দেশ বিদেশ

প্রস্তাবিত বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে

সংসদ রিপোর্টার

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

প্রস্তাবিত বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি, উল্টো তাদের চাপে প্রণোদনা দিয়েছেন। পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্নখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও জনগণের ভাগ্যে পরিবর্তনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। গতকাল সংসদে ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এমপিরা। সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, সরকারি দলের কামাল আহমেদ মজুমদার, এম তাজুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন সরকার, একেএম ফজলুল হক, সামশুল হক চৌধুরী, সফুরা বেগম, বেগম ফিরোজা বেগম চিনু, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরী প্রমুখ। ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ প্রস্তাবিত বাজেটকে সমৃদ্ধির পথে জনকল্যাণমুখী বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এই বাজেট পেশের পরে দেশে কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি, দাম বাড়েনি, কঠোর সমালোচকরাও সুনির্দিষ্ট কোনো ত্রুটি বের করতে পারেনি। তিনি বলেন, দেশের চার মীরজাফরের কারণে বাংলাদেশ ঠিকভাবে বিকশিত হতে পারেনি। এই চার মীরজাফর হচ্ছে- মীর জাফর, খুনি মোশতাক, গোলাম আযম ও জিয়াউর রহমান। এরা যুগের পর যুগ ধরে জনগণ এদের ঘৃণা জানাবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তাঁর অসমাপ্ত বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, গত ১০ বছরে বাজেটের আকার বাড়লেও দেশের জনশক্তির কর্মসংস্থান বাড়েনি। এই বাজেট সকল মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছে কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন। প্রতি বছর দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। কারা অর্থ পাচার করছে তা খুঁজে বের করতে হবে। অর্থ পাচার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। বাজেট যদি কল্যাণমুখী হয়, তবে বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি চিরদিনের জন্য নিঃশেষ হয়ে যাবে। কারণ এই অপশক্তিরা লুটেরাদের কাছ থেকেই সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছে। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার যদি আগামী নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় না আসে তবে দেশ আবারও আফগানিস্তানে পরিণত হবে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জিয়া পরিবারের দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে বলেন, তারেক জিয়া ক্যাসিনো অর্থাৎ জুয়াই আয়ের উৎস দেখিয়েছে লন্ডনে। তাদেরকে এদেশ  নিয়ে আর জুয়া খেলার সুযোগ যেন না দেয় জনগণের কাছে সেই অনুরোধ জানাই। জিয়া পরিবারের বিদেশে পাচারকৃত বিপুল অর্থের উৎস  কোথায়? তারেক জিয়া যে মহাদুর্নীতিবাজ তা এই পাচারকৃত অর্থই বড় প্রমাণ। যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমানের সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও দুর্নীতির বরপুত্রকে আর আশ্রয় দেবেন না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই দণ্ডিত সন্ত্রাসীকে দেশে ফিরিয়ে দেন। আর খালেদা জিয়ার মতো দণ্ডিত আসামিকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে আসার বিএনপির শর্ত জুড়ে দেয়া হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। দেশের জনগণ খালেদা জিয়ার অগ্নিসন্ত্রাস, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোদিন ভুলবে না, কোনোদিন ভোটও দেবে না। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, জিয়া পরিবারের দুর্নীতির তথ্য আজ বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত। এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট বাংলাদেশে এসে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, বিএনপির আমলে যা হয়েছে তা হচ্ছে পরিকল্পিত দুর্নীতি। তারেক জিয়াকে আন্তর্জাতিক আদালত কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ হিসেবে রায় দিয়েছেন। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল বলেই বিএনপির আমলে কোনো বাজেট বাস্তবায়িত হয়নি। বিএনপির আমলে সাবমেরিন কনসোর্টিয়ামে ও স্যাটেলাইটে বিনামূল্যে স্লট দিতে চাইলেও তা নেয়নি। এখন অর্থ দিয়ে সেই স্লট নিতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে বাংলাদেশের ৩৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জনগণের উচিত বিএনপির কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া। বিএনপির এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরও বাংলাদেশ আফগানিস্তান, কঙ্গো, নাইজেরিয়া হয়নি, বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের সামনে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির রোল মডেল।
জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ মুনিম চৌধুরী প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি, উল্টো তাদের চাপে প্রণোদনা দিয়েছেন। পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচন  সামনে রেখে বিভিন্নখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও জনগণের ভাগ্যে পরিবর্তনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ব্যাংক সুদ নিয়ে সংসদে সমালোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য দুটি খাত রয়েছে। একটি মানি মার্কেট অন্যটি ক্যাপিটাল মার্কেট। কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ক্যাপিটাল মার্কেটের মাধ্যমে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই এই সেক্টরে নজর দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ সারা বিশ্বে মানি মার্কেট থেকে স্থানান্তরিত হয়ে সবাই ক্যাপিটাল মার্কেটে আসে। এই সেক্টরে যদি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয় তাহলে বিনিয়োগের অন্যতম উৎস হলো এই ক্ষেত্র। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগগুলো মানুষ করতে পারবে। কিন্তু এর জন্য সরকারকে এর সুরক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় পুঁজি হারানোর ভয়ে এই ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে, যা অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে নিরাপত্তা বন্ডের কথা আসছে। এখানে উচ্চ সুদ হারের কথা বলা হচ্ছে; এসব জায়গায় অর্থমন্ত্রীর নজর দেয়া দরকার। কারণ নিরাপত্তা বন্ড ও সঞ্চয়পত্রের সুদ হার যদি উচ্চ রাখেন তাহলে ব্যাংকিং সেক্টরকে বেশি মূল্যে ডিপোজিট দিতে হবে। এমনকি বেশি মূল্যে ডিপোজিট নিয়ে কম মূল্যে বিনিয়োগ করবে না। রাজধানীতে যানজট প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে প্রচণ্ড  যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ হচ্ছে। শহরের একটা দর্শন রয়েছে। এখানে কতটুকু রাস্তা, অবকাঠামো কতটুকু থাকবে তার একটা নীতিমালা রয়েছে। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হাউজিং কতটুকু হবে সেটারও একটা লক্ষ্যমাত্রা থাকা দরকার। তিনি বলেন, যতদূর জানি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি শহর নির্মাণের একমাত্র দর্শন ছিলেন। তার দর্শনে হাউজিংয়ে ৪০ শতাংশ যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানবাহন এবং খেলার মাঠের জন্য নির্ধারিত থাকার কথা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কতটুকু রাখা হয় তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ আপনি মাস্টার প্লান করবেন সেখানে কতজন মানুষ বসবাস করবে সেটাও চিন্তা করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল না হয়ে আঙ্কারা করা হয়েছে। আমাদের এখানেও এ বিষয় ভেবে দেখা দরকার। কারণ ঢাকা শহর প্রদর্শনীর জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া দরকার।




   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status