বাংলাদেশ কর্নার
রাশিয়ান সুন্দরীদের ফাঁদ
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন
শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ ফুটবল যুদ্ধ। অকস্মাৎ ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব সবাই এক একজন রাশিয়া বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু পশ্চিমাদের মধ্যে, যারা রাশিয়াকে ভয় পান, তারা এক রকম অজানা আতঙ্কে। তাদের ভয় মাফিয়াদের ‘হানি ট্রাপ’ বা নারীর ফাঁদে ফেলে অনেক কিছু হাতিয়ে নেয়া। সেটা হতে পারে কোনো দেশের গোয়েন্দা তথ্য চুরি করা। প্রতিরক্ষা খাতের ডাটা হাতিয়ে নেয়া। হতে পারে গুপ্তচরবৃত্তি। সন্ত্রাসের যোগসূত্রও থাকতে পারে। সাবেক কেজিবি বস, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘ সময় তার দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি পশ্চিমা কোনো পরাশক্তিকে তোয়াজ করেন নি। এই বিশ্বকাপ কি তার কাছে নিতান্তই এক খেলা নাকি পশ্চিমাদের সঙ্গে ভিন্ন কৌশলের রাজনৈতিক লড়াই। তা নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন বিশ্লেষকরা। পশ্চিমা দেশগুলো আসলেই রাশিয়াকে নিয়ে এক রকম চাপা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বৃটিশ মিডিয়াগুলো সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে। বলছে, রাশিয়ার গ্যাংস্টাররা সুদর্শন রাশিয়ান যুবতীদের ব্যবহার করতে পারে। তারা এসব নারীকে ব্যবহার করে প্রভাবশালী খেলোয়াড় ও ভক্তদের ব্লাকমেইল করতে পারে। এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার (এএফআইএস) প্রধান মাইক মারান তো আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার আকর্ষণী নারী গোয়েন্দা এজেন্টরা এ লক্ষ্য অর্জনে তৎপর থাকবে। এর অর্থ এই নয় যে, তারা প্রতিজন ভক্ত বা খেলোয়াড়কে টার্গেট করবে। কোনো দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা যদি রাশিয়া যান এই আনন্দযজ্ঞে তবে তারাই হতে পারেন তাদের টার্গেট। রাশিয়া তার গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে যেটাকে প্রাধান্য দেয় তা হলো ‘কমপ্রোমাইজিং ইনফরমেশন’। সংক্ষেপে একে বলা হয়, কমপ্রোম্যাট। অর্থাৎ গোপন তথ্য বিনিময়। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হলো ব্লাকমেইল। তবে এবার পর্দার সামনে যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, পুতিন খুবই জলি মাইন্ডেড। তিনি কোনো কাদা লাগতে দেবেন না গায়ে। তাই নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি রাখতে চান না তিনি। বেসরকারি উদ্যোগে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক নিরাপত্তামূলক অপারেশন বা কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছেন পুতিন। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিশ্চিত করতে চাইছেন যে, জিহাদি জঙ্গিদের হামলার হুমকি থেকে মুক্ত রাশিয়া। তা ছাড়া কোনো দেশের ফুটবল ভক্তরা যদি সহিংস হয়ে ওঠে তাহলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমনকি রাশিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভও হয়েছে, বিশ্বকাপ চলাকালে এমন বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এমনটা হলে তাদেরকে সামাল দিতে হবে পুতিনকে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সময় অনেকটাই নষ্ট হতে পারে। এর ফলে অনেক পর্যবেক্ষণ দুর্ভোগে পড়তে পারেন। তাই বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বিরোধীদলীয় নেতাদের ফোন। এমন কি তাতে আড়ি পাতা হতে পারে। তবে এমনও হতে পারে তারা পুতিনকে একটি সুযোগ দিতে চান। বিশ্বকাপটা যেন নির্ঝঞ্ঝাটে শেষ হয় এমনটা নিশ্চিত করতে চান। তবে এসব কিছুর কোনটিই নিরেট সত্য, ইতিবাচক বা নেতিবাচক তা হলফ করে বলা যায় না। ফোন থেকে ল্যাপটপ সবকিছুই রাশিয়ানদের নজরে থাকবে। এক্ষেত্র সন্ত্রাসকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। রাশিয়ায় উগ্রপন্থি সন্ত্রাসের ঝুঁকিটা কম। তবে বিশ্বজুড়ে যেভাবে সন্ত্রাস থাবা মেলছে, বিশেষ করে ইন্টারনেটভিত্তিক ‘লোন উলফ’ বা একাকী হামলাকারী যেভাবে হামলা চালাচ্ছে সে বিষয়টি মাথা থেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। সব কিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হবে এমনটা আশা করেন সবাই। আর এই ভালোয় ভালোয় শেষ হলে তার মধ্য দিয়ে পুতিন অনেকখানি সফলতা দেখাতে পারবেন। তিনি এমনিতেই বিশ্ব দরবারে নিজেকে ‘গ্রেট পাওয়ার’ হিসেবে দেখানোর এক রকম আগ্রাসী ভূরাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ওপর বিশ্বকাপ আয়োজন তাকে এনে দিয়েছে এক অপার সম্ভাবনা। তিনি কারো ভয়ে ভীত নন। তবে রাশিয়ানরা মনে করেন পুতিন তাদের অনেকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন এবং রাশিয়াকে বিশ্বের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছেন। তারা প্রত্যাশা করেন, একদিন বৈশ্বিক সম্প্রদায়ে রাশিয়া হবে শান্তিপূর্ণ একটি দেশ।