দেশ বিদেশ

গুলশানে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার ক্লু মেলেনি দেড় মাসেও

আল-আমিন

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

দেড় মাসেও গুলশানের বৃদ্ধা সাহেরা বানু মৃত্যুর রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সাহেরা বানুকে হত্যা নাকি নিজ ফ্ল্যাটে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন তা এখনো অস্পষ্ট। লাশ উদ্ধারের সময় তার মাথায় ভারি বস্তুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশের প্রথমে ধারণা ছিল বৃদ্ধাকে কে বা কারা হত্যা করেছে। ওই ঘটনায় পুলিশ বাড়ির সামনের ও চারপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছিল। কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কোনো ব্যক্তিকে ওই ফ্ল্যাটের দরজার সামনে  দেখা যায়নি। বাসার কেয়ারটেকারের কাছে খবর পেয়ে যখন পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে নক করেছিল তখন ফ্ল্যাটের মূল দরজা ভেতর থেকে লক করা ছিল। পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা ভেতর থেকে লক করা আবার বৃদ্ধার শরীরে গুরুতর আঘাতÑ এই দুইটি বিষয়ে অমিল পায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য সময় ধরে তদন্ত চলছে।
গুলশান-২ নম্বরের ৬২ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ির পশ্চিম তলার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ করতেন সাহেরা বানু (৬০)। গত ১১ই মে রাতে ফ্ল্যাটের লোকজনের কাছে তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মূল দরজার লক ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করেন। সূত্র জানায়, ওই ঘটনায় সাহেরা বানুর  বোন আয়েশা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৮। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই তাপস কুমার মানবজমিনকে জানান, মামলাটির এখনো রহস্য উদঘাটন হয়নি। ফ্ল্যাটের মধ্যে কেউ ছিল না। ভেতর থেকে লক মারা ছিল। তিনি জানান, বাসার চারপাশ থেকে সিসি ক্যামেরা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। এতে ওই বৃদ্ধা খুন হয়েছেন না বাসার মধ্যে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ মামলার আরো আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।   
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ফ্ল্যাটটি একজন শিল্পপতির। সেখানে কেউ থাকে না। পুরো পরিবার থাকে আমেরিকা ও লন্ডনে। নিহত গৃহকর্মী গত ৩৬ বছর ধরে ওই বাড়ির পশ্চিম তলার ফ্ল্যাটে কাজ করে আসছিলেন। তিনি ওই ফ্ল্যাটটিতে সারাদিন থাকতেন এবং রাতের বেলায় চলে যেতেন।  তার সঙ্গে কবির হোসেন ও সরোয়ার নামে আরো দুজন কাজ করেন। ঘটনার দিন দুপুরে সাহেরা ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন। সেদিন বিকালে অন্যরা ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ পান। ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া  মেলেনি। এরপর পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে মেঝেতে তাকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে  দেখেন।
সূত্র জানায়, মামলার ক্লু উদঘাটনের জন্য পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের কবির ও সারোয়ারকে আটক করেছিল। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দিয়েছে।  মামলার ক্লু উদঘাটনের জন্য বাড়ি ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু, কাউকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি। সাহেরা ওই ফ্ল্যাটে সকাল বেলায় ঢুকেছিলেন তা স্পষ্টভাবে ফুটেজে দেখা গেছে। এরপর কাউকে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি। এতে কেউ তাকে খুন করেছে কিনা তা স্পষ্ট ধারণা পায়নি পুলিশ। এছাড়াও বাসার মধ্যে থেকে কোনো স্বর্ণালঙ্কার বা টাকা খোঁয়া যায়নি। বিষয়টি ডাকাতি কিনা তাও স্পষ্ট ধারণা পায়নি।
গুলশান থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক জানান, ওই বৃদ্ধা খুন হয়েছেন না বাসার মধ্যে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন তা জানা যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য।  ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত আলামতগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ওই বৃদ্ধার শরীর একটু মোটা ছিল। সর্বশেষ আমাদের ধারণা হচ্ছে যে, বাসার মধ্যে পড়ে গিয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে মাথায় তার গুরুতর আঘাতের কারণে বিষয়টি নিশ্চিতও হওয়া যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য। সাহেরা বানুর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status