দেশ বিদেশ

এটা একটা অশনিসংকেত

সংসদ রিপোর্টার

২০ জুন ২০১৮, বুধবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। নির্বাচনের পরিবেশকে মেঘাচ্ছন্ন করা হচ্ছে। গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের এমপিরা এসব কথা বলেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের এমপিরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই। আওয়ামী লীগের আদর্শেরও পরিপন্থি। প্রশাসনে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কে কত বড় আওয়ামী লীগ হবে তার একটা প্রতিযোগিতা চলছে, এটা একটা অশনিসংকেত। আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, একেএমএ আউয়াল সাইদুর রহমান এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম খোরশেদ আরা হক। মতিয়া চৌধুরী বলেন, টানা ১০ বারের বাজেট দেয়ার বিরল সম্মান পৃথিবীর খুব কম অর্থমন্ত্রীরই রয়েছে। সামনে নির্বাচন। তাই বাজেটে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। একটি সরকার শুরুর দিন থেকেই জনগণের আস্থা অর্জন করে জনগণের রায় নেয়। চারটি বছর কিছু না করে একটি বছর কাজ করে কোনো দলই জনগণের আস্থা অর্জনের রসদ যোগাতে পারে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ময়কর সাফল্যে সারা বিশ্ব নেতারা স্বীকার করছেন, উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর অনেক বড় দেশও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষুদ্র বাংলাদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে। সমৃদ্ধির পথযাত্রায় চলছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা কখনো মসৃণ পথে চলতে পারিনি। শত ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই শেখ হাসিনাও কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ান না। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা মানবিক কারণে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু এটি নিয়েও নানা উস্কানি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত প্রাণোচ্ছল উন্নয়নের দেশ জাতিকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা মাথা তুলতে না পেরে মাদকের ছোবলে যুব সমাজকে ধ্বংস করতে চায়। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়েও অনেকে আপত্তি জানাচ্ছে। দেশের ক্ষতি করার জন্যই এটা তারা করছে, এরা আসলে জ্ঞানপাপী। যুব সমাজকে এই মাদকাসক্তের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতেই হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই দেশ থেকে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। মাদক, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মাদক থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে না পারি যুব সমাজের সমূহ সর্বনাশ হবে। প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে যেভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছেন, ইনশাআল্লাহ মাদকের ছোবল থেকেও দেশকে রক্ষা করবেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। নির্বাচনের পরিবেশকে মেঘাচ্ছন্ন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার প্রিয়জনরাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ১১ বছর মামলা চলার পর রায়ে দণ্ডিত হয়ে সাজা ভোগ করছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা সরকারের কী করার আছে? সরকারের তো করার কিছু নেই, আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন। আর খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও নানা বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। নানা বায়না ধরছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের পথে চলে, অন্য কোনো বাঁকা পথে ক্ষমতায় আসেনি, আসার চিন্তাও নেই। তিনি সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে সুদ না কমানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। প্রস্তাবিত বাজেটকে ভেজাল মিশ্রিত দাবি করে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই। আওয়ামী লীগের আদর্শেরও পরিপন্থি। প্রশাসনে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।  কে কত বড় আওয়ামী লীগ হবে তার একটা প্রতিযোগিতা চলছে, এটা একটা অশনি সংকেত। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান আমলে ২২ ধনিক পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন ১২২ পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। যাদের হাতে দেশের ৮০ ভাগ সম্পদ। আর বাকি ২০ ভাগ সম্পদ অন্যদের হাতে। এই বৈষম্য কে বিলোপ করবে? বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বরং বৈষম্য বাড়াতে বাজেটে ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা ব্যাংক ডাকাতি করে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে, তাদেরকেই প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিরোধী দলীয় এই সদস্য বলেন, তিনি (আবুল মাল আবদুল মুহিত) ৫০ বছর বয়সে সামরিক সরকারের বাজেট দিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টি সরকারের বাজেট দেননি। জাতীয় পার্টির সরকারের কথা শুনলেই তিনি ক্ষেপে যান। কারণ তিনি সামরিক শাসনকে বেশি ভালোবাসেন। এরশাদ সরকারের আমলেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সাবেক বিমানমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল।
বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের সামনে অনন্য উচ্চতায় ওঠে গেছে। টানা ১০টি বাজেট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে দেয়া প্রতিটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবারের বাজেটে প্রতিটি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে জনগণ উপকৃত হবেন। বিএনপি-জামায়াতের অতীতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় আগামী দিনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণ নয়, বিএনপি এখন বিদেশে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব নেতারা কেউ-ই বিএনপির কথা শোনে না, কারণ তাঁরা জানেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার কীভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর আগামী নির্বাচন জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু কী নিয়ে সংলাপ? নির্বাচন নিয়ে কোনো  কথা থাকলে নির্বাচন কমিশনকে বলুক। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছর এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর মিলিয়ে এই সাত বছর পার্বত্য শান্তি চুক্তির কোনো ধারা তারা বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তির ৫২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারাই বাস্তবায়ন করেছে। চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মান ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। যা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে ভোট একটি বড় বিষয়। এই ভোট চলাফেরা করে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে। যে পথে আমরাও চলেছি। গ্রামের সকল মেঠোপথ যদি ভালো করে দিতে পারি তাহলে ভোট আমাদের দিকেই আসবে। দ্রুত এমপিওভুক্তির দুয়ার খোলার দাবি  ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। এ মামলা তো বর্তমান সরকার দেয়নি। দুর্নীতি করবেন, আদালতের রায়ে জেলে যাবেন, এতে সরকারের দোষ কোথায়? নির্বাচনমুখী বাজেটের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, এই সরকারের লক্ষ্য উন্নয়ন। আর উন্নয়ন হলে তো জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দিবে। ফলে নির্বাচনীমুখী বাজেটের সমালোচনার কোনো সুযোগই নেই বলে তিনি দাবি করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status