বাংলারজমিন

উলিপুরে লাইসেন্স, পরিবেশ সনদ ছাড়াই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হাট

আবু সাঈদ সরকার, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) থেকে

২০ জুন ২০১৮, বুধবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটে লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্রহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হাট বসেছে। দালাল চক্র হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও প্রতারণাসহ হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে গরিব রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেও সরকারের দেয়া চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের ৫০ গজের মধ্যে অনুমোদনহীন ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই সাতটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করে এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে হাঁতুরে টেকনিশিয়ান দিয়ে এক্স-রে ও ডিএমপি (স্যাকমো) চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা, আল্ট্রোসনোগ্রাম ও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার রির্পোট প্রদান করে রোগীদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করছে। এ সব ডায়াগনস্টিক সেন্ট্রারে এমটি ল্যাব, লক্কর-ঝক্কর অতি পুরাতন মেশিন, মহিলা এমটি’র সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ‘নন এমটি’ দিয়ে কাজ করা, মেয়াদোত্তীর্ণ রিয়াজেন্ট, কোথাও রিয়াজেন্ট নেই, রক্ষিত ফ্রিজে মাছ মাংস রাখা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ করে আসছে এবং রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ লুটিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম বোরহান উল ইসলাম সিদ্দিকী। তিনি গত ২৪এপ্রিল/১৮ইং তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে, গত ১৪ মে/১৮ কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জান্নাত ডায়গনস্টিক সেন্টারে চিঠি দিয়ে লাইন্সেস, পরিবেশ সনদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সনদ, কর্মকর্তা কর্মচারী তালিকা ও নিয়োগপত্র, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম পদবী কর্মস্থলের নামসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। অন্যথায় অত্র প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতেও বন্ধ হচ্ছে না দালাল দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীর সঙ্গে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড। ভুক্তভোগী গর্ভবতী রোগী সায়মা বেগম জানান, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেছি কিন্তু আমার পেটে কী বাচ্চা আছে তা আমাকে জানাতে পারেনি। অথচ অনেকগুলো টাকা নিয়েছে। এমন অভিযোগের অন্ত নেই। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেকে জানান, তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে জোর করে নিয়ে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের ফি নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেন, প্রতিবাদ করলে কিছু টাকা ফেরত দেন। গর্ভবতী মা’দের চিকিৎসা করা হচ্ছে এমন চিকিৎসক দিয়ে। ফলে এখানে রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে। লুটিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ। যেন দেখার কেউ নেই।  স্বাস্থ্য বিধি মোতাবেক সরকারি হাসপাতালের ২শ’ গজের বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকার নিয়ম থাকলেও এখানে হাসপাতালের গেটের সঙ্গে মার্ফি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ডিজিটাল ল্যাব, এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জান্নাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শাহীদা ল্যাব ও দেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জান্নাত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ওবায়দুল ইসলাম রানু জানান, লাইন্সেসসহ সব কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম বোরহান উল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু আমরা অসহায়। অনেক চেষ্টা করে ও দালালদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে পারছি না। ফলে গরিব রোগীরা সরকারের দেয়া চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে, জবাব পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status