প্রথম পাতা

খালেদার চিকিৎসা নিয়ে পাল্টাপাল্টি

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে পাল্টাপাল্টিতে জড়িয়ে পড়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। গত ৫ই জুন তিনি কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে যান বলে জানিয়েছিলেন তার চিকিৎসকরা। এখন সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ- চার মাসের বেশি কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে সরকার ‘দুরভিসন্ধিমূলক নীলনকশা’ করছে। চিকিৎসা নিয়ে  পানি ঘোলা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া।

এদিকে ঈদের দিন আবেদন করেও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। সেদিন তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের সময় দেখেছেন দু’জনের কাঁধে ভর করে কারাগারের ওয়েটিং রুমে আসেন খালেদা জিয়া। এ ঘটনায় ঈদের পর দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজনদের বরাত দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যেকোনো সময় প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন খালেদা জিয়া। তিনি নিজে হাঁটতে পারছেন না। আগে দেখা করতে গেলে তিনি নিজে হেঁটে এসে দেখা করতে পারতেন। খালেদা জিয়াকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রস্তাবের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগেই বলেছি, খালেদা জিয়া সিএমএইচে যাবেন না। আমাদের কাছে তার জীবনের মূল্য অনেক বেশি। ইউনাইটেড হাসাপাতালের প্রতিই খালেদা জিয়ার আস্থা রয়েছে। অন্য জায়গায় তার আস্থা নেই। তিনি অন্য কোথাও চিকিৎসা নেবেন না। মির্জা আলমগীর বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলা হচ্ছে পিজিতে পাঠানো হবে, সেখানে ভালো ভালো ডাক্তার আছে। আবার বলছেন সিএমএইচে পাঠানো হবে। সরকারের মনোভাব খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেয়া। কালবিলম্ব না করে যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি হতে চাইছেন, সেখানে তাকে ভর্তি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে যেভাবে নিঃসঙ্গ রাখা হয়েছে, এটা মানবাধিকারের বিপক্ষে, জেল কোডের বিপক্ষে। একজন বন্দীকে নির্জনভাবে রাখতে পারেন না। এটা বেআইনি। জেল কোডে কোথাও বলা নেই যে আমি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারব না।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে যদি স্কয়ারে নিতে পারেন, প্যারোলে বিদেশে পাঠাতে পারেন, নাসিম সাহেবকে যদি ল্যাবএইডে নিতে পারেন, জলিল সাহেবকে ল্যাবএইডে দিতে পারেন, তাহলে দেশনেত্রীকে ইউনাইটেডে দেবেন না কেন? কারণ কী? বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাগারে ৫ই জুন ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হয়েছিল খালেদা জিয়ার। তিনি বাম হাত ও বামপায়ে অর্থোপেক্সিক ব্যথায় ভুগছেন। বাম হাত ও বাম পা অনেকটা ফুলে গেছে এবং তিনি অন্যের সহায়তা ছাড়া হাঁটাচলা করতে পারছেন না। ঘাড়ের ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় বাম হাতের আঙুলগুলো সার্বক্ষণিক ব্যথা করছে। এ কারণে হাত দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। কোমরের ব্যথা ছড়িয়েছে বামপায়ের তালু পর্যন্ত। সর্বশেষ লন্ডন সফরে তার দুটি চোখের অপারেশন হয়েছিল। বর্তমানে কারাগারের ভেতরে ধুলোবালির কারণে চোখ লাল হয়ে গেছে।’ মির্জা আলমগীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা। এটাকে নরমাল এক্স-রে মেশিনে, নরমাল সিটি স্ক্যানে ও নরমাল এমআরআইতে হবে না। এ জন্য স্পেশাল এমআরআই, স্পেশাল সিটি স্ক্যান ও স্পেশাল হসপিটালাইজেশন প্রয়োজন। এই জিনিসগুলো দিতে কোনোভাবেই রাজি হচ্ছে না সরকার। কিন্তু খালেদা জিয়া বর্তমানে সরকারের কাস্টডিতে আছেন এবং বিনা চিকিৎসায় তার কিছু হলে দায় সরকারকে নিতে হবে।’

পরদিন ১৭ই জুন ভোলায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ নন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। যদি তিনি অসুস্থই হতেন তাহলে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হবেন না কেন? আসলে তাকে বিদেশ নেয়ার জন্য একটা পাঁয়তারা করা হচ্ছে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল বা সিএমএইচে যদি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো ব্যত্যয় ঘটতো, তাহলে অন্য হাসপাতালের প্রশ্ন উঠতো। কিন্তু তিনি নিজের পছন্দের হাসপাতালের কথা কেন বলছেন? কারণ সেখানে তার পছন্দের চিকিৎসক রয়েছে। তিনি তাকে বলে দেবেন বিদেশ ছাড়া তার কোনো চিকিৎসা হবে না। সুতরাং তাকে বিদেশ নেয়ার জন্য একটা পাঁয়তারা করা হচ্ছে।’

এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ সময় তার ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আপনি ও আপনার সঙ্গে যারা ছিলেন, সেই মাইনাস টু তত্ত্বের প্রচারকরা; আপনারা কি এখনো মাইনাস টুতে আছেন? নাকি মাইনাস ওয়ান-এ আছেন? এটা একটু খোলাশা করে জনগণকে জানাবেন কি?’ সোমবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, ‘কাল্পনিক বানানো গল্পের চ্যাম্পিয়ন আওয়ামী নেতারা।

ওদিকে গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সেতু ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সরকার আমাদের নেত্রীকে যদি সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) চিকিৎসার সুযোগ দিত তাহলে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন না। তিনি সিএমএইচেই চিকিৎসা নিতেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মাথাব্যথা নেই। তাদের মাথাব্যথা হলো ‘ইস্যু’ নিয়ে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তারা ইস্যু বের করার চেষ্টা করছেন। ঈদের পরে বিএনপি আন্দোলনের অজুহাত হিসেবে এটিকে কাজে লাগাতে চায়। তিনি বলেন, সিএমএইচ হলো সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতাল। সিএমএইচে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হয়। একজন সামরিক অফিসারের স্ত্রী হিসেবে তিনি কেন চিকিৎসা নেবেন না এটা আমার বুঝে আসে না।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনরা যখনই চাইছেন, তখনই দেখা করতে পারছেন। ওটা জেলখানা। কারো বাসভবন নয় যে, বিএনপি নেতারা যখন-তখন দেখা করতে পারবেন। জেলখানায় আত্মীয়স্বজনই মূল। আমি যখন জেলে ছিলাম, আমারও আত্মীয়স্বজন দেখা করতে এসেছেন। জেলখানায় দলীয় ব্যক্তিদের দেখা করার সুযোগ নেই। এরপরও তিনি একটি দলের প্রধান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সেই জন্য তাকে দলের লোকজন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে হয়। সেখানে কোনো প্রকার বাধা ছিল না।’ বিএনপি নেতাদের বিদেশ সফর সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। তাই তারা এখন বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন। কখনো ব্যাংকক, কখনো দুবাই, কখনো লন্ডন। কোথায় কে কী করছেন, সরকারের কাছে সব খবর আছে।’

অন্যদিকে সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দ্বিতীয় দিনের মতো খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও ইউনাইটেড হাসপাতাল নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি যখন যান না, তখন অনেকে মনে করেন তিনি অসুস্থ নন। কোনো অসুস্থ লোক হাসপাতাল পছন্দ নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে পারেন না।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status