বাংলারজমিন

বদরগঞ্জে ভালো রাস্তা কেটে কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন!

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

 তড়িঘড়ি করে কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে রংপুরের বদরগঞ্জে ঘাস লাগানো ভালো রাস্তা কেটে-ছেঁটে সামান্য মাটি দিয়ে ভরাট করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অভিযোগ উঠেছে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও তারা ওই সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না। তবে, প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে অফিসে বসে প্রকল্পের অর্ধেক চাল ছাড় দিয়েছেন। বুধবার সকালে সরজমিন দেখা গেছে, ওই ওয়ার্ডের ফেডারেশনপাড়া হতে বুদুরডাঙ্গাপাড়া পর্যন্ত ৬শ’ মিটার দীর্ঘ রাস্তায় কাবিখা প্রকল্পের আওতায় মাটি কাটার কাজ চলছে। সেখানে শুধু দুইজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। তারা রাস্তার দু’ধারের ঘাস কোদাল দিয়ে তুলে ফেলছেন। রাস্তার শক্ত মাটি তুলে সমান করছেন। কোথাও কোথাও রাস্তার ঘাস তুলে পুনরায় রাস্তার ধারে লাগানো হচ্ছে। ছবি ক্যামেরা বন্দি করতে গেলে ওই দুই শ্রমিক বলেন, ‘স্যার ঘাস তুলে রাস্তার সৌন্দর্য্য আনুছি। রাস্তার মাঝেও কোদাল দিয়া খুঁড়ি (আলগা) সমান করুছি। সৌন্দর্য্য না হইলে মেম্বার হামাক টাকা দিবার নেয়।’ তারা আরো বলেন, ‘আমরা দশ দিন ধরে ১০-১২ জন শ্রমিক এই কাজ করে আসছি। আইজ আবহাওয়া খারাপ থাকায় কেউ কাজে আসেনি। আমরা দু’জনেই কাজ করছি।’ ওই দুই শ্রমিকের নাম রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও রবিউল ইসলাম (৩৫)। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভালো রাস্তা কেটে-ছেঁটে মজুরি পান ৩০০ টাকা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাবিখার (সাধারণ) ওই প্রকল্পের সাড়ে ছয় টন চাল বরাদ্দ হয়। ওই চালের সরকারি মূল্য দুই লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পের চেয়ারম্যান সাইদুল হক সাড়ে তিন টন চাল উত্তোলন করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ মিটার দীর্ঘ ভালো রাস্তার শক্ত মাটি আলগা করে সমান করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ হচ্ছে চলাচলের অনুপোযোগী রাস্তার মাটি ভরাট করা। কিন্তু ওই রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তাটি আগে থেকেই ভালো ছিল। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে সেখানে মাটির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু সেই ভালো রাস্তার মাটি কোদাল দিয়ে আগলা করায় সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকই বলছেন, রাস্তার দুই পাশের ঘাস তুলে ফেলায় একটু বৃষ্টি হলে তা ভেঙে যাবে।
এ নিয়ে ওই রাস্তার প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই এখন বর্ষার সময় রাস্তায় দুই পাশের জমিতে পানি জমে আছে। কোথাও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। ৩০শে জুনের মধ্যে পিআইওকে কাজ দেখাতে হবে। তা না হলে প্রকল্পের সব টন ছাড় দেবে না। এ কারণে আপাতত শ্রমিক দিয়ে রাস্তার মাটি তুলে সমান করে দিচ্ছি। রাস্তার দুই পাশের ঘাস তুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘাসের কারণে নতুন মাটি বসবে না। তাই তুলে ফেলছি।’
তবে, ওই ইউনিয়নের অপর দুই ইউপি সদস্য জানান, ‘পিআইও অফিসে যেকোনো প্রকল্পের টন বা টাকা নিতে গেলে পিআইওকে দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ পর্যন্ত দিতে হয়। আর এই কাজের জন্য পিআইও এক দালালকে অফিসে অস্থায়ীভাবে রেখে দিয়েছেন। ওই দালাল অফিসের এসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তা না হলে বিভিন্ন অজুহাতে ওই দালালের কথামতো প্রকল্প আটক করে দেন পিআইও। শতভাগ কাজ বুঝে নিয়ে প্রকল্প ছাড় দেন। ঝামেলা এড়াতে সেখানে ঘুষ দিয়ে প্রকল্পের চেয়ারম্যানেরা ইচ্ছামতো কাজ করেন।’   উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভালো রাস্তার মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করতে মেম্বারকে প্রকল্প দেয়া হয়নি। যদি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তবে, ঘুষ নেয়ার ও অফিসে দালাল রাখার অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।  এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনই দেখছি। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ওই প্রকল্প চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status