প্রথম পাতা

রোনালদো ম্যাজিক

সামন হোসেন মস্কো (রাশিয়া) থেকে

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

ছন্দ ছিল, গতি ছিল, বল পজেশনেও পর্তুগালের চেয়ে এগিয়ে ছিল মরক্কো। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ৭৮ হাজার দর্শকের মধ্যে ৫০ হাজার দর্শকের সমর্থন পাচ্ছিল তারা। ইউনুস, হাকিম জিয়েস, করিমরা মিলে সুযোগও তৈরি করেছিলেন বেশ কয়েকটি। কিন্তু জিততে হলে তো একজন রোনালদোর প্রয়োজন। যা মরক্কোর ছিল না, ছিল পর্তুগালের। যার কল্যাণে স্পেনকে মাটিতে নামিয়ে এনেছিলো পর্তুগাল। গতকাল আফ্রিকার দেশ মরক্কোকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম জয় তুলে নেয় ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ‘বি’ গ্রুপে ইরানের কাছে হারের পর পর্তুগালের কাছে এমন হারে কার্যত বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল মরক্কোর। আগামী ২৫শে জুন কালিনিনিগ্রাদে স্পেনের সঙ্গে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে তারা। পর্তুগালের খেলা বাকি ইরানের বিপক্ষে।
সোচিতে প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে রোনালদো সূচনাটা করেছিলেন অসাধারণ। স্পেনের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকেই শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্র করেছিল পর্তুগাল। এদিনও লুঝনিকিতে সবার চোখ ছিল তার ওপরই। কারণ রোনালদো মাঠে যা চাইবেন, ম্যাচের ফল যেন ঠিক সে রকমই হবে। লিওনেল মেসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহু পুরনো, তবে গতকাল মেসির পূর্বসূরির এক রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন রোনালদো। ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র চার মিনিট। লুঝনিকির দর্শকরাও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। অনেকে তো সিট খোঁজায় ব্যস্ত। ঠিক তখনই জোয়াও মুতিনহোর ক্রসে সবাই যখন লাফাচ্ছেন, রোনালদো তখন দক্ষ শিকারির মতো নিচু হয়ে বল খুঁজে নিলেন। দারুণ এক হেডে এগিয়ে দিলেন দলকে। সে গোলেই ছুঁয়েছেন ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে। গতকালের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৬টি গোল করে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। গত ম্যাচে হ্যাটট্রিকের বদৌলতে অধিনায়ক হিসেবে রোনালদোর গোলের সংখ্যা ছিল ৫। গতকাল গোল করে ম্যারাডোনার রাজত্বে ভাগ বসিয়েছেন পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড। ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগও এসেছিলো এই রিয়াল তারকার সামনে। কিন্তু হয়ে উঠেনি। সুবিধামতো জায়গায় প্রথমার্ধে একটি ফ্রিকিকও পেয়েছিলো পর্তুগাল। রোনালদোর নেয়া সেই ফ্রিকিক মানব প্রাচীরে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে মরক্কোকে গোল বঞ্চিত করেন পর্তুগালের গোলরক্ষক রুই প্যাত্রিসিও। ইউনুস বেলহানদার শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারে রক্ষা করেন তিনি। পরের মিনিটে ইউনুসের নেয়া ফ্রিকিক তিনি রুখে দেন কর্নারের বিনিময়ে। মাঝে বেশকিছু সময় পর্তুগালের রক্ষণে জড় তুলেছে মরক্কো। যদিও পেপে, রাফায়েল, হোসে ফন্তে, কেডরিকদেও তৈরি পর্তুগালের রক্ষণে চিড় ধরাতে পারেনি মরক্কোর আক্রমণভাগ। ম্যাচের ৮০ মিনিটে উল্টো মরক্কোর বক্সের ঠিক উপরে ফ্রিকিক পায় পর্তুগাল। রোনালদোর নেয়া ফ্রিকিক প্রতিহত হলে ফিরতি বলে আবার শট নেয়ার চেষ্টা করেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’র জয়ী এই তারকা। তখনই তাকে ফেলে দেন এক মরক্কোর ডিফেন্ডার। পেনাল্টির আবেদন করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেনও রোনালদো। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে সমতায় ফেরার শেষ সুযোগটি নষ্ট করেন মরক্কোর অধিনায়ক মেধি বেনাতিয়া।
পর্তুগালের ফুটবলের ঐতিহ্যকে বলা হয় ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান্ডার’। যতজন তারকা জন্মেছেন, তারা এক একটা প্রজন্মে রাজত্ব করেছেন। পর্তুগাল যে ফুটবলটা ভালো খেলতে পারে, বিশ্বকে এটা প্রথম জানান কিংবদন্তি ইউসেবিও। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে সেই অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন কে ভুলবে? প্রথমার্ধে তিন গোলে পিছিয়ে থাকার পর, দ্বিতীয়ার্ধে ইউসেবিও একাই করেছিলেন চার গোল। এরপর একুশ শতকের শুরুর দিকে নজর কাড়লেন লুইস ফিগো। প্রতিভাবান ছিলেন। কিন্তু বার বার বিতর্ক জড়িয়েছেন। সেদিক থেকে একেবারে আলাদা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সন্দেহাতীত ভাবে, পর্তুগালে এত বড় তারকা কখনো জন্মাননি। সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও দেখা গেছে, রোনাল্ডোকে ইউসেবিওর থেকেও উপরে রেখেছেন পর্তুগালের মানুষ। হাজার হলেও, দেশের প্রথম এবং একমাত্র ট্রফি যে এসেছে রোনালদোর পায়েই! দেশে তার মূর্তি, বিমানবন্দর, মিউজিয়াম রয়েছে। এই বিশ্বকাপের পর হয়তো আরো অনেক কিছুই হবে। এখন পর্যন্ত চার গোল করে গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষে রোনালদো। তার নেতৃত্বে পর্তুগাল যেভাবে ছুটছে, তাতে দুই ম্যাচেই দেশটিকে রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপার দাবিদার ভাবতে শুরু করেছে অনেকে। চার গোল করে রোনালদো হয়ে উঠেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট পুরস্কারের বড় দাবিদার।
পর্তুগালের শুরুর একাদশ: রুই প্যাত্রিসিও (গোলরক্ষক), পেপে, রাফায়েল গুয়েরেইরো, হোসে ফন্তে, কেডরিক, জোয়াও মুতিনহো, হোয়াও মারিও, বার্নার্ডো সিলভা, উইলিয়াম কার্ভালহো, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (অধিনায়ক), গনক্যালো গুয়েদেস।
মরক্কো শুরুর একাদশ: মুনির এল কাজুই (গোলরক্ষক), আশরাফ হাকিমি, ম্যানুয়েল দ্য কস্তা, মেধি বেনাতিয়া (অধিনায়ক), নাবিল দিরার, হাকিম জিয়েচ, করিম এল আহমেদি, ইউনুস বেলহানদা, এমবার্গ বোসুফা, নরদিন আমরাবাত, খালিদ বোতাইব।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status