বাংলারজমিন

খ্রিস্টান মিশনে অনিয়ম-পর্ব ২

উপাসনালয় ২ ভাগে বিভক্ত

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৭:৫৯ পূর্বাহ্ন

মিশন হাসপাতাল দখল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মূল উপাসনালয় থেকে আলাদা হয়ে হাসপাতাল ভবনে আলাদা আরেকটি উপাসনালয় তৈরি করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এমন অভিযোগ তুলেছে সাধারণ খ্রিস্টান সম্প্রদায়। তারা দাবি করছেন, বর্তমান হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি নিজেদের স্বার্থে হাসপাতালকে মূল মিশন থেকে আলাদা করে হাসপাতালটিকে বাণিজ্যিক করবে। ইতিমধ্যেই তারা এমন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। হাসপাতালে সেবার পরিবর্তে তারা বাণিজ্যকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে মিশন লক্ষচ্যুত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে তারা ইতিমধ্যেই মূল উপাসনালয় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে আরেকটি উপাসনালয় তৈরি করেছেন। এতে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ আরো প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিষয়টির নিয়ে খোদ আমেরিকা অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দাতা এই দেশটি ইতিমধ্যেই মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ানের সঙ্গে চিঠি আদান প্রদান করেছে। বিষয়টি আদৌ কোনো সমাধানে আসবে কি না তা দেখতে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে সাধারণ খ্রিস্টানরা।
বগুড়ার বিলুপ্ত খ্রিস্টিয়ান এসোসিয়েশনের সাবেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- বর্তমানে খ্রিস্টান হাসপাতাল ও খ্রিস্টান মিশন নিয়ে যা কিছু হচ্ছে তা শুধু দু’পক্ষের ব্যক্তি স্বার্থের খেলা মাত্র। এক্ষেত্রে সাধারণ খ্রিস্টানদের বিষয়টি মুখে মুখে থাকলেও চ্যাপেল ও চার্চ নিয়ে সম্প্রদায়ের মাঝে বিভক্তির সমস্যার বিষয়টি সমাধানে কোনো পক্ষই এগিয়ে আসছেন না।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চার্চ থাকার পরেও একই এলাকায় চ্যাপেল নির্মাণ করে সমাজকে বিভক্ত করার অভিযোগ এনে আমেরিকার হোমবোর্ডে চিঠি প্রদান করেছেন বগুড়া চার্চ মণ্ডলীর সভাপতি রবার্ট রবিন মারান্ডি। তিনি বলেন- হাসপাতাল নিয়ে যে ঘটনা ঘটে চলেছে সেটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চার্চ ও চ্যাপেল নিয়ে সমাজে বিভাজন বিষয়ে কোনো কর্মসূচি তারা গ্রহণ করছেন না। হোমবোর্ডে পাঠানো চিঠিতে বগুড়া খ্রিস্ট মণ্ডলী উল্লেখ করেছেন, একই স্থানে চার্চ থাকা সত্ত্বেও চ্যাপেল নির্মাণ করে বগুড়া খ্রিস্ট মণ্ডলীকে ভাগ করা হয়েছে। এতে একই স্থানে দু’টি উপাসনালয় নির্মাণ হওয়ায় সাধারণ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তারা হোমবোর্ড আমেরিকাকে অনুরোধ করেন। এসব বিষয়ে খ্রিস্টান চার্চ অব গড মিশনের মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান বলেন, বগুড়া চার্চ মণ্ডলী কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে চার্চের নির্দিষ্ট জমি ছাড়াও অনেক বেশি জমি দাবি করে মিশনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে। পরে আদালত যাচাই-বাছাই করে তাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ওই তিন বছর এনজিও ব্যুরো অডিট করেছে। কিন্তু তারা কোনো অডিট আপত্তি প্রদান করেনি। মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে গিয়ে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রেজাউল

