বাংলারজমিন

ব্রহ্মপুত্র ডানতীর প্রকল্পে ধস

চোখের পলকেই বিলীন ১২ পরিবারের সাজানো সংসার

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

মিলছে না স্বস্তি থামছে না আতঙ্ক, কাটছে নির্ঘুমরাত। দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পে ধসের পর ধস। ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় শান্তির ঘুম আর জীবনে স্বস্তি পেয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে ধসে পর ধস দেখা দেয়ায় আবারো ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে চিলমারীবাসী। দিনটি ছিল শনিবার ঈদ-উল-ফিতরের দিন ভেবেছিল আনন্দে কাটবে সারাদিন কিন্তু ভোর হতে না হতেই উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াড়ী এলাকার ডানতীর রক্ষা প্রকল্পে হঠাতেই দেখা দেয় ধস আর মুহূর্তে ধসে যায় বেশকিছু এলাকা আর সেই সঙ্গে চোখের পলকে হারিয়ে যায় ১২টি পরিবারের ভিটামাটিসহ সাজানো গোছানো সংসার। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বাড়িঘর হারা সর্বস্বান্ত বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজন হয়ে পড়ে আতঙ্কগ্রস্ত। সেই আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই পানির স্রোতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় ধসসহ ভাঙনের থাবা। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে জনপদ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চিলমারীবাসী। এদিকে চলতি  মৌসুমে রক্ষা প্রকল্পে ধস দেখা দেয়ায় বর্ষা মৌসুম ও বন্যার সময়কাল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। নিয়ম না মেনেই ব্লক তৈরি অপরিকল্পিতভাবে পিচিং ও ব্লক ফেলানোর ফলেই বারবার প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় ধস দেখা দিচ্ছে কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শুধু তাই নয়, গত ১০ মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৫শ’ থেকে ৭শ’ মিটার এলাকার বাঁধ ও প্রকল্পে ধস সৃষ্টি হওয়াকে ঘিরে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। শনিবার বিকালে ধসে যাওয়া কাঁচকোল দক্ষিণ খামার মাঝিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা ভিটামাটিসহ সাজানো সংসার হারা মানুষের আহাজারি। এ সময় কথা হয় সদ্য ভিটামাটি, ঘনবাড়ি হারানো মাহফুজার, ছামসুন্নাহার, খোসাল চন্দ্র, চন্দন কুমার, রতন দাস, সুমা, গাদ্‌লু, কার্তিক, নিপুসা দাস, মন্তস, মেনেকা রাণীসহ অনেকের সঙ্গে তারা জানায় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করা আর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষরা নজর না রাখার কারণে আজ বারবার ধসে যাচ্ছে প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা। তারা আরো জানায় আমাদের সাজানো গোছানো ভিটামাটি বাড়িঘর সব তছনছ করে দিলো ব্রহ্মপুত্র আমরা এখন কই যামো কি করমো ভেবে পাচ্ছি না। সূত্রে জানা গেছে, ভাঙন থেকে চিলমারী উপজেলা রক্ষার জন্য ব্রহ্মপুত্র ডান তীর রক্ষা ফেস-২ নামে ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ কি.মি. বাঁধে ব্লক ফেলার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় চিলমারী রক্ষা প্রকল্প ডান তীর রক্ষা ফেস। ২০১৩ সালে টেন্ডার ৬ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৭৭ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালে তৃতীয় দফায় ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কি.মি. বাঁধে ব্লক ফেলার কাজ হাতে নেয় সরকার। ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙন ঠেকানোর জন্য সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৫ থেকে ৬ কি.মি. বাঁধের পরিধি বাড়িয়ে এই প্রকল্পের টাকা ধরা হয় ২৫৬ কোটি। উলিপুর উপজেলা হতে চিলমারী পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫০ মিটারে ব্লক, ব্লক ম্যাসিং, ডাম্পিং এবং জিওব্যাগ ডাম্পিং করার কাজ। এরমধ্যে অন্তপুর বাঁধে ১ কি.মি., কাঁচকল বাঁধে ৩ কি.মি. এবং চিলমারী বন্দরে ২ কি.মি. বাঁধ ধরা হয়। ২০১৬ সালে ৯টি প্যাকেজে ৯টি ঠিকাদারকে এই কাজ দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বিভিন্ন সাব-ঠিকাদার দিয়ে ব্লক তৈরি করেন। সাব টিকাদাররা সরকারের নিয়ম তোয়াক্কা না করে স্থানীয় বালু, নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করে ব্লক তৈরি করেন। এতে ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে যে শঙ্কা আর কাটছে না ধসে যাচ্ছে একের পর এক। রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কাঁচকোল দক্ষিণ ওয়াড়ী এলাকায় কয়েক দিনের ব্যবধানে বেশ কিছু এলাকা ইতি মধ্যে ধসে গেছে এবং এখনো আতঙ্ক আছে। এ ব্যাপারে পাউবি বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী কুড়িগ্রাম মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পানির তোড়ের কারণে এটা হয়েছে তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status