শেষের পাতা
বছরে রক্তের অভাবে ৫৫ হাজার মৃত্যু
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
মাহমুদা ইয়াসমিন। বয়স ৩০ বছর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। তাই তার রক্তের প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। মাহমুদা ইয়াসমিনের আত্মীয় ইকবাল জানান, এক ব্যাগ রক্তে যদি কারো উপকারে আসে তাহলে সকলের উচিত তাতে এগিয়ে আসা। আরেক রোগী শিশু ফরহাদ। প্রতি মাসে এক ব্যাগ করে রক্ত নিতে হয় তাকে। এভাবে রক্ত নিয়েই চার বছরের শিশুটিকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সে থ্যালাসেমিয়া রোগী। কেবলমাত্র মাহমুদা বা ফরহাদ নন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ ব্যাগ নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের চাহিদা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে স্বেচ্ছায় রক্ত দেন তিন লাখ মানুষ। রক্ত কতটা প্রয়োজন তা চাহিদার সময়ই কেবল বোঝা যায়। এক ব্যাগ রক্তের জন্য ছোটাছুটি করতে হয় রোগীর আত্মীয়স্বজনকে। ক্লান্ত হয়ে ফিরতে হয় অনেক সময়। কিন্তু রোগীর শরীর তো মানে না, তার রক্ত চাই। রক্তের অভাবে একসময় সবার মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে যে পরিমাণ রক্তের চাহিদা, তা পূরণ হচ্ছে না। ফলে রক্তের ঘাটতির বিপুল এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর নিরাপদ রক্ত পাওয়া যায় সবমিলিয়ে তিন লাখের মতো। এরমধ্যে কোয়ান্টাম গড়ে প্রতি বছর সংগ্রহ করতে পারে এক লাখ ব্যাগ। আর রেড ক্রিসেন্ট ও সন্ধানী মিলে আরো দেড় লাখ ব্যাগ দিতে পারে। ৫০ থেকে ৫৫ হাজার রক্তের অভাবে মারা যান। বাকিরা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত সংগ্রহ করেন বলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকেই মারা যান, বেশির ভাগই রক্তক্ষরণজনিত কারণে। রক্ত সঠিক সময়ে সংগ্রহ করে পরিসঞ্চালন করা গেলে অনেক জীবনই বাঁচানো সম্ভব। এ প্রাণগুলো অকালে ঝরে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন আমাদের একটু সহানুভূতি, সচেতনতা। আমাদের এক ব্যাগ রক্তই পারে এদের জীবন বাঁচাতে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে রক্তদানের হার খুবই কম। তবে এসব দেশে আবার রক্তের চাহিদা বেশি। তাই এসব দেশে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সব সময় কম থাকে। রক্ত যেহেতু পরীক্ষাগারে তৈরি করা যায় না, তাই এর চাহিদা পূরণ হতে পারে কেবল রক্তদানের মাধ্যমে। এখন আমাদের দেশেও রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। এখনো রক্তের জন্য পেশাদার রক্তদাতার ওপর নির্ভর করতে হয়। যদিও দেশে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের দূষিত রক্তের ওপর নির্ভরতা আজ থেকে আট-দশ বছর আগেও ছিল ৭০ শতাংশের মতো। তবে জনসচেতনতা বাড়ায় এবং সরকারি নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির নানা আয়োজন ও উদ্যোগে রক্তের উৎসের এই সংস্থান বর্তমানে রোগীর আত্মীয়স্বজন (৮০ শতাংশ) স্বেচ্ছা রক্তদাতা এবং ১০ শতাংশ পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের রক্তে হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জনগোষ্ঠীর ২ শতাংশ লোক বছরে একবার রক্তদান করলে আমাদের দেশে রক্তের অভাব থাকবে না। তবে, ২০২০ সালে আমাদের দেশে চাহিদার শতভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১০৭ কোটি ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ স্বেচ্ছা রক্তদাতা আর ৫৯ শতাংশ আত্মীয় রক্তদাতা। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি ১০০০-এ ৪০ জন আর উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি ১০০০-এ ৪ জনেরও কম।
এ প্রসঙ্গে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রক্ত সংগ্রহ কর্মসূচির সমন্বয়ক শেখ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা রক্ত নিরাপদ কিনা তা বলা কঠিন। কারণ ওই জায়গায় যারা রক্ত বিক্রি করেন তারা মাদকাসক্ত। তাদের রক্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মাদাম নাহার আল বোখারী বলেন, আইন করে কখনো রক্তদান করানো যায় না। এ জন্য প্রয়োজন মানবিকতা, মানুষের জন্য ভালোবাসা। আর মানুষের পক্ষে রক্তদাতাদের প্রতিদান দেয়াও সম্ভব নয়। বেঁচে থাকার জন্য রক্তের প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেশাদার রক্তদাতার সমস্যা হলো এদের বেশির ভাগই মাদকসেবী। মাদকসেবীরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে নিয়মিত রক্ত বিক্রি করে থাকে। মাদকসেবীদের রক্ত গ্রহণ করা বিপজ্জনক। এদের রক্তে থাকে হেপাটাইটিস, এইডস, সিফিলিসের জীবাণু। এদের রক্ত দেয়ার পর রোগী প্রাণে বাঁচলেও পরে যে মারাত্মক রোগে ভোগেন, তা রোধের উপায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন।
