এক্সক্লুসিভ

খ্রিস্টান মিশনে অনিয়ম-পর্ব ১

হাসপাতাল দখলের পাঁয়তারা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

নানা অনিয়ম দুর্নীতি আর কোন্দলে ধ্বংসের পথে হাঁটছে বগুড়ার খ্রিস্টান মিশন। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমেরিকার সাহায্যে পরিচালিত এই মিশনটি ধ্বংস করার জন্য মিশনের কিছু কর্তাব্যক্তি জড়িত। তারা মূলত মিশনের প্রতিষ্ঠানগুলো ও অবকাঠামো নিজেদের মতো করে বাণিজ্য করার লক্ষে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে দাবি করছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আরেক পক্ষ।  
জানা যায়, যীশু খ্রিস্টের ধর্ম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্য নিয়ে ১৮৯৮ সালে এদেশের সবচেয়ে বড় চার্চেস অব গড মিশন বগুড়ায় যাত্রা শুরু করে। আমেরিকান জেনারেল কনফারেন্সের সিদ্ধান্তে হোম বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন বগুড়া শহরের সূত্রাপুরে ২০ একর জমির উপর চার্চেস অব গড মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপাসনার জন্য ১৯০৫ সালে এ মিশনের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয় উপাসনালয়। মিশনের কার্যক্রম শুধু ধর্ম প্রচার ও প্রসারের মাঝেই থেমে থাকেনি। স্বল্প খরচে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯০৫ সালে স্থাপন করা হয় খ্রিস্টান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা এ অঞ্চলের অনেককেই শিক্ষার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শিক্ষার পাশাপাশি স্বল্প খরচে অবহেলিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে এ মিশন চত্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয় খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল। আমেরিকান মিশনারি মি. ভায়ালো জি কোভার প্রথমে এ মিশনের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে একইসঙ্গে মিশনারি ও হাসপাতাল দু’টোরই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আরেক আমেরিকান এ অঞ্চলের আধুনিক চিকিৎসার রূপকার খ্যাত ডা. ইভা ফেডালিয়া গিলবার্ট। তার চিকিৎসা ও সেবার সুনাম বগুড়াসহ আশপাশের জেলায় বিস্তার লাভ করে। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে বগুড়া খ্রিস্টান মিশন হাসপাতালের নাম মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টান হাসপাতালের পরিচিতি পায় গিলবার্টের হাসপাতাল নামে। এ হাসপাতালের আয় থেকে খ্রিস্ট মণ্ডলীর সদস্যদের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ডা. গিলবার্ট এদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর আমেরিকার হোমবোর্ড এদেশের মিশন চালিয়ে নিতে ফিল্ড ডিরেক্টর পদ সৃষ্টি করে বাঙালি খ্রিস্টানদের ওপর এ বিশাল মিশনের দায়িত্ব অর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য মাঠ পরিচালকের পদসহ আট সদস্য বিশিষ্ট চার্চেস অব গড মিশন পরিষদ গঠন করা হয়। যারা এ বিশাল সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০০৪ সালে ডা. সজল দেওয়ান অবসর গ্রহণের পর মেডিকেল বোর্ডের পরিচালকের পদ গ্রহণ করেন ডা. এ্যান্থনি এ্যালবার্ট। এরপর থেকেই খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল চার্চেস অব গড মিশন থেকে আলাদা করে এর আয়ের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে কতিপয় চিকিৎসক। তাছাড়া হাসপাতালের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুরু হয় চিকিৎসার নামে বিভিন্ন অনিয়ম। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০ টাকার সাইনবোর্ড থাকলেও আদায় করা হয় ২শ’ টাকা। এ ছাড়াও হাসপাতালের নিয়ম উপেক্ষা করে চিকিৎসকরা প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালের চেম্বারে বসেই প্রাইভেট রোগী দেখা শুরু করেন। এতে ফিল্ড কাউন্সিল বাধা দিলে চিকিৎসকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং রোগী কম দেখে হাসপাতালের আয় কমিয়ে দেয়ারও হুমকি প্রদান করে তারা। এদিকে তাদের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠা করতে মাঠ পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জয়পুরহাটসহ বগুড়ার বিভিন্ন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা আন্দোলন শুরু করে দেয়া হয়। তবে, এ আন্দোলনে জয়পুরহাট মিশন স্কুলের শিক্ষক লুনা চক্রবর্তী নেতৃত্ব দিলেও কলকাঠি নাড়েন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। একদিকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ অন্যদিকে মেডিকেল বোর্ড গঠনের চাপ প্রয়োগ করা হয়। হাসপাতালে প্রাইভেট প্রাকটিস ও মেডিকেল বোর্ডে খ্রিস্টান চার্চ অব গড মিশনের নিয়ম ভঙ্গ করে ডেপুটি ডাইরেক্টরের পদ সৃষ্টি করে খ্রিস্টান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীকে ওই পদে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। এতে মাঠ পরিচালক বাধা দিলে স্থানীয় প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতার দ্বারা হুমকিও প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে তারা জোরপূর্বক একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে নেয়া হয়। ওই মেডিকেল  বোর্ডের সভাপতি ডা. রিতা মণ্ডল, পরিচালক ডা. সুপ্রতীক খাগ্রা, ডেপুটি ডাইরেক্টর ডা. মো. রেজাউল করিমসহ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
এদিকে হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম বিশেষ করে প্রাইভেট প্রাকটিস ছাড়াও মেডিকেল বোর্ড নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের অভিযোগে মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান মেডিকেল বোর্ডের বিরুদ্ধে জেলা বগুড়ার যুগ্মজজ আদালত-১ এ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা আনয়ন করেন। মামলায় বগুড়া খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি রেভা. জন আগস্টিন বিশ্বাস, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. রিতা মণ্ডল, সদস্য ডা. মো. রেজাউল করিম, পরিচালক ডা. সুপ্রতীক খাগ্রা, সদস্য মিসেস সলিতা আরেং ও আরেক সদস্য মিস্টার চন্দন চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়। মাঠ পরিচালক রেভা. উত্তম দেওয়ান বলেন, চার্চেস অব গড মিশনের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগত কোনো প্রকার ক্লিনিকে রোগী দেখতে পারবেন না। কিন্তু চিকিৎসকরা নীতিমালা ভঙ্গ করে বগুড়া খ্রিস্টান হাসপতালের ভেতর বসে ব্যক্তিগত রোগী দেখছেন। এতে হাসপাতালের রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেসব কার্যাবলী নীতিমালা অনুযায়ী চিকিৎসকদের আওতাভুক্ত নয় সেসব কার্যাবলী তারা সম্পাদনের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া মাঠ পরিচালককে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সভা পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে বগুড়া খ্রিস্টান হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. রিতা মণ্ডল এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status