৪শে জুন পর্যন্ত। আগামী ২৬শে জুন অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি নির্বাচন উপলক্ষে দিন-রাত প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।
ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী মিডিয়া সেল প্রধান ডা. মাজহারুল আলম জানান, বুধবার বিকালে গাজীপুরে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রার্থীদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতবিনিময় সভার পর রাতে ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় বিএনপির অন্তত ৮ জন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তিনি জানান, কাশিমপুর অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহীন, কেন্দ্র সচিব শাহজাহান ডিলার, কোনাবাড়ি কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় বিএনপি নেতা ডা. মিলন, কেন্দ্র আহ্বায়ক ছাত্রদল নেতা মিলন মিয়া ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য তাইজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বালিয়ারা কেন্দ্র কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ, কাউলতিয়া অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কেমিটির সদস্য শাহ আলম, টঙ্গীর মরকুনে ৪৭নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আবু সায়েম, পূবাইল অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ইছালী গ্রামের আব্দুস সামাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার বলেন, পোলিং এজেন্টরা যাতে কেন্দ্রে না যায়, সেজন্য সাদা পোশাকে পুলিশ কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। পুলিশ নগরীর প্রত্যন্ত কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি অঞ্চলের কেন্দ্রগুলো দখলের নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ইতিপূর্বে কাশিমপুর অঞ্চলের ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিটার্নিং অফিসারের কাছে পুলিশি হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশি হয়রানি থামছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল। তিনি মনে বলেন, প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও সাড়ে ১১ লাখ ভোটারকে নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচনের শেষ দিকটায় এসে পুলিশকে অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন না করার আহ্বান জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মী বিবেচনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনের পক্ষে প্রচারণায় স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন। প্রচারণায় অংশ নিলেন দলের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সকাল ১০টা থেকে মেয়র পদপ্রার্থী নাসির উদ্দিনের পক্ষে নগরীর টঙ্গী বাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কেএম আতিকুর রহমান, ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফসহ অন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status