করিমকে পদ দেয়া হয়েছে। তার জানা মতে মেডিকেল বোর্ডে আদৌ ওই পদই নেই। আবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সংগঠনে অন্য ধর্মের মানুষের নেতৃত্ব দেয়ারও সুযোগ নেই। চিকিৎসকরা তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে চার্চেস অব গড মিশন থেকে হাসপাতালকে আলাদা করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তারা মনে করে চার্চেস গড অব মিশনের সঙ্গে হাসপাতালের কোনো সম্পর্ক নেই। চিকিৎসকরা যা চিন্তাভাবনা করছে তা কোনো দিনই সম্ভব নয়। কারণ চার্চেস গড অব মিশন আর্তমানবতার সেবার লক্ষ্য নিয়ে হাসপাতাল ও বিদ্যালয় চালু করে সাধারণ মানুষের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। আর হাসপাতাল হলো চার্চেস অব গড মিশনের সৃষ্টি একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। মিশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে চাকরি করে মিশনের কর্তৃত্বকে তারা অস্বীকার করছে। মেডিকেল বোর্ড গঠনের পর মিশনের মাঠ পরিচালক ছাড়াই বিভিন্ন সময় সভা করে তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চেষ্টা করায় মেডিকেল বোর্ডের বিরুদ্ধে আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের করেছে ফিল্ড কাউন্সিল। মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান আরো বলেন, মাঠ পরিচালকের পদ দখল করতে বিশেষ মহল একটি সাজানো নীল নকশার আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। তবে অ্যাডভোকেট তমাল মণ্ডলের স্ত্রী ডা. রিতা মণ্ডল মেডিকেল বোর্ডের সভাপতির পদ পাবার পর থেকে ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের আর দেখা মিলছে না। তবে, আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী জয়পুরহাটের খঞ্জনপুরের স্কুল শিক্ষক লুনা চক্রবর্তী বলেন, আন্দোলন থেমে যায়নি। আমরা সব সময় খ্রিস্টান সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ডা. রিতা মণ্ডলের আত্মীয় বগুড়া চার্চের বর্তমান সভাপতি রবার্ট রবিন মারান্ডি যিনি চার্চ ও চ্যাপেল নিয়ে সমাজকে বিভক্তির অভিযোগ এনে সম্প্রতি হোম বোর্ডে চিঠি প্রেরণ করেছেন। তার আগের মাঠ পরিচালকের সময়ে চার্চ ছাড়াও হাসপাতালে চ্যাপেল তৈরি করে সমাজকে বিভক্তি করা হলেও সে সময় তারা চার্চের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ উত্থাপন না করে রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করেছেন। এখন যেহেতু তার আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালকে মিশন থেকে আলাদা করার আন্দোলন শুরু করেছেন, সেই সুযোগে রবিন মারান্ডি চার্চ ও চ্যাপেল নিয়ে হোমবোর্ডে চিঠি লিখে তাদের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। এদিকে রিতা মণ্ডল পদ পাওয়ার আগে তিনি এবং তার স্বামী তমাল মণ্ডল বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়ে কথা বললেও রিতা মণ্ডলকে কৌশলে মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি করা হলে তিনি সব বিষয়েই চুপ হয়ে যান। এখন রিতা মণ্ডল এবং তার স্বামী তমাল মণ্ডল এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রকার কথা বলছেন না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রিতা মণ্ডল বলেন, এসব বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। তমাল মণ্ডলও একই কথা বলেন যে, এসব বিষয় নিয়ে তারা কথা বলার এখতিয়ার রাখেন না। তখন তাকে আবারো প্রশ্ন করা হলো, তাহলে কিছু দিন আগে শহরের সাতমাথায় মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কীভাবে কথা বলছিলেন? উত্তরে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলার সময় তার হাতে নেই। সাধারণ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে রিতা মণ্ডল এবং তার স্বামী তমাল মণ্ডলের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়েছে। এই সম্প্রদায় তাদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মিশনকে বাঁচাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status