বিগত ছয় মাসের মধ্যে আকুপাংচার/চর্মরোগ, রক্ত দেয়া হয়েছে এমন, তিন বছরের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এমন, এইডস অধ্যুষিত দেশে ভ্রমণ বা বসবাস করেন, গত দুই সপ্তাহে দাঁত ওঠানো বা মুখে সার্জারি, ক্যানসার জাতীয় অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের। সর্দি-জ্বর পুরোপুরি না সারা পর্যন্ত, এমএমআর, বিসিজি, পোলিও, কলেরা, টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত, হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দেয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত, খিঁচুনি তিন বছর বন্ধ না থাকা পর্যন্ত, অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ১৪ দিন পর্যন্ত, এসপিরিন সেবন বন্ধের পাঁচদিন পর্যন্ত রক্ত দেয়া যাবে না। তবে এরপর রক্ত দিলে সমস্যা নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, পেশাদার রক্ত বিক্রেতা, বাণিজ্যিক যৌনকর্মী, শিরায় মাদকাসক্ত ব্যক্তি, দূরগামী ট্রাকচালক/নাবিক, প্রবাসী/ভ্রমণকারী অবাধ যৌনাচারী, এইডস অধ্যুষিত দেশের অধিবাসী, অবাধ, অনৈতিক, অরক্ষিত যৌনাচারী ও বহুগামী ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ। স্বজনকে রক্ত দেয়ার সময় এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকেই মারা যান, বেশির ভাগই রক্তক্ষরণজনিত কারণে। রক্ত সঠিক সময়ে সংগ্রহ করে পরিসঞ্চালন করা গেলে অনেক জীবনই বাঁচানো সম্ভব। এ প্রাণগুলো অকালে ঝরে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন আমাদের একটু সহানুভূতি, সচেতনতা। আমাদের এক ব্যাগ রক্তই পারে এদের জীবন বাঁচাতে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে রক্তদানের হার খুবই কম। তবে এসব দেশে আবার রক্তের চাহিদা বেশি। তাই এসব দেশে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সব সময় কম থাকে। রক্ত যেহেতু পরীক্ষাগারে তৈরি করা যায় না, তাই এর চাহিদা পূরণ হতে পারে কেবল রক্তদানের মাধ্যমে। এখন আমাদের দেশেও রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। এখনো রক্তের জন্য পেশাদার রক্তদাতার ওপর নির্ভর করতে হয়। যদিও দেশে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের দূষিত রক্তের ওপর নির্ভরতা আজ থেকে আট-দশ বছর আগেও ছিল ৭০ শতাংশের মতো। তবে জনসচেতনতা বাড়ায় এবং সরকারি নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির নানা আয়োজন ও উদ্যোগে রক্তের উৎসের এই সংস্থান বর্তমানে রোগীর আত্মীয়স্বজন (৮০ শতাংশ) স্বেচ্ছা রক্তদাতা এবং ১০ শতাংশ পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের রক্তে হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জনগোষ্ঠীর ২ শতাংশ লোক বছরে একবার রক্তদান করলে আমাদের দেশে রক্তের অভাব থাকবে না। তবে, ২০২০ সালে আমাদের দেশে চাহিদার শতভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১০৭ কোটি ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ স্বেচ্ছা রক্তদাতা আর ৫৯ শতাংশ আত্মীয় রক্তদাতা। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি ১০০০-এ ৪০ জন আর উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি ১০০০-এ ৪ জনেরও কম।
এ প্রসঙ্গে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রক্ত সংগ্রহ কর্মসূচির সমন্বয়ক শেখ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা রক্ত নিরাপদ কিনা তা বলা কঠিন। কারণ ওই জায়গায় যারা রক্ত বিক্রি করেন তারা মাদকাসক্ত। তাদের রক্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মাদাম নাহার আল বোখারী বলেন, আইন করে কখনো রক্তদান করানো যায় না। এ জন্য প্রয়োজন মানবিকতা, মানুষের জন্য ভালোবাসা। আর মানুষের পক্ষে রক্তদাতাদের প্রতিদান দেয়াও সম্ভব নয়। বেঁচে থাকার জন্য রক্তের প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেশাদার রক্তদাতার সমস্যা হলো এদের বেশির ভাগই মাদকসেবী। মাদকসেবীরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে নিয়মিত রক্ত বিক্রি করে থাকে। মাদকসেবীদের রক্ত গ্রহণ করা বিপজ্জনক। এদের রক্তে থাকে হেপাটাইটিস, এইডস, সিফিলিসের জীবাণু। এদের রক্ত দেয়ার পর রোগী প্রাণে বাঁচলেও পরে যে মারাত্মক রোগে ভোগেন, তা রোধের উপায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন।
বিগত ছয় মাসের মধ্যে আকুপাংচার/চর্মরোগ, রক্ত দেয়া হয়েছে এমন, তিন বছরের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এমন, এইডস অধ্যুষিত দেশে ভ্রমণ বা বসবাস করেন, গত দুই সপ্তাহে দাঁত ওঠানো বা মুখে সার্জারি, ক্যানসার জাতীয় অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের। সর্দি-জ্বর পুরোপুরি না সারা পর্যন্ত, এমএমআর, বিসিজি, পোলিও, কলেরা, টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত, হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দেয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত, খিঁচুনি তিন বছর বন্ধ না থাকা পর্যন্ত, অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ১৪ দিন পর্যন্ত, এসপিরিন সেবন বন্ধের পাঁচদিন পর্যন্ত রক্ত দেয়া যাবে না। তবে এরপর রক্ত দিলে সমস্যা নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, পেশাদার রক্ত বিক্রেতা, বাণিজ্যিক যৌনকর্মী, শিরায় মাদকাসক্ত ব্যক্তি, দূরগামী ট্রাকচালক/নাবিক, প্রবাসী/ভ্রমণকারী অবাধ যৌনাচারী, এইডস অধ্যুষিত দেশের অধিবাসী, অবাধ, অনৈতিক, অরক্ষিত যৌনাচারী ও বহুগামী ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ। স্বজনকে রক্ত দেয়ার সময় এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।