বাংলারজমিন

মৌলভীবাজারে আকস্মিক বন্যা প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১৫ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর পানি কিছুটা কমলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে আর ভাঙন দেখা না দিলে মনুর ৪টি ও ধলাই নদীর ৪টি ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হচ্ছে। গতকাল মনুনদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভোলানগর ভাঙ্গন এলাকা থেকে দু’টি পরিবারকে ফায়ার ব্রিগেড ও পুলিশ মিলে উদ্ধার করেছে। কুলাউড়া, কমলগঞ্জ এবং রাজনগর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন ঈদের আগে এমন বিপদে পড়লেও বাড়ি ছাড়তে চাচ্ছেন না। বেশির ভাগ মানুষ কষ্ট করে নিজেদের ভিটে চৌকি বা মাঁচায় অবস্থান করছে। এদিকে জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে চাল ১১৫ টন এবং নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায় কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত এবং উপরের পানি নেমে আসার কারণে মঙ্গলবার গভীর রাতে মনু ও ধলাই নদীর প্রতরক্ষা বাঁধের কমপক্ষে ৮টি ভাঙন দেখা দেয়। এর মধ্যে মনুনদীর ৪টি ভাঙনের মধ্যে রয়েছে শরিফপুর ইউনিয়নের চাতলা, তেলিবিল ও বালিয়া এলাকায় এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর এলাকায়। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় মাতাবপুর, মাদানগর, চক রণচাপ, হাসিমপুর, বাড়ইগাঁও ও মন্দিরাসহ কয়েকটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গতকাল নদীর পানি কিছুটা কমলেও ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম জানান ইউনিয়নের প্রায় নব্বই ভাগ ঘর-বাড়িতে পানি। মানুষ বড় কষ্টে আছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেলেও মানুষ বাড়ি ছাড়তে চাচ্ছে না। তা ছাড়া সামনে ঈদ। গতকাল কামারচাক ইউনয়নের ভোলানগর ভাঙন এলাকার দুটি পরিবারকে পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেড মিলে উদ্ধার করেছে। ঝুঁকি থাকার পরও তারা বাড়ি ছাড়তে চায়নি। গতকাল সরকারি কর্মকর্তারাও বন্যাকবলিত কামারচাক ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন। গতকাল ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেমি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের ফলে কমলগঞ্জ পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের করিমপুর ও উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, কেওয়ালিঘাট, রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার মাধবপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ও আদমপুর ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের নয়টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেছেন বলা যায় এখন পুরো বাঁধই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান জোনাব আলী গতকাল (বৃহস্পতিবার) জানান মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙনের ফলে তার ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু বাগান এলাকার সামান্য এলাকা বাদে। তিনি জানান নদীর পানি কিছুটা কমলেও স্রোত কমেনি ভাঙন এলাকায়। ফলে স্রোত উপেক্ষা করে কেউ কারও সংবাদ নিতে পারছে না। মানুষ খুব কষ্টে আছে নিজ বাড়িতে যার যার মতো করে। কেউ আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় স্কুল মাদরাসা ভবনে। ইউপি চেয়াম্যান জোনাব আলী গতকাল দুঃখ করে বলেন বন্যাকবলিত তার ইউনিয়নের ভাঙন এলাকায় এতোই স্রোত যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) এলাকার নাগরিকরা কিভাবে আছে খবর পর্যন্ত নিতে পারেননি। এদিকে মনুনদীর চাঁদনিঘাট এলাকায় পানির চাপ বাড়ায় শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে চুইয়ে পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এদিকে শহরের সৈয়াপুর এলাকার নদীর পাড়ের কাছে বাসবাসকারী বেশ কিছু পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে আত্মীয়পরিজনের বাড়িতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status