শেষের পাতা

ভারি বর্ষণ হঠাৎ বন্যা

বাংলারজমিন ডেস্ক

১৪ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মনু ও ধলাই নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে মনুর চারটি স্থানে ও ধলাই নদের চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সঙ্গে কায়েক হাজার একর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়ে গেছে। অনেকের বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুসহ পরিবার পরিজন নিয়ে মনু ও ধলাই নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। নদীতে পানি বাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে। শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কের কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় এবং পানি থাকায় চাতলাপুর স্থলবন্দর ব্যবহারকারীরা পরেছেন বিপাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায় কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ের পানি নেমে আসার কারণে মনু ও ধলাই নদের কমপক্ষে ৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে মনু নদীর চারটি ভাঙনের মধ্যে রয়েছে শরিফপুর ইউনিয়নের চাতলা, তেলিবিল ও বালিয়া এলাকা এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নেরর ভোলানগর এলাকা। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে মাতাবপুর, মাদানগর, চক রণচাপ, হাসিমপুর, বাড়ইগাঁও ও মন্দিরাসহ কয়েকটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার সাধনপুর, কাউকাপন, বাশউরী ও নোয়াগাঁও এলাকায় বাঁধ চুইয়ে ও কোনো স্থানে উপচে পানি গ্রামে পড়ে কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধলাই নদের ভাঙনের ফলে কমলগঞ্জ পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের করিমপুর ও উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, কেওয়ালিঘাট, রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার মাধবপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ও আদমপুর ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের নয়টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। তা ছিল চাহিদার তুলনায় কম। ফলে সব বাঁধে কাজ করানো সম্ভব হয়নি। আবার কোনো এলাকায় কে কাজ করাবে এই বিরোধে কাজ করানো সম্ভব হয়নি। ফলে বৃষ্টি মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান জোনাব আলী গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে জানান, ভাঙনের কারণে ইউনিয়নের বাগান এলাকা ছাড়া বাকি শত ভাগ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাতলাব্রীজও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে। তবে বিকালের দিকে পানি আর বাড়েনি। তিনি জানিয়েছেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কের উপর প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় ৩/৪ ফুট পানি। কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে। চাতলাপুর স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই মো. জামাল হোসেন জানিয়েছেন পানির কারণে স্থলবন্দর ব্যবহারকারীরা দুদিকে আটকা পড়েছেন। রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর গ্রামের শাহজাহান মিয়া জানান, বুধবার মধ্যরাতে আকস্মিকভাবে তার ঘরের পাশের মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় তিনশত ফুট ভেঙে যায়। মুহূর্তেই শাহজাহানের তিনটি বসতভিটা পানির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ ভাঙনে কামারচাক ইউনিয়নের প্রায় ৭টি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই মনুর বাঁধে গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী করিমপুর ও মুন্সিবাজারের সুরানন্দনপুর এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে কমলগঞ্জ পৌর এলাকাসহ ১৩টি গ্রাম বন্যাকবলিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নদীতে আরো পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল মনু নদীর পানি মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও ধলাই নদের পানি ধলাই ব্রিজের কাছে ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে অতিবর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মুহুরী নদীর ফুলগাজী অংশে দুটি স্থানে বাধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. তাজুল ইসলাম জানান, অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির তোড়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর ও বরইয়া এলাকায় বাঁধের দুটি অংশ ভেঙে যায়। এতে ঘনিয়া মোড়া, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, উত্তর বরইয়া ও দক্ষিণ বরইয়াসহ অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বেড়িবাঁধের বেশি কয়েকটি স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলেও জানান। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কিসিঞ্জার চাকমা জানান, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে ভাঙনের খবর পেয়ে রাতে তিনি ভাঙনের একটি স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, বাঁধের যে অবস্থা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যহত থাকলে আরো কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার শংঙ্কা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম জানান, অতিবর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতে তা বেড়ে এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি না কমলে ভাঙনকৃত বেড়িবাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। তবে যে যে স্থানে বাঁধ নতুন করে ভেঙে যাওয়া শঙ্কায় রয়েছে সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণে খাগড়াছড়িজেলা শহরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। রামগড় ও দীঘিনালা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সহস্রাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। খরস্রোতা ফেনী ও মাইনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি শহরের দুই-তৃতীয়াংশ, রামগড় ও মহালছড়ির বিস্তৃত অঞ্চল এবং দীঘিনালার মেরুং বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে কয়েকশ পুকুরের মাছ। রেড ক্রিসেন্ট ও যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জেখোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ। মঙ্গলবার বিকালথেকে নদীতে পানি বাড়তে থাকে। রাত ১১টা থেকে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানকার পানি নেমে খোয়